পতঞ্জলি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ক্ষমাপ্রার্থনা আচার্য বালকৃষ্ণের, রামদেব কোথায়?

Patanjali Ad Row: গত মঙ্গলবার সেই মামলায় বালকৃষ্ণ ও রামদেবকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর তাতেই টনক নড়ে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের।

অবশেষে ক্ষমা চাইলেন বাবা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণ। সম্প্রতি রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিজ্ঞাপন বিভ্রান্তমূলক ও ভুয়ো বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। গত মঙ্গলবার সেই মামলায় রামদেব ও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আচার্য বালকৃষ্ণকে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি আসাদুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চ। তাঁদের নামে আদালত অবমাননারও অভিযোগ আনে সুপ্রিম কোর্ট।

দেশের শীর্ষ আদালত কড়া হতেই শেষপর্যন্ত পিছু হঠতে হল রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলিকে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আচার্য বালকৃষ্ণ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। পাশাপাশি সংস্থার তরফে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের জন্য দুঃখপ্রকাশও করা হয়েছে। আচার্য বালকৃষ্ণ আদালতকে জানিয়েছেন, যে তাঁরা নিশ্চিত করবেন যাতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ভবিষ্যতে আর না জারি করা হয়। এ সংক্রান্ত হলফনামাও জমা দিয়েছেন তাঁরা।

গত নভেম্বরেই সুপ্রিম রায়ে জরিমানার মুখে পড়েছিল রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর একটি আবেদনের শুনানি পর্বে মিথ্যা বিজ্ঞাপনী প্রচার পিছু ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হতে পারে বলে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লাহ এবং বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চ। কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু 'করোনিল' কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করার অভিযোগ উঠেছিল রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: এবার সুপ্রিম কোর্টে সশরীরে ডাক পড়ল রামদেবের! কী কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?

২০২০ সালের ২৩ জুন প্রথম বার করোনিল কিট বাজারে এনেছিল পতঞ্জলি। করোনিল এবং শ্বাসারি বটি নামে দু’ধরনের ট্যাবলেট এবং অণু তৈল নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয়েছিল ৫৪৫ টাকা। চাইলে আলাদা ভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল। তার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৩ লক্ষ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়। পতঞ্জলির বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মিথ্যা বিজ্ঞাপনী প্রচারের অভিযোগ এনেছিল আইএমএ।

গত বছর নভেম্বর মাসে সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টকে ২ আশ্বস্ত করেছিল যে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা বা ওষুধ ব্যবস্থার সমালোচনা সম্পর্কে কোনও বিবৃতি বা অপ্রমাণিত অপ্রমাণিত দাবি করবে না। পরবর্তীকালে এমনটা করলে তাকে জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয় শীর্ষ আদালতের তরফে। এ ব্যাপারে পতঞ্জলি ও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টের বালকৃষ্ণের অবস্থান স্পষ্ট করে আদালতকে জানানোর নির্দেশ জেওয়া হয়েছিল। পতঞ্জলির বিজ্ঞাপনে রামদেবের ছবি থাকার ফলে তাঁকেও মামলার একটি পক্ষ বলে ধরা হয়েছিল। তবে না বন্ধ হয়েছে বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপন ব্যবহার, না ওই মামলায় আদালতকে কোনও জবাব দিয়েছে কোর্ট। এরপরেই গত ফেব্রুয়ারিতে ফের আদালতে ওঠে মামলাটি। সে সময় কেন্দ্র সরকারকেও তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সব জেনে বুঝেও কেন্দ্র চোখ বন্ধ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ করে শীর্ষ আদালত। বালকৃষ্ণকে এই সংক্রান্ত নোটিসও পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

গত মঙ্গলবার সেই মামলায় বালকৃষ্ণ ও রামদেবকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর তাতেই টনক নড়ে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের। ২ এপ্রিলের মধ্যে রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে বলেও জানায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষমা চাওয়া হল পতঞ্জলির তরফে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে তাঁর হলফনামায় আচার্য বালকৃষ্ণ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরের পরে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনগুলি কেবল সাধারণ বিবৃতিই ছিল। তবে অসাবধানতাবশত তাতে বেশ আপত্তিকর বাক্য থেকে গিয়েছিল। বিজ্ঞাপনগুলি পতঞ্জলির মিডিয়া বিভাগ দ্বারা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে হলফনামায়। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিষয়ে সচেতন ছিল না বলে জানিয়েছে পতঞ্জলি সংস্থাটি। পাশাপাশি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আচার্য বালকৃষ্ণ হলফনামায় জানিয়েছেন, যে তাঁরা নিশ্চিত করবেন, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলি আর জারি করা না হয়৷ পতঞ্জলির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র এই দেশের নাগরিকদের পতঞ্জলি পণ্যগুলি খাওয়ার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার পরামর্শ দেয় বলেও দাবি করেছেন বালকৃষ্ণ।

আরও পড়ুন: আসল নাম রামকিষাণ যাদব! কীভাবে কোটি কোটি টাকার পতঞ্জলির ব্যবসা গড়লেন রামদেব?

তবে বালকৃষ্ণ ক্ষমা চাইলেও এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি বাবা রামদেব। এর আগে আদালতে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের আইনজীবী বিপিন সংঘি বলেছিলেন, ‘কোম্পানির কোনও পদে তিনি নেই। উনি শুধুই যোগগুরু।’ এদিকে এর আগেও পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের হয়ে প্রায়শই মুখ খুলতে দেখা যেত রামদেবকে। এমনকী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও মুখ খুলেছিলেন। পতঞ্জলির বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও নিয়মিত দেখা যায় যোগগুরুকে। গত বছরের নভেম্বরে পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই এই রামদেবই কিন্তু বলেছিলেন, ‘আমরা কোনও ভুয়ো প্রচার করছি না। বরং কয়েকজন চিকিৎসক মিলে একটি গোষ্ঠী শুরু চালু করেছেন, যাঁরা যোগ, আয়ুর্বেদ, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ভুয়ো প্রচার করেন।' সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘যদি আমরা মিথ্যাবাদী হই, তাহলে আমাদের উপর ১,০০০ কোটি টাকার জরিমানা চাপানো হোক। আমরা মৃত্যুদণ্ডেও রাজি আছি। কিন্তু আমরা যদি মিথ্যা না বলি, তাহলে সেইসব লোকেদের শাস্তি দিতে হবে, যাঁরা ভুয়ো প্রচার করছেন। আমি এটা বলছি, কারণ গত পাঁচ বছর ধরে স্বামী রামদেব ও পতঞ্জলিকে টার্গেট করে ভুয়ো প্রচার চালানো হচ্ছে।’ এমনকী সরাসরি অ্যালোপাথির বিরুদ্ধেই তোপ দেগে বসেছিলেন রামদেব।

এবার তাঁর সংস্থা ক্ষমা চাইলেও, অলক্ষ্যেই থেকে গেলেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ এই যোগগুরু। আগামী ২ তারিখের আগে কি তিনি আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের সামনে হাজির হবেন, নাকি বালকৃষ্ণের হলফনামাতেই সাত খুন মাফ হল রামদেবের? উঠছে প্রশ্ন।

More Articles