ফের পাশ নির্বাচন পিছনোর প্রস্তাব, আদৌ হবে পাকিস্তানে ২০২৪ ভোট?

Pakistan Elections 2024: দেশের নগদ অর্থের সঙ্কটও বাড়ছে ক্রমশ। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোনও মতেই রাশ টানতে পারছে না সে দেশের সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের একটা কোনও গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছে অভিজ্ঞমহল।

দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে। মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে। মাত্র একটা ডিম সেখানে বিকোচ্ছে ৩৩ টাকায়। ১ কেজি পিঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা। তার উপর পাকিস্তানের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়েও নতুন করে কিছু বলার নেই। সেনাশাসনই যেন সে দেশের ভবিতব্য, একবার নয়, বারংবার এ কথা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে সামনের মাসে ভোট হওয়ার কথা। তবে মানুষের সেই গণতান্ত্রিক অধিকারের পথে ফের কাঁটা পাকিস্তানে। সে দেশের রাজনৈতিক ময়দানে যে অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে, তার মধ্য়ে আদৌ ভোট হবে কিনা, সে নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

আরও একবার একই রকম পরিস্থিতির সামনে পাকিস্তান। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে। সেই অগস্ট মাস থেকেই। দুর্নীতি, রাষ্ট্রের গোপনীয় কথা ফাঁস-সহ একাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন ইমরান। এর মধ্যে আবার দেশে ফিরে এসেছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিছুদিন আগে যাঁর অবস্থাও ছিল অনেকটা তেমনই। দুর্নীতির দায়ে জেল খাটার পর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জেল থেকে বাইরে আসার সুযোগ পান। তার পরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান নওয়াজ শরিফ। এর মধ্যেই পাকিস্তানের রাজনীতির নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। গত বছরের শেষে স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেছেন নওয়াজ। আর ততদিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান আবার জেলে। ইরফানকে গদিচ্যুত করে পাকিস্তানের অন্তর্বতীকালীন দায়িত্ব নিয়েছিলেন পিএমএল-এন পার্টির তরফে নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরীফ। এ যেন অনেকটাই রামের পাদুকাখানি সিংহাসনে রেখে দেশ চালানো। অচিরেই দেশে ফেরেন নওয়াজ। যার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ। এবার ফের কি পাকিস্তানের ক্ষমতা ফিরতে চলেছে নওয়াজের হাতে?

আরও পড়ুন: পাকিস্তান মানেই দুর্নীতি! ইমরান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে

তবে সেই ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য তো প্রয়োজন ভোট। যা হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে ফেব্রুয়ারি মাসেই। এদিকে সাধারণ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য একের পর এক প্রস্তাব পাশ করা হচ্ছে পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেনেটে। এই নিয়ে তৃতীয়বার ভোট বিলম্বিত করার জন্য প্রস্তাব পাশ করা হল সেনেটে। আপাতত শীতকালীন ঠান্ডা ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী হামলাকেই কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ভোট পিছোতে চাওয়ার কারণ হিসাবে। এর আগে সেনেটে এবং ওঠা ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল শাসকজোটের শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তানের তদারকি সরকারের তথ্যমন্ত্রী মুর্তাজা সোলাঙ্গি

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। কেন বাববার সেই ভোট পিছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য এতে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনতে ভোট করানোর প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও যে কোনও ভাবে ভোট বিলম্ব করার চেষ্টা চলছে দেশে। ভোট বিলম্বের প্রথম প্রস্তাবটি পাস হয় গত ৫ জানুয়রি। দ্বিতীয় সপ্তাহে পাস হয় আরও একটি প্রস্তাব। এরপর আরও একটি। নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে এমন একটি তারিখ নির্বাচনের জন্য বেছে নেওয়া হোক, যাতে মত থাকবে সমস্ত পক্ষের।

এদিকে রাজ্যের বহু নেতা, মন্ত্রীরই মত নেই এই ভোট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে। প্রতিবারই কম সেনেট সদস্যদের উপস্থিতির সুযোগ নিয়েই পাস করা হচ্ছে এই প্রস্তাব। এদিকে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম সংকটে। গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। বিশ্ব-রাজনীতির মঞ্চেও কোণঠাসা তারা। দেশের নগদ অর্থের সঙ্কটও বাড়ছে ক্রমশ। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোনও মতেই রাশ টানতে পারছে না সে দেশের সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের একটা কোনও গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছে অভিজ্ঞমহল। আর গণঅভ্যত্থান হওয়ার অর্থই দেশে ফের সেনাশাসন জারি হওয়া। পাকিস্তানের বেশিরভাগ সময়টা অবশ্য কাটে সেই পরিস্থিতিতেই।

৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সেই অর্থে এক মাসও নেই ভোটের। তবে সেই চূড়ান্ত মুহূর্তেও আদৌ ভোট হবে কি না সেই নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ভোট হলেও আবার সেখানে কারচুপির প্রবল সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর অনেক নেতাই দল ছেড়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই গা ঢাকাও দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার যোগ দিয়েছেন অন্য দলে। জেলে থাকার কারণে এই ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি ইমরান। এমনকী দলের চেয়ারম্যান পদ থেকেও সরে আসেন তিনি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব থেকেই অশান্তি বেঁধেছে। মনোনয়নপত্র ছিনতাই থেকে পিটিআই প্রার্থীদের চাপ দিয়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য পর্যন্ত করার অভিযোগ উঠেছে হয়।

আরও পড়ুন:আদালতে পা দিতেই চড়াও পাক রেঞ্জার্স বাহিনী! কেন গ্রেফতার করা হল ইমরান খানকে?

ইমরান লড়াইয়ে নেই। তবে পিছিয়ে নেই তাঁর দলের অনেক নেতাই। পিটিআইয়ের ব্যাট-বল প্রতীক নিষিদ্ধ হওয়ার পরে অনেক নেতাই স্বতন্ত্র ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন ভোটে। এই পরিস্থিতিতে ভোট হলে নওয়াজের দিকে পাল্লা কি একটু ঝুঁকে? অনেকেই বলছেন, নওয়াজ শরিফের উপরেই নাকি বাজি ধরেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তার উপর থেকে সমস্ত অভিযোগও তুলে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন নওয়াজ।  তবে আদৌ কি সেই ভোট হতে চলেছে পাকিস্তানে? যদিও নির্বাচন কমিশনের তরফে বারবার আবেদন করা হয়েছে, যাতে ভোটে আর বিলম্ব না করা হয়। এমনিতেই পাকিস্তানের মানুষের পক্ষে নিজের দেশে বেঁচে থাকাটাই একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে,  অর্থনীতির অবস্থা সেখানে এতটাই শোচনীয়। এই পরিস্থিতিতে ৮ তারিখ ভোটের উপর বোধহয় নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যতের অনেকটাই।

 

More Articles