ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ? যা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস
Muhammad Yunus: এক-এগারোর সময় ইউনূস বলেছিলেন তাঁর রাজনীতিতে আসা ভুল হয়েছে। এখন তিনি নিজে রাজনৈতিক পদেই আসীন! নিজের এই অবস্থান নিয়ে এখন তাঁর কী মূল্যায়ন?
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে সাত মাস। এখন ক্ষমতায় রয়েছে মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ভারত সরকার হাসিনার এ দেশে থাকা নিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশ এবং ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথা দাবি করে এসেছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। সেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির প্রসঙ্গও।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, "(সম্পর্ক) খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনও অবনতি হয়নি। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি, আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা, সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।"
আরও পড়ুন- ভাষা আর ধর্মের জাল থেকে কোনওদিন মুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ?
ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে ইউনূস জানিয়েছেন, ভারত সরকারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে। তাঁর কথায়, "তারা এখানে আসছেন, আমাদের লোকজন সেখানে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহেই কথাবার্তা হয়ে গেছে।"
এলন মাস্কের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইউনূস ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, "এটা মূলত ছিল স্টারলিংক নিয়ে। ব্যবসায়িক একটা সম্পর্কের বিষয় ছিল। সে বিষয়ে আমরা আলাপ করেছি যে স্টারলিংকের কানেকশনটা আমরা নিতে চাই।"
সবশেষে জানতে চাওয়া হয়, এক-এগারোর সময় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, সেটা নিয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁর রাজনীতিতে আসাটা ভুল হয়েছে। এখন তিনি নিজে রাজনৈতিক পদেই আসীন! তাহলে নিজের এই অবস্থান নিয়ে এখন তাঁর কী মূল্যায়ন? রাজনীতিতে আসা কি ঠিক হয়েছে? ইউনূস জানান, "প্রথম কথা, আমি রাজনৈতিক দল করিনি। গঠন করার কথা বলেছিলাম এবং দশ সপ্তাহ যাবৎ এই কথা জারি ছিল। দশ সপ্তাহ পর আমি বলেছি, না আমি রাজনীতিতে যাব না। আমি বলেছি যে, পলিটিক্স ইজ নট মাই কাপ অফ টি এবং ওটা ওখানেই সমাপ্ত। এরপর আমাকে রাজনীতির কাছে কেউ টানতে পারেনি। সবাই চেষ্টা করেছে দেশের নেতৃত্ব নেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। সবাই চেষ্টা করেছে। আমি ওটা চাইনি। আমি বলেছি, ওই চ্যাপ্টার শেষ। এই দশ সপ্তাহ- দ্যাটস এনাফ। কাজেই ওইভাবেই আছি এখন। এখানে আমি রাজনীতিতে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই। রাজনীতি করিও না।"
আরও পড়ুন- ভারত-পাকিস্তান উভয়ের অধীনতাই অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ : মাহফুজ আলম
বিবিস-র এই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠন সহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ নিয়েও কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত, এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে নানারকম বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। চাপের মুখে পড়েই সরকারকে আশ্বাস দিতে হয়েছে বলেও আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিনের পূর্তিতেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছিলেন, "কখন নির্বাচন হবে, সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়।" সংবাদ সংস্থা এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকারে নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছিলেন, "এটি একটি প্রতিশ্রুতি, যা আমরা দিয়েছি। আমরা প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন হবে।" এই সংস্কারপর্ব কতদিনে শেষ হবে সে নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা এখনও দেয়নি সরকার পক্ষ। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সংস্কার প্রক্রিয়াতে দেশবাসীর অংশগ্রহণ থাকা জরুরি। তাই দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। কবে দেশটির নির্বাচন-সহ বাকি প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে, সেই উত্তর অবশ্য এখনও অধরা।
উল্লেখ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, "আমরা আশা করছি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বাংলাদেশে এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।" পিটিআইয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোনালাপে ইউনূস বলেছিলেন, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, "বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।" উল্লেখ্য, মার্চের শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যের গঙ্গা চুক্তি নিয়ে যৌথ বিষয়ক বৈঠক শুরু হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে এই বৈঠক চলবে। গত সোমবারই ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা এসে পৌঁছেচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।