বাংলাদেশে ফিরছেন হাসিনা? ধানমন্ডির রেশ না কাটতেই যে বার্তা দিলেন মুজিব কন্যা
Sheikh Hasina: মুহাম্মদ ইউনূসকে এবার আরও সরাসরি আক্রমণ করেছেন হাসিনা। বলেছেন, "অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার জন্য ইউনূস এই পরিকল্পনা করেছে। শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য।"
পদত্যাগ করার ঠিক ছয় মাসের মাথায় অনলাইনে ভাষণ দিয়েছিলেন বাংলদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে ওই বার্তা প্রচার হতে না হতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে যায় বাংলাদেশ। হাসিনা বিদ্বেষীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়। শেখ মুজিবের স্মৃতিধন্য ওই বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে আবারও হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জেগে ওঠে বাংলাদেশে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার অনলাইনে ভাষণ দিলেন শেখ হাসিনা। এবার আরও তীক্ষ্ণ তাঁর বক্তব্য। এবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, 'প্রতিশোধ' তিনি নেবেনই। বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেই তিনি সেই দেশে ফিরতে চান!
সোমবার অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে একটি ভার্চুয়াল বার্তা দেন হাসিনা। এই ভিডিওতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে কয়েক জন সাধারণ মহিলাকেও। তাঁরা কারা? শেখ হাসিনার দাবি, এই মহিলারা বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের সময়ে আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের পরিবারের মানুষ। জুলাই অগাস্টের অভ্যুত্থানে এই পুলিশকর্মীরা এবং তাঁদের পরিবারের মানুষরা আওয়ামী বিরোধী মানুষদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এখনও সন্ত্রস্ত জীবনই কাটাচ্ছেন বলে দাবি হাসিনার। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনে প্রাণ হারনো এক পুলিশকর্মীর বিধবা স্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাচ্ছেন নিজের দুর্দশার কথা। ওই মহিলা বলছেন, তাঁর স্বামী কিছুই রেখে যাননি পরিবারের জন্য। তাঁদের সন্তান রয়েছে। জীবন ঠিকভাবে কাটাতে শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য চান ওই মহিলা। হাসিনা সান্ত্বনা দেন, “অবশ্যই আমি সাহায্য করব। আমি আসব।” এই 'আসা' শুধুই যে নিরীহ প্রত্যাবর্তন নয় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা। বাংলাদেশের হাসিনা বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, হাসিনা প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে দেশ শাসন করেছেন। বাবা মুজিবুর এবং সমগ্র পরিবারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার তাড়নাই তাঁকে ধীরে ধীরে স্বৈরশাসক করে তুলেছে।
আরও পড়ুন- লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ! ছাত্র আন্দোলনে হাসিনার ভূমিকা নিয়ে কী বলছে জাতিসংঘের রিপোর্ট?
শেখ হাসিনা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণ অভুত্থানের সময় বহু পুলিশকর্মী আক্রান্ত হন কারণ তাঁরা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ। সেই পরিবারের সদস্যেরা বিচার পাচ্ছেন না ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে। ওই ভিডিও বার্তায় হাসিনা বলেছেন, “আমি আছি। আমি অবশ্যই এর বিচার কোনও না কোনও দিন করব। অন্তর্বর্তী সরকার যতই দায়মুক্তি দিক, এই হত্যার দায়মুক্তি হয় না। হত্যার বিচার হয়। আমার বাবা-মা, তিন ভাইকে যখন হত্যা করেছিল, তখনও দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি তাদের বিচার করেছি। এই পুলিশহত্যার বিচারও আমি করব একদিন।”
মুজিব কন্যা হাসিনা ওই ভিডিওতে আরও বলেন, "আমাদের পুলিশ বাহিনীর কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪০০ থানায় পুলিশদের ভিতরে রেখে হামলা চালানো হয়েছে। থানা লুঠ করেছে হামলাকারীরা। মহিলা পুলিশ, অন্তঃসত্তা কনস্টেবলদেরও ছাড়েনি এই ঘাতকরা। যারা মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের হত্যা করেছে ইউনূস সরকার। আমি দেশে ফিরব, আমাদের শহিদদের প্রতিশোধ নেব।"
মুহাম্মদ ইউনূসকে এবার আরও সরাসরি আক্রমণ করেছেন হাসিনা। বলেছেন, "অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার জন্য ইউনূস এই পরিকল্পনা করেছে। শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। এখানে কোনও ছাত্র-জনতা ছিল না। ৭ জুলাই থেকে আন্দোলনের নামে যে খেলা চলছিল, তাতে পুলিশ কোনও গ্রেনেড মারেনি বরং ছাত্রদের বঙ্গভবনে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা দিয়েছে।"
আরও পড়ুন- ১৮ লক্ষ কোটি টাকার দেনা চাপিয়ে গেছেন হাসিনা? যে বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ
তবে কিছুকাল আগেই জাতিসংঘ বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানে হাসিনাআর ভূমিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ত্তে জাতিসংঘ স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার ‘সম্ভবত’ মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ছিল। প্রতিবেদনে বলা আছে, আওয়ামী লীগ সরকার নৃশংসভাবে আন্দোলন দমন করেছে। গুলি চলেছে, লাশ গুম হয়েছে সরকারের নির্দেশেই। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন সারা বিশ্বজুড়ে আবারও হাসিনার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের থেকে নজর ঘোরাতে, নিজের সমর্থকদের আবারও জোটবদ্ধ করতেই হাসিনার এই ভিডিওবার্তা। এই কারণেই হাসিনা আবার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভবনা জিইয়ে দিলেন। ওই ভিডিও বার্তায় হাসিনা বলেছেন, “ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন। যখন আমি দেশে ফিরতে পারব, প্রত্যেকটি পরিবারকে সাহায্য করব। হত্যাকারীদের বিচারও করব।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দুষ্কৃতী দমনে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। ‘শয়তানের খোঁজ’ বা অপারেশন ডেভিল হান্টে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ জুড়ে হাজার হাজার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘শয়তানের খোঁজ’-এ আসলে কে ‘শয়তান’, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। হাসিনা সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, ইউনূস বারবার বলেন, "আমি সবাইকে, রাজনীতিবিদদের শান্ত থাকতে বলেছি। তিনি খুব ভালো মানুষ সেজে এই কথা বলেছেন। অথচ ১৫ জুলাই থেকে যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাল, তাদের বিচার হওয়ার কথা বলেননি।" হাসিনার অভিযোগ, ইউনূস রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ। তাঁর কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তাঁর অযোগ্যতার ফলেই বিচারালয়ে হামলা, গণভবনে হামলা হয়েছে। ৬ মাসের ওপর হয়ে গেল দেশ জঙ্গিদের হাতে চলে গেছে। এখন শুরু হয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। কে ডেভিল, কাকে খুঁজছে সে? ছেলেকে না পেলে মাকে হত্যা করছে। আজকে ওরা দেশটাকে জঙ্গির দেশে পরিণত করেছ। ইউনূসকে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় নিতে হবে। ওঁরও বিচার হবে। আমি দেশ ফিরলে প্রত্যেককে যতটা সম্ভব সাহায্য করবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ চলবে না।"