পেট্রোল-ডিজেল আগুন! বছরভর সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি কেন আটকাল না সরকার?

Petrol Diesel Price Hike: বর্তমানে পেট্রোলের ওপর মোট ট্যাক্সের ৬৩% যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে এবং ৩৭% যায় রাজ্য সরকারের ঘরে।

ভারতবর্ষে অনেকেরই পেট্রোলের হু হু করে দাম বাড়া নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই। না না, তারা প্রত্যেকেই আম্বানির আত্মীয় বা ভীষণ বড়লোক নন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আমার আর আপনার মতো সাধারণ মানুষ। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। মাথা ব্যথা নেই কারণ তারা ভাবেন, "আমি তো বাইক বা চারচাকা চালাই না, আমার কী? পেট্রোলের দাম বাড়ুক বা কমুক, আমার তো কোনও ক্ষতি নেই। বড় বেশি হলে কী হবে? বাসের ভাড়া বাড়বে দু-টাকা, এই তো!" আসলে ব্যাপারটা মোটেও অত সহজ নয়। পেট্রোল এমন এক পণ্য যারা দাম বাড়া বা কমায় অনুরণন হয় মাটির বাড়ি থেকে পাকা বাড়ি অবধি। অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই। কীভাবে?

দেশে পেট্রোল ডিজেলের দাম সর্বোচ্চ রেকর্ডের মাত্রা ছাড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যজুড়ে পেট্রোলের দাম ছাড়িয়েছে ১০০-এর গণ্ডি, আর ডিজেল ৯০- এর। এখনও অবধি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও বেশ খানিকটা মূল্যবৃদ্ধি হবে পেট্রোল এবং ডিজেলের। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছিলেন, প্যান্ডেমিকের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবহে পেট্রোল ডিজেলের দামের এহেন ধাক্কা ভারতের অর্থনীতির কোমর ভেঙে ফেলতে যথেষ্ট। কারণ -

■ সাধারণ মানুষের উপার্জন কম, খরচা বেশি :

পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম যত বাড়ে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম। সবজি, কাঁচামাল, মাছ মাংস, নুন, তেল মশলাপাতি সবকিছুরই দাম বাড়ে। কারণ এই সমস্ত কিছুই স্থানীয় বাজারে এসে পৌঁছায় পরিবহনের মাধ্যমেই। ফলত যে মাছ অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে স্থানীয় বাজারে এসে পৌঁছয়, সেই মাছের দাম বেড়ে যায় স্বাভাবিক ভাবেই। বাড়ে শিক্ষার দাম, বাড়ে চিকিৎসার দাম, বাড়ে ডেলিভারির দাম। কিন্তু এই বেড়ে যাওয়া খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের উপার্জন বাড়ে না।

যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তারা সরাসরি বুঝতে পারেন পেট্রোল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির অনুকম্পন। কিন্তু যারা বাইক বা গাড়ি চালান না তারাও বোঝেন এই ধাক্কা, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে। মনে হতে পারে, পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধি শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামই বাড়ায়। না এমনটা নয়। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির ফলে এই প্যান্ডামিকের বাজারে বেড়ে যায় ওষুধের দাম, অ্যম্বুলেন্সের ভাড়াও।

■ পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী?

সাম্প্রতিক দেশ জুড়ে যে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি, তার প্রধান কারণ মে মাসে হওয়া দেশের অ্যাসেম্বলি ইলেকশন। আমাদের দেশে যে কোনও ভোটের আগে পেট্রোলের স্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বাধা প্রয়োগ তো করা হয়ই উল্টে দাম কমাতেও বাধ্য করা হয় বিভিন্ন অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিগুলোকে। ফলস্বরূপ ভোটের পর তারা তাদের ক্ষতি উসুল করতে দাম বাড়াতে থাকে।

এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোল এবং ডিজেলের দামের মূল্যবৃদ্ধিও অন্যতম কারণ। বিগত কয়েক মাসে, কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দামের উঁচু নিচু হয়েছে বেশ কয়েকবার।

কিন্তু আমাদের দেশে পেট্রোল মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ এগুলো নয়। প্রধান কারণের দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের পেট্রোপণ্যের উপর চাপানো উচ্চ করের পরিমাণই এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণ। বর্তমানে পেট্রোলের ওপর মোট ট্যাক্সের ৬৩% যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে এবং ৩৭% যায় রাজ্য সরকারের ঘরে। অর্থাৎ পেট্রোলের দাম যদি ৯৯.৮৪ পয়সা প্রতি লিটার হয় তবে তার মধ্যে ৩২.৯০টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কামাই আর ১৯.২৭ টাকা রাজ্য সরকারের। অর্থাৎ ৫২.১৭ টাকা আমরা শুধু কর দিচ্ছি ৯৯.৮৪ টাকার পেট্রোলে।

গোটা দেশজুড়ে বহু প্রতিবাদ মিছিল মিটিং করার পরেও কোনও সরকারই পেট্রোপণ্যের দাম কমাতে রাজি নয় এই প্যান্ডেমিকের বাজারে। ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে। ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে ভারতের অর্থনীতি।

■ উপায় কী?

  • পেট্রোপণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর কমাতে হবে।
  • পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-এর আওতায় আনতে হবে। যাতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে আলাদা আলাদা কর না দিতে হয়।
  • ইলেক্ট্রিক পরিবহন ব্যবস্থা, সাইকেল এর ব্যবহার বাড়াতে হবে স্থানীয় প্রয়োজন মেটাতে। রেল, মেট্রো, ট্রাম চালু করতে হবে আবার পুরোদমে (অবশ্যই কোরোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে)।

 

সূত্র :

https://www.indiatoday.in/business/story/fuel-prices-at-record-high-how-it-affects-your-finances-1806874-2021-05-25

 

More Articles