ইস্কন করার 'অপরাধে' বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত কিশোরী? আসল সত্য জানুন
Bangladesh fake News: ওই কিশোরীর মা সেই দেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমার মেয়ের উপর বা আমাদের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি।"
গুজব থমছে না। বাংলাদেশ ইস্যুতে একের পর এক ভুয়ো ভিডিও, মিথ্যা সংবাদ, গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই তিক্ততর করে দেওয়া হচ্ছে দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়াকে। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকরা এই 'ফেক নিউজ' ভেঙে আসল সত্য প্রকাশ করার কাজ করে চলেছেন ঠিকই তবে তাতে ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলির ছড়িয়ে দেওয়া খণ্ডসত্যগুলি যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। দুঃখজনক হলেও, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকেই ব্যাপক পরিমাণে মিথ্যা খবর ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে। যেমন রটিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশি এক কিশোরীকে 'ইস্কন করার অপরাধে' বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা। আসলে এমনটা ঘটেইনি।
বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, কিছুদিন আগেই তারা একটি ভিডিও পান মোবাইলে। যে ভিডিও সংবাদে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের এক বছর ১৫-র কিশোরী পালিয়ে ভারতে গিয়েছেন। তাঁকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি নাকি ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত। ভিডিওটি ভাইরাল হয় স্বাভাবিকভাবেই। এরপর বাংলাদেশের পুলিশ সত্যতা যাচাইয়ের কাজে নামে। জানা যায়, ওই কিশোরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বলে ভারতে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কোনওভাবেই তাঁকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ পুলিশ জানাচ্ছে, ওই কিশোরীর চোখের সমস্যা আছে। এর আগেও তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছেন। এবার এই কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে যেহেতু ভারতের ভিসা বন্ধ করা হয়েছে তাই মামার বাড়ির মাধ্যমে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। ইস্কন করার জন্য কেউ বাংলাদেশে তাঁদের হুমকিও দেয়নি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই কিশোরীর বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা। কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে, তারা ইস্কনের সঙ্গে যুক্তই নন। এই খবর মিথ্যা। পাশাপাশি নিরাপদে মেয়েকে বাংলাদেশে ফেরানোর জন্য পুলিশের সাহায্যও নাকি চেয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন- কালীমূর্তি ভাঙার দৃশ্য বাংলাদেশের নয়, পশ্চিমবঙ্গের! জেনে নিন আসল তথ্য
ওই কিশোরীর মা সেই দেশের সংবাদমাধ্যম ডিসিবি নিউজকে জানিয়েছেন, “আমার মেয়ের উপর বা আমাদের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি।" তবে তাঁর মেয়ে কীভাবে ভারতে গেল এই নিয়েও বিশদে কিছু জানাতে পারেননি তারা। মায়ের বারেবারে একটিই আবেদন, যেন সুস্থ শরীরে ফিরে পান মেয়েকে। মেয়ের বাবা বলছেন, “মেয়ে যে কীভাবে গেছে তা আমি বলতে পারি না, আমি অসুস্থ। দু'দিন বাদে খবর পাই মেয়ে ইন্ডিয়ায় ধরা পড়সে। ভারত থেকে যা প্রচার করছে, তা ভুল। আমরা সনাতনী, ইস্কন না। আমরা তো ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত না। আমার মেয়ে তো এই বিষয়ে কোনও কথাও বলেনি।"
একদিকে পরিবারের তরফে এই দাবি, অন্যদিকে বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর 'হিন্দু বিদ্বেষের' খবরে ছয়লাপ! শুধু তাই নয়, ব্যবসার কাজে বাংলাদেশে গিয়ে এপার বাংলার হিন্দুদের জোর করে বোরখা পরিয়ে 'মুসলিম করে দেওয়ার' চক্রান্তের কথাও ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মায়ের কোল থেকে সন্তান কেড়ে হত্যা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর বাংলাদেশে নির্যাতন এই প্রথম ঘটেনি। বহু বৌদ্ধমঠ এখনও হিংসার চিহ্ন গায়ে দাঁড়িয়ে আছে ওপারের পার্বত্য এলাকায়। এখন এমন ঘটনা ঘটলেও তা বিচ্ছিন্নই। হাসিনা পরবর্তী দেশে নতুন করে এই হিংসা নিয়ে যতটুকু বাস্তবে ঘটছে, তারচেয়ে ঢের বেশি অপলাপ করা হচ্ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।