মুখাগ্নি সেরেই বন্দে ভারতের উদ্বোধন! কেন বাংলায় ৭,৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করল কেন্দ্র?

Narendra Modi Vande Bharat Express: কলকাতায় আসতে পারেননি, তবে মায়ের মুখাগ্নি সেরে আহমেদাবাদ থেকেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পতাকা নাড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

বাংলায় বিনিয়োগ। সেই কোন কালে 'পূর্বে তাকাও' কর্মসূচি নিয়েছিল শাসকেরা, ব্রিটিশ হোক বা বিজেপি- বাংলা চিরকালই সম্ভাবনার ভাঁড়ার। আর ফেলো কড়ি মাখো ভোটের সমীকরণ বলছে, এই সূত্র কোনও দিনই সেভাবে ব্যর্থ হয়নি। তাই উন্নয়নে টাকা ঢেলে মন জয়ের প্রাচীন অথচ শাশ্বত রীতি মেনেই এগোচ্ছে কেন্দ্র। মা প্রয়াত হয়েছেন, ফলে কলকাতায় সশরীরে হাজির হতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে ৭,৮০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা তিনি শুরু করে দিয়েছেন। অর্থাৎ বাংলায় ৭.৮০০ কোটি বিনিয়োগ করছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকার। ৭,৮০০ কোটি, একই দিনে! কী কী উন্নয়নের মুখ দেখতে চলেছে বাংলা?

হাওড়া এবং নিউ জলপাইগুড়িকে সংযোগকারী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা তিনি করে দিয়েছেন। কলকাতায় আসতে পারেননি, তবে মায়ের মুখাগ্নি সেরে আহমেদাবাদ থেকেই পতাকা নাড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ির মাঝে নতুন এই ট্রেনটি বোলপুর-শান্তিনিকেতন, মালদা টাউন, বারসই স্টেশনে দাঁড়াবে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিনই চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এছাড়াও কলকাতা মেট্রোর জোকা-তারাতলা সম্প্রসারিত অংশের সূচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ও জোকা-তারাতলা মেট্রোর পাশাপাশি রেলের চারটি প্রকল্প চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঁচি-শক্তিগড় তৃতীয় লাইন তৈরি করতে ৪০৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ডানকুনি-চন্দনপুর চতুর্থ লাইন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৬৫ কোটি টাকা। নিমতিতা-নিউ ফরাক্কা ডবল লাইন তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৫৪ কোটি টাকা এবং আমবাড়ি ফালাকাটা-নিউ ময়নাগুড়ি-গুমানিহাট ডাবলিং প্রকল্পের জন্য খরচা হয়েছে ১,০৮০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও হওয়ার কথা, যার জন্য খরচ করা হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকারও বেশি।

আরও পড়ুন- স্কুলে যাননি কোনওদিন, তবু চিকিৎসা করতেন! মোদির প্রয়াত মা হীরাবেনের যে জীবন অজানাই

বেহালা মেট্রো নিয়ে যাবতীয় খিল্লি-ঠাট্টার অবসান ঘটেছে নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মেট্রোর মুখ দেখলেন বেহালার বাসিন্দারা। জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো প্রকল্পের (পার্পল লাইন) জোকা-তারাতলা অংশের মেট্রোকে সবুজ পতাকা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই প্রায় ৬.৫ কিলোমিটারের অংশে মোট ছয়টি স্টেশন পড়ছে- জোকা, ঠাকুরপুকুর, সখেরবাজার, বেহালা চৌরাস্তা, বেহালা বাজার এবং তারাতলা। এই সার্বিক প্রকল্পের খরচ পড়েছে ২,৪৭৫ কোটি টাকা। এই নয়া মেট্রো প্রকল্পের জেরে সরশুনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের সুবিধা হবে বেশ অনেকটাই।

জোকায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন তৈরি করা হয়েছে। গোটা দেশের জলসম্পদকে পরিচ্ছন্ন রাখা, নিকাশির সুব্যবস্থা করার মতো কাজ এই কার্যালয় থেকেই করা হবে। অর্থাৎ সর্বভারতীয় কাজটাই পরিচালিত হবে কলকাতায় বসে। ২,৫৫০ কোটিরও বেশি মূল্যের একাধিক পয়ঃনিষ্কাশন পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধনের কথাও জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন- মোদি নন, বাজপেয়ীই প্রকৃত বিজেপি! অটল বিহারীর স্মৃতিসৌধে গিয়ে কোন বার্তা দিলেন রাহুল?

গঙ্গা নদী ও তার শাখা নদীগুলিকে দুষণমুক্ত করার জন্য এবং নদীগুলি পুনরুজ্জীবনের বিষয়েও উদ্যোগী হয়েছে ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিল। গঙ্গাকে দুষণমুক্ত করতে একাধিক কেন্দ্রীয় নিকাশি প্রকল্পের সূচনার কথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সাতটি নিকাশি প্রকল্পের সূচনা করবেন মোদি। ৯৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২০টি নিকাশি প্রকল্পেরও সূচনা করা হবে। এই প্রকল্পগুলি নবদ্বীপ, বজবজ, কাঁচরাপাড়া, উত্তরপাড়া-কোতরং, হালিশহর ব্যারাকপুর সহ একাধিক পুরসভাতে কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে।

২০২৩-এর গোড়ার দিকেই পঞ্চায়েত নির্বাচন পশ্চিমবাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে নিঃসন্দেহে, আর ঠিক তার পরের বছরই লোকসভা নির্বাচন। ২০২২-এর শেষ দিক থেকেই তাই বাংলার জল-হাওয়া বুঝতে এক ফোঁটা জমিও ছাড়ছে না বিজেপি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, শুক্রবার হিরাবেন মোদির মৃত্যু না হলে বাংলায় এসে এই সব ক'টি প্রকল্পের উদ্বোধন করতেন মোদি, আর তাতে স্বচক্ষে বুঝতে পারতেন রাজনৈতিক হাওয়া মোরগের অবস্থা। তিনি আসতে পারেননি বলে এই এত টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বেশ খানিকটা প্রচারের আলো হারিয়েছে ঠিক কথাই, তবে তা বিফলে যেতে দেবে না শাসকদল। 'ড্যামেজ কন্ট্রোলের' শুরুটা হবে নতুন বছরের গোড়া থেকেই। উল্লেখ্য, বন্দে ভারতের মতো ট্রেন, এবং বেহালা মেট্রোর মতো বিষয় কলকাতা আর রাজ্য দুই ক্ষেত্রেই শহুরে উন্নয়নের ধারণার সঙ্গে খাপের খাপ মিলে যায়। তাই, ২০২২-এর শেষটা বিজেপির অনুকূলে, বলাই যায়। ২০২৪-অবধি বাংলায় বিনিয়োগের বহর কতটা বাড়ে, আর তাতে বঙ্গবাসীর ভোটের পাত্র ছলকে পড়ে কী না এই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়ই। 

More Articles