লাখো গ্রাহকের ভরসা! এবার স্টেট ব্যাঙ্ককেও বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায় কেন্দ্র?
SBI Privatization : অর্থমন্ত্রী নির্মলা বলছেন, PSU-এর মূল্যায়ন বৃদ্ধির জন্য আবশ্যিক সমস্ত পদক্ষেপ করতে বরাবরই প্রস্তুত ছিল সরকার।
বাজেটে পেশের ঠিক একদিন পরেই ২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন থেকেই। রেল, এলআইসি সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ছিলই। এবার কি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ারও বেসরকারিকরণ হতে চলেছে? নির্মলা বলছেন, সরকার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) সহ ব্লু-চিপ পিএসইউগুলিতে ইক্যুইটি শেয়ার বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। সরকার এই প্রধান স্ট্র্যাটেজিক পাবলিক সেক্টর কোম্পানিতে তুলনামূলক কম অংশীদারিত্ব (৫০ শতাংশের কম) রাখার বিরুদ্ধে নয়।
এসবিআই এবং ওএনজিসি সহ PSU-তে ৪৯ শতাংশ বা তার কম অংশীদারিত্ব রাখতে হলে, তাতে কি সরকার রাজি থাকবে? এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তরে নির্মলা সীতারমণ স্পষ্ট জানিয়েছেন, সরকার 'অবশ্যই' রাজি। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও অংশীদারিত্ব এই সরকারি সংস্থাগুলিতে কমে গেলে কোনও অসুবিধাই নেই। বর্তমানে সরকারের এসবিআই-তে ৫৭.৪৯ শতাংশ এবং ওএনজিসি-তে ৫৮.৮৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
আরও পড়ুন- নির্মলার লক্ষ্য এবার ‘লাখপতি দিদি’! দেশের ৩ কোটি মহিলার ভাগ্য বদলাবে ২০২৪-এর বাজেট?
ডিআইপিএএম বিভাগটি ডিসইনভেস্টমেন্ট অর্থাৎ এই বেসরকারিকরণের বিষয় আশয় দেখে থাকে। নির্মলা সীতারমণ বলছেন, আস্তে আস্তে প্রচুর সরকারি শেয়ার বাজারে ছেড়েছে এই ডিআইপিএএমএ, যাতে ব্যক্তিগত মালিকানার পথ খুলে যায় এবং তারা সেই শেয়ারগুলি ধরে রাখতে পারে৷ সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহু সরকারি তালিকাভুক্ত এবং বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার বিনিয়োগ অভিযানে নেমেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সরকার শুধুমাত্র এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রক অংশই বিক্রি করেছে, যা টাটা গ্রুপ অধিগ্রহণ করেছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা বলছেন, PSU-এর মূল্যায়ন বৃদ্ধির জন্য আবশ্যিক সমস্ত পদক্ষেপ করতে বরাবরই প্রস্তুত ছিল সরকার। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলি বহু বহু যুগ ধরেই তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েই ব্যবসা করে চলেছে। তবে, গত কয়েক বছরে এই ব্যবধান কমিয়ে এনেছে সরকার।
নির্মলা ব্যাখ্যা করেছে, যদি পাবলিক সেক্টরের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং আজকের বাজারে তাদের মূল্যায়নের বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত এক প্রাণ সঞ্চার ঘটেছে। "শেয়ারের দাম বেড়েছে, লভ্যাংশ আগের তুলনায় অনেক ভালো," বলছেন নির্মলা। তাই কেন্দ্র চাইছে বেসরকারি বিনিয়োগ আসুক বেশি করে। ধীরে ধীরে সমস্ত ব্যাঙ্ক বা সরকারি এমন প্রতিষ্ঠান যার উপর প্রচুর সাধারণ মানুষ নির্ভর করে থাকেন সেগুলি বেসরকারি হয়ে গেলে সমস্যা হবে কেন?
আরও পড়ুন- অন্তর্বর্তী বাজেটে মধ্যবিত্তের হাতে পেনসিল? আয়কর নিয়ে যা জানালেন নির্মলা
অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশন জানাচ্ছে ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত্বকরণের পর থেকে, PSB বা পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, শিক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে টাকা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভারতীয়কে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সহজ সুযোগ করে দিয়েছে এসবিআইয়ের মতো ব্যাঙ্ক। আয়ের বৈষম্য সমাজে এক বড় সমস্যা। সরকারি ব্যাঙ্ক এই অর্থনৈতিক বিভাজন বন্ধ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ কিন্তু বেসরকারি হলে, সোজা কথা আম মানুষের ব্যাঙ্ক আর রইবে না এই ব্যাঙ্কগুলি। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও লাগাম টানতে হবে।
সরকারি ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো ঠিক না করে, পর্যাপ্ত নিয়োগ না করে, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য পেনশন সংস্কার না করে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি তা ভালোভাবে নেননি ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশও। সরকার বলছে কর্মীদের ও সাধারণ মানুষের মঙ্গল করতেই বেসরকারিকরণ। তবে আসল সত্য হচ্ছে, এই মঙ্গল সকলের জন্য নয়।