ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা অনুদান! কে এই লক্ষ্মী মিত্তল?
Electoral Bond: ব্যক্তিগত অনুদানকারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তলই। অন্তত এসবিআইয়ের দেওয়া তালিকা থেকে তেমনটাই মালুম হচ্ছে।
কোটি কোটি টাকা এসে ঢুকেছে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে। কোন জায়গা থেকে এত এত টাকা দিয়ে সহায়তা রাজনৈতিক দলগুলিকে? কোথা থেকেই বা এসেছে সেই সব টাকা? কীসের বিনিময়ে এইসব অনুদান? একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি মামলা। লোকসভা ভোটের আর যখন একমাসও দেরি নেই, সে সময় এই বন্ড দুর্নীতি নিয়ে হইচই ভালোই বিপাকে ফেলেছে বিজেপি সরকারকে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে এসবিআই-কে নির্দেশ দেওয়া হয় ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে। নানা টালবাহানার পরে সেই নথি প্রকাশ্যে এনেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সেই তালিকায় দেখা গিয়েছে, অসংখ্য সংস্থা ও ব্যক্তি বড় বড় অঙ্কের টাকা অনুদান দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলিকে। যদিও ওই তালিকায় শুধুমাত্র অনুদানকারীর নাম, বন্ড কেনার তারিখ এবং অনুদানের পরিমাণের উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে কোন কোন রাজনৈতিক দল কত কত টাকা পেয়েছে তার হিসেব। কে কোন দলকে অনুদান দিয়েছেন, সেই হিসেব পাওয়া যায়নি এখনও। ইতিমধ্যেই সেই তথ্য় সামনে আনার জন্য এসবিআই-কে বন্ডের ইউনিক নম্বর প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ওয়েবসাইটে।
আরও পড়ুন: SBI-এর কাছে সমস্ত বন্ডের আলফা-নিউমারিক নম্বর চাইল সুপ্রিম কোর্ট, কী এই ইউনিক কোড?
এসবিআই প্রকাশিত রিপোর্টে টাকার অঙ্ক দেখে চোখ কপালে উঠেছে দেশবাসীর। বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকার অনুদান এসেছে। আর সেই তালিকায় চোখে পড়ার মতো নাম হল লক্ষ্মী মিত্তল। ব্যক্তিগত অনুদানকারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তলই। অন্তত এসবিআইয়ের দেওয়া তালিকা থেকে তেমনটাই মালুম হচ্ছে। তথ্য বলছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ভারতের রাজনৈতিক দলে অন্তত ৩৫ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন তিনি।

কোন দল কত টাকা পেয়েছে, এসবিআইয়ের তালিকা থেকে জানা গেলেও কোন দলকে কারা কারা অনুদান দিয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, বন্ড থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি। মোট অনুদানের প্রায় ৪৮ শতাংশই ঢুকেছে বিজেপির কোষাগারে। তার পরেই তালিকায় রয়েছে তৃণমূল ও কংগ্রেস। ডিএমকে, ওয়াইএসআর, শিরোমণি আকালি দল, বিআরএসের মতো একাধিক দল রয়েছে অনুদানপ্রাপকের তালিকায়। স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২ হাজার ২১৭টি বন্ড কেনা হয়েছিল। তার মধ্যে সব দল মিলিয়ে বন্ড ভাঙিয়েছে ২২ হাজার ৩০টি। কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দাতা সংস্থার তালিকা ৩৩৭ পাতার। আর প্রাপক দলগুলির নামের তথ্য ৪২৬ পাতার। এসবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ছয় হাজার ৯৮৬ কোটি ৫০ লাখ। তার পরেই তালিকায় থাকা তৃণমূল পেয়েছে এক হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। সেখানে কংগ্রেসের তহবিলে গিয়েছে এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। আর বিআরএস নির্বাচনী বন্ড ভাঙিয়ে পেয়েছে এক হাজার ৩২২ টাকা।
এর মধ্যে ব্যক্তিগত অনুদানকারী হিসেবে তালিকায় পয়লা নম্বরে রয়েছেন লক্ষ্মী মিত্তল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘আর্সেলরমিত্তল’-এর মালিক লক্ষ্মী। বর্তমানে তিনি থাকেন ব্রিটেনে। সেখান থেকেই ব্যবসায়িক রমারমা তাঁর। তবে বিদেশে থাকলেও ভারতীয় রাজনীতির উপর যে যথেষ্ট নজর রয়েছে তাঁর, তা স্পষ্ট। ফোর্বসের মতে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তার মোট সম্পদ ছিল ১৬.৪ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের ৯৩তম ধনী ব্যক্তি এবং এখন পর্যন্ত ভারতের ১৫তম ধনী ব্যক্তি। এসবিআই প্রকাশিত তথ্য বলছে, বর্তমানে ১.৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তির মালিক লক্ষ্মী। যেখান থেকে দু-এক বিন্দুর মতোই ৩৫ কোটি টাকা রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত অনুদানকারীদের যে পরিমাণ অনুদান দিয়েছেন, তার মধ্যে ৯ শতাংশেরও বেশি অর্থ লক্ষ্মী একাই দিয়েছেন।

গত বছরই কলকাতায় বিরাট অফিস খুলেছে লক্ষ্মী মিত্তলের সংস্থা। এর আগে ইউরোপের লাক্সেমবার্গ থেকেই কাজকর্ম সামলাতো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত এবং খনি সংস্থা আর্সেলরমিত্তল। ২০২৩ সালের মার্চে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে খোলা হয় সংস্থার নতুন অফিস। সারা বিশ্বের উপদেষ্টা পরিষদের পরিচিত মুখ এই লক্ষ্মী মিত্তল। অনুদানে বরাবরই বেশ এগিয়ে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী। কখনও তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুদান দেন, তো কখনও ইউনিসেফকে। এমনকী ব্রিটেনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালেও অনুদান দিয়ে থাকে মিত্তল পরিবার। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সখ্য অনেকদিনের। ২০২২ সালের অক্টোবরে গুজরাটে আর্সলর মিত্তলদের একটি স্টিল কারখানার সম্প্রসারণে সশরীরে হাজির ছিলেন মোদি। দীপাবলী উপলক্ষে জনসাধারণকে শুভেচ্ছা দেওয়ার সময় মিত্তলদের ওই প্রকল্পের ভুয়সী প্রশংসা করতে ভোলেননি মোদি। দেখা গিয়েছে, লক্ষ্মী মিত্তল ৩৫ কোটি টাকার ওই বন্ডগুলি কিনেছিলেন ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে। আর তার ঠিক পরে পরেই গুজরাটে সম্প্রসারিত হয় মিত্তলদের ওই স্টিল কারখানা। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ১,৬০০ কোটি টাকার চুক্তিও সই করেছিল মিত্তলরা।
আরও পড়ুন:কিনেছিলেন এক হাজার টাকার বন্ড! যেভাবে দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করলেন সাংবাদিক পুনম
এবার তিনি অনুদান দিয়েছেন রাজনৈতিক দলকে। আর এক-দু'কোটি নয়। মোট ৩৫ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলিকে দান করেছেন তিনি। এবার কোন দলকে তিনি ওই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছেন, তা জানা যায়নি। অবশ্য সেই তথ্যও সামনে এল বলে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে বন্ডের আলফা নিউম্যারিক নাম্বার-সহ বাদবাকি সমস্ত তথ্য এসবিআই-কে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর তা সামনে এলেই লোকসভা ভোটের আগে সব ধোঁয়াশা কাটতে চলেছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

Whatsapp
