আগ্নেয়গিরি থেকে উড়ছে মুঠো মুঠো সোনা! যে আশ্চর্য ঘটনা তাক লাগিয়েছে বিজ্ঞানীদের

Volcano In Antarctica: আগ্নেয়গিরি লাভা উদগীরণ করে শোনা যায়, তাই বলে সোনা! কিন্তু ঘটছে ঠিক এমনটাই। আন্টার্কটিকা ১৩৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে অন্যতম মাউন্ট ইরেবাস থেকে বেরিয়ে আসছে প্রতিদিন রাশি রাশি সোনার গুঁড়ো।

হাওয়ায় উড়ছে সোনা। তবে এ সোনা 'সোনার পাথরবাটি', 'সোনার ছেলে' বা 'সোনার বাংলা'-র মতো নয় মোটেও। এ সোনা আসল সোনা। বাজারে যার গায়ে হাত দিতেই ছ্যাঁকা লাগে আমজনতার। আপাতত বাজারে ১ গ্রাম সোনার দাম চলছে আট হাজার টাকার আশেপাশে। আর সেই বহুমূল্য সোনাই এবার উড়ছে হাওয়ায়। আন্টার্কটিকার কাছে মাউন্ট ইরেবাস নামে একটি আগ্নেয়গিরি নাকি এবার তেমনই সোনা নির্গমন করছে।

বিশ্বাস হচ্ছে না তো! আগ্নেয়গিরি লাভা উদগীরণ করে শোনা যায়, তাই বলে সোনা! কিন্তু ঘটছে ঠিক এমনটাই। আন্টার্কটিকা ১৩৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে অন্যতম মাউন্ট ইরেবাস। সম্প্রতি ন্যাশনাল এরোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর্থ অবজারভেটরির তরফে সম্প্রতি জানানো হয়েছে এই তথ্য। ১২,৪৪৮ ফুট উঁচু মাউন্ট ইরেবাস থেকে প্রায় ৬২১ মাইল দূরে জমছে ওই সোনার গুঁড়ো। নাসা আর্থ অবজারভেটরির তরফে জানানো হয়েছে, আরও নানা ধরনের ধাতু ও পদার্থ বেরিয়ে আসে ওই আগ্নেয়গিরির লাভামুখ থেকে। সোনাও তার মধ্যে একটি।

আরও পড়ুন: অর্ধস্বচ্ছ ডিম ফুটে বেরিয়ে আসছে আশ্চর্য প্রাণী! অতল সমুদ্রে বিজ্ঞানীদের চমকে দিল যে খোঁজ

প্রতিদিন যে পরিমাণ সোনা উদগীরণ করছে আগ্নেয়গিরিটি, তার পরিমাণ ৮০ গ্রামের কাছাকাছি তো হবেই। বাজারে যার দাম কম করে হলেও ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি তো হবেই। যা মাসের হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকার সোনা। মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা জানাচ্ছে, আগ্নেয়গিরিটি আসলে ভূত্বকের একটি পাতলা স্লাইসের উপরে রয়েছে। যার ফলে গলিত শিলার পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে আরও সহজে উপরে উঠে আসতে পারে। যা গ্যাস ও বাষ্পের মাধ্যমে বাতাসে নির্গত করে দিচ্ছে মাউন্ট ইরেবাস। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে নাকি স্ট্রোম্বোলিয়ান অগ্নুৎপাতও দেখা যায় মাউন্ট ইরেবাসে। তখন আশপাশে ছিটতে ছিটকে পড়ে বোমার মতো পাথর। যা প্রায় কয়েকশো মিটার পর্যন্ত ছিট়কে যায়।

১৯৭২ সাল থেকে মাউন্ট ইরেবাসের ক্যালডেরা বা বিরাটাকৃতির জ্বালামুখের মধ্যে তৈরি হয়েছে একটি লাভা-হ্রদ। পৃথিবার দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে মনে করা হয় মাউন্ট ইরেবাসকে। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, শুধু আগ্নেয়গিরি হিসেবেই নয়, ওই লাভা-হ্রদটিও নাকি বিশেষ বিখ্যাত। আন্টার্কটিকার আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন। ওই ভয়ঙ্কর ঠান্ডাতেও কখনও হিমায়িত হয় না বা জমে যায় না। সবসময়েই গলিত লাভা জমে থাকে ওই হ্রদের উপরিতলে। যা বেশ বিরল বলেই মত বিজ্ঞানীদের।

এদিকে এই ইরেবাস আগ্নেয়গিরি নিয়ে গবেষণা চালানোও বেশ কঠিন। আন্টার্কটিকার আবহাওয়া এতটাই চরম, যে বিজ্ঞানীরা ওই আবহাওয়ায় একটানা গবেষণা চালাতে পারেন না। ডিসেপশন অ্যাইল্যান্ড আন্টার্কটিক বলে একটি একটি এলাকাই ওই দ্বীপ ও আগ্নেয়গিরির উপর নজর রাখে। মজার ব্যাপার এই ডিসেপশন আইল্যান্ড নিজেও কিন্তু একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ক্যালডেরা, যেখানে ১৯৭০ সালে শেষবার অগ্নুৎপাত হয়েছিল। এই আগ্নেয়গিরির উপর নজর রাখার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি যন্ত্র মোচায়েন করা রয়েছে। যেখান থেকে পাওয়া ডেটা অনুসারেই সামান্য গবেষণা করা গিয়েছে এই মাউন্ট ইরেবাস আগ্নেয়গিরি নিয়ে।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে আশ্চর্য ‘সোনালি ডিম’! যেসব সামুদ্রিক রহস্যের কুলকিনারা পায়নি বিজ্ঞান

সেই মাউন্ট ইরিবাসই নাকি ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে সোনা নির্গত করে প্রায় প্রতিদিন। এই সোনার ধুলো ছড়িয়ে পড়ে মাউন্ট ইরেবাস থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসে। এখানকার বাতাস পরীক্ষা করে সোনার সন্ধান মিলেছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা। শুধু ভারতেই নয়, ভারতের মতো বহু দেশেই সোনা সৌভাগ্যের প্রতীক। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান এই ধাতুটির কদরই আলাদা। প্রায় প্রতিদিনই গহনার সোনার দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অথচ অ্যান্টার্কটিকার এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি প্রতিদিন বাতাসে হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো সোনা। সেই সব সোনা সংগ্রহ করে ফুলে ফেঁপে উঠবে কোনও দেশ, তেমন সম্ভাবনা নেই। সারা বছর বরফে আচ্ছাদিত এই মাউন্ট ইরেবাস আগ্নেয়গিরির নাগাল পাওয়া মুখের কথা নয় মোটেও। পৃথিবীর এক অন্যতম আশ্চর্য হয়েই প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার সোনা বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে মাউন্ট ইরেবাস।

More Articles