হাড় হিম হয়ে যাবে প্রবেশ করলেই! মানুষের ৩০ হাজার হাড় দিয়ে গির্জা তৈরির নেপথ্যে যে রহস্য...

Church of Human Bones: এই গির্জার মূল আকর্ষণই হচ্ছে এক বীভৎস সুন্দর ঝাড়বাতি। মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি ঝাড়বাতি।

ধর্মীয় স্থানে মনের শান্তি, প্রাণের আরাম খুঁজতে যান মানুষ। কোনও এক সম্ভাবনাময় শক্তির কাছে নিজেকে নিঃস্ব করে দিতে যান। ধরুন, নিঃস্ব করতে গিয়ে আত্মারামই খাঁচাছাড়া হয়ে বেরিয়ে পড়ল! যে ধর্মীয় স্থানে গিয়ে আরাম খুঁজবেন ভেবেছিলেন সেখানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখলেন যে হাত পা কাঁপতে লাগল! তাহলে জীবনেও চেক প্রজাতন্ত্রের কুটনা হোরা শহরের সেডলেকের গথিক গির্জায় যাবেন না। বাইরে থেকে বেশ সাধারণ দেখতে হলেও ভিতরে গিয়ে হাড় হিম হয়ে যাবে আপনার, আক্ষরিক অর্থেই! হাজার হাজার মানুষের হাড়গোড় দিয়ে তৈরি হয়েছে এই গির্জা! মাথার উপর মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি করা ঝাড়বাতি, হাড়ের ক্রস, হাড়ের সজ্জা- মৃতদের আস্ত সংসারে ঢুকে পড়বেন আপনি! হাজারে হাজারে মানুষের হাড় ব্লিচ করে তারপর তা খোদাই করে নকশা গড়ে এই গির্জা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু কেন?

কিংবদন্তি বলে, স্থানীয় এক মঠের অধ্যক্ষ ১৩০০ শতাব্দীতে জেরুজালেমে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন। গির্জার কবরস্থান জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সেই শহর থেকে কিছু পবিত্র মাটি নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই কারণেই সেডলেক কবরস্থান এই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় কবরস্থান হয়ে উঠেছে। এর ঠিক পরের শতকে, অর্থাৎ ১৪ শতকে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ জুড়ে। হাজারে হাজারে মানুষের মৃত্যু ইউরোপকে ধ্বংস করে ফেলে। সেই সময় প্লেগে মৃত প্রায় ৩০,০০০ মানুষের শব নিয়ে আসা হয় এই কবরস্থানে। কবর দেওয়া হয় প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হাজার হাজার মানুষকে। পরবর্তীকালে এই বিশেষ কবরস্থানে আরও ১০,০০০ মানুষের দেহ কবর দেওয়া হয়।

১৫ শতকে গথিক গির্জা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন এই কবরস্থানের নীচ থেকে অনেক হাড় সরিয়ে ফেলা হয়। মাটি থেকে সরানো সেই সমস্ত হাড়গোড় স্তূপ করে রাখা হতে থাকে ওই গির্জারই এক অংশে। ১৮৭০ সাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সেই বছর গির্জার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এক কাঠমিস্ত্রি ফ্রান্সিস রিন্টকে ডেকে আনে। জমানো হাড়ের ওই পাহাড়প্রমাণ স্তূপ থেকে সুন্দর কিছু তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে।

ফ্রান্সিস লেগে পড়েন কাজে। শত শত বছরের প্রাচীন হাড়গুলিকে ব্লিচিং করেন তিনি। প্রত্যেকটি হাড় খোদাই করার পরে, তিনি সেগুলি গির্জা সাজানোর কাজে ব্যবহার করেন। এই গির্জার প্রবেশপথ জুড়ে রয়েছে মাথার খুলির তৈরি শিকল। কোমরের হাড় এবং ফিমার ব্যবহার করে গির্জার ক্রস তৈরি করা হয়। কিন্তু এই গির্জার মূল আকর্ষণই হচ্ছে এক বীভৎস সুন্দর ঝাড়বাতি। মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি ঝাড়বাতি। মানবদেহের প্রতিটি হাড়কে অন্তত একবার করে ব্যবহার করা হয়েছে এই অসাধারণ ঝাড়বাতি নির্মাণে। সাদা মাথার খুলি থেকে মোমবাতি জ্বলে, গির্জাকে আরও মায়াবী করে তোলে। গির্জার কর্মচারী ভেন্ডুলা ক্রুলোভা জানান, একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছে এই ঝাড়বাতির দেখভালের জন্য। তিনি টুথব্রাশ দিয়ে হাড় পরিষ্কার করেন।

চেক প্রজাতন্ত্রে প্রায় ৫০,০০০ মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি ব্রনো অসুয়ারি রয়েছে। পোল্যান্ডে কপলিকা জাসজেকের খুলির চ্যাপেল, পর্তুগালে এভোরাতে ক্যাপেলা ডস ওসোস রয়েছে এবং প্যারিস ক্যাটাকম্বে ছয় মিলিয়নেরও বেশি দেহাবশেষ রয়েছে। তবুও চেক প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক দর্শনীয় গন্তব্য হচ্ছে এই গির্জা। পর্যটকরা প্রতিদিন প্রাগ থেকে এক ঘণ্টার ট্রেন সফর করে দেখতে আসেন এই বিস্ময়কে।

More Articles