ভারতের সঙ্গে মেলামেশা ক্ষতিকর, চিনের কাছে নালিশ মলদ্বীপের
Maldivian President on India: 'ভারতের সংস্পর্শ ক্ষতিকর' দাবি করে মলদ্বীপে অবস্থিত যাবতীয় ভারতীয় সেনাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে মলদ্বীপ। বেজিং-এর কাছে ক্রমশ ঋণ বেড়ে চলেছে মলদ্বীপের।
ভারতের সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গত বুধবার চিনের সঙ্গে কুড়িটি চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার চুক্তিতে দুটি দেশই লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি।
মুইজ্জুর বেজিং-প্রীতি নতুন ঘটনা নয়। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে ট্যুইট বিতর্কে জড়িয়েছে মলদ্বীপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার পর লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মলদ্বীপের কয়েকজন আধিকারিক। সেই বিষয়েই ভারত আসতে চেয়েছিলেন মুইজ্জু। আগ্রহ দেখায়নি দিল্লি। এরপরে মলদ্বীপ যাওয়ার বিমান একের পর এক বাতিল করে ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলি। তারকাদের তরফে লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার প্রচার শুরু করা হয়। সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে 'বয়কট মলদ্বীপ' প্রচার চালানো হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে মুইজ্জু বেজিং পৌঁছান। চিনের ফুজিয়ান শহরে দিন দুয়েক থাকেন তিনি। চিন থেকে মলদ্বীপে আরও পর্যটক পাঠানোর জন্য চিন সরকারের কাছে আবেদন জানান মুইজ্জু। তিনি বলেন, “কোভিডের আগে চিন থেকে সর্বোচ্চ পর্যটক পেতাম আমরা। পূর্বাবস্থায় যাতে ফিরতে পারি, তার চেষ্টাই করা উচিত আমাদের।"
চিনের রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি চিন থেকে মলদ্বীপগামী বিমানের সংখ্যা দু'গুণ বাড়িয়েছেন। এতে মলদ্বীপ এবং চিন─উভয় দেশই লাভবান হবে বলে আশা করছেন তিনি। মলদ্বীপের পর্যটন ক্ষেত্রটিতে ২০২২ সালে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৭৯ শতাংশ বলে জানিয়েছে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক।
মলদ্বীপ পর্যটন মন্ত্রক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ভারত থেকে সবথেকে বেশি পর্যটক পেয়েছিল মলদ্বীপ। ২ লক্ষ ৯ হাজার ১৯৮ জন ভারতীয় পর্যটক এ'বছর মলদ্বীপে আসেন। দ্বিতীয় স্থানে ছিল রাশিয়া। ২ লক্ষ ৯ হাজার ১৪৬ জন রাশিয়ান পর্যটক এসেছিলেন ২০২৩ সালে। চীন থেকে এসেছিলেন ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ১১৮ জন।
‘ইন্ডিয়া আউট' প্রচার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নভেম্বরে জেতেন মুইজ্জু। তাঁর মতে, চিন মলদ্বীপের অন্যতম নিকট বন্ধু এবং উন্নয়নের সহযোগী দেশ। 'ভারতের সংস্পর্শ ক্ষতিকর' দাবি করে মলদ্বীপে অবস্থিত যাবতীয় ভারতীয় সেনাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে মলদ্বীপ। বেজিং-এর কাছে ক্রমশ ঋণ বেড়ে চলেছে মলদ্বীপের। তারপরেও চিনের বিনিয়োগই চাইছেন মুইজ্জু।
আরও পড়ুন: বলিউডের মন্দারমণি! কেন সব তারকাই মলদ্বীপ ঘুরতে যান?
ওইদিন চিনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং গ্রেট হলে সর্বসমক্ষে মুইজ্জুকে 'পুরনো বন্ধু' বলে উল্লেখ করেন। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপপুঞ্জে আরও লগ্নি করতে চলেছে চিন। শি চিনপিং মুইজ্জুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “চিন এবং মলদ্বীপের সম্মুখে এখন এক ঐতিহাসিক সুযোগ। আমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাব, এবং ভবিষ্যত নির্মাণ করব।" চিন এবং মলদ্বীপের এই নতুন চুক্তিতে মলদ্বীপের প্রভূত উন্নতি সম্ভব। একই রকম ভাবে বিনিয়োগের পথে পা বাড়িয়েছে শ্রীলঙ্কাও।
চিনপিং তাঁর ভাষণে বলেন, “চিন মলদ্বীপের জাতীয় সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী এবং সর্বান্তকরণে তাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। ম্লদ্বীপের সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেজিং। যদিও বিশ্ব ব্যাঙ্ক গত অক্টোবরে এ'ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করেছে। তাদের আশঙ্কা, মলদ্বীপে বর্তমান সীমার অধিক চিনের বিনিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সার্বভৌমত্ব। মহামারীর সময়েও মলদ্বীপের আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল।
১২ জানুয়ারি মেলে ফিরে মুইজ্জু লি কিয়াং এবং অন্যান্য চিনা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। চিনের কাছে মলদ্বীপের ঋণ প্রায় ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার। যার ২০% জনতার ঋণ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব ও ভারতের কাছে মলদ্বীপের ঋণ যথাক্রমে ১২৪ মিলিয়ন ডলার ও ১২৩ মিলিয়ন ডলার। তারপরেও বেজিং-কে মুখ্য ঋণদাতা হিসেবে পেতে চাইছে মলদ্বীপ। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট প্রদত্ত তহ্য অনুযায়ী, চিনের বিভিন্ন ফার্মগুলি আরও ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার বিন্যোগ করেছে মলদ্বীপে। বিশেষত ২০১৪ সালে মলদ্বীপ বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পরেই বাড়ে এই বিনিয়োগ। সে'সময় মুইজ্জু এই প্রকল্পের খুব প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, “মলদ্বীপের ইতিহাসে পরিকাঠামোর উন্নয়নের স্বার্থে এমন প্রকল্প পাওয়া দুষ্কর।"
২০১৪-র ডিসেম্বরে মলদ্বীপ এবং চীন আরেকটি বাণিজ্যিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। সে সময় মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি আবদুল্লা ইয়াসমিন। যদিও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ সেই চুক্তি কার্যকর করেননি। মুইজ্জু সেই চুক্তিটিকেই উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, এফটিএ দুই দেশের বাণিজ্যিক সুসম্পর্কের নিদর্শন।