বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে 'ডিপ স্টেট'-এর ভূমিকা ছিল? যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
Donald Trump on Bangladesh: ট্রাম্প বলেছেন, "সত্যি বলতে, আমি বিষয়টা নিয়ে পড়ছি, কিন্তু আমি বাংলাদেশ বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর উপরেই ছেড়ে দেব।”
ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভারত আর বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নড়বড়ে। এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির গভীর সখ্য। ফলে ভারত, বাংলাদেশ আর আমেরিকার সমীকরণ কী হবে এই নিয়ে চিন্তা ছিলই। সদ্য মার্কিন মুলুকে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় পড়শি দেশের অবস্থা সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প আর মোদির এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময়ই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'গভীর কোনও ভূমিকা' নেই।
বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই জানিয়ে দেন, “আমাদের গভীর কোনও ভূমিকা ছিলও না… এটা এমন একটি বিষয় যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন এবং শত শত বছর ধরে কাজ হয়েও চলবে। সত্যি বলতে, আমি বিষয়টা নিয়ে পড়ছি, কিন্তু আমি বাংলাদেশ বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর উপরেই ছেড়ে দেব।”
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেন, "বাংলাদেশ সম্পর্কে আমরা কী বিবৃতি দিচ্ছি, এটা নিয়ে দুই দেশের নেতার মধ্যেই আলোচনা হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং পরিস্থিতিকে ভারত কীভাবে দেখছে সেই সম্পর্কে উদ্বেগগুলিও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।” মিসরি বলছেন, “আমার মনে হয় যে আমরা আশা রাখি বাংলাদেশের পরিস্থিতিও এমন একটি দিকে এগিয়ে যাবে যেখানে আমরা তাদের সঙ্গে গঠনমূলক এবং স্থিতিশীলভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। কিন্তু সেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রী সেই মতামতগুলি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।”
আরও পড়ুন- ১৮ লক্ষ কোটি টাকার দেনা চাপিয়ে গেছেন হাসিনা? যে বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ
গত বছরের অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তারপর থেকেই ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। সম্প্রতি সীমান্ত নিয়ে আবারও কূটনৈতিক প্রতিবাদ হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছিল। সেই আবেদনে ভারত এখনও সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ ধানমন্ডির বাসভবন ধ্বংস করে দিয়েছে হাসিনা বিরোধী জনগণ। ফলে বাংলাদেশ, গত ছয় মাসে যে শান্ত হয়েছে কিছুটা, সেই দাবিও করা যায় না। বিক্রম মিসরি গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার কথা বলা হলেও, বরফ গলেনি এতটুকুও।
হাসিনা গত বছর বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটির অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ করেন, এই অনুমতি না দেওয়ার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৌশলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং লীগ ঘনিষ্ঠ অন্যান্য সংগঠনের সমর্থকরা ওয়াশিংটনে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ডাক দিয়েছেন। ইউনূসকে 'সংখ্যালঘু হত্যাকারী' বলে দাগ্যে দিয়েছেন। এখন দেখার, ট্রাম্প তো মোদির উপর বাংলাদেশের 'ভার' ছাড়লেন। কিন্তু মোদি এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন আদৌ? অগাস্টের পর থেকে এখনও তিনি নিজে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও মতামতই ব্যক্ত করেননি।