মা আর সন্তানের নাড়ির স্বরে দেহের সংজ্ঞা লেখে ঋতুপর্ণর চিত্রাঙ্গদা

Rituparno Ghosh: ঋতুপর্ণ বলছেন, রাতে ঘরে আলো জ্বেলে রেখে দিই, যদি মা আসে, পায়ে যেন হোঁচট না লাগে মা-র!

এই জন্মের প্রথম শরীর কে? কার থেকে শিখেছিলাম দেহের সংজ্ঞা? আমার মা!

মায়ের শরীরের অংশ হয়ে আমরা বহু বহু দিন থাকি বলেই কি সবচেয়ে অন্তরঙ্গ মনে হয় মা-কে? আমার সামান্য সংবেদন যেমন আমি গর্ভে থাকাকালীন মা জাদুবৎ বুঝে যেত, তেমনই যেন এখনও মা বুঝবে আমার সমস্ত ইচ্ছেকে— এ যেন আমাদের প্রথম অধিকার!
প্রথম মানে? শুরু। প্রারম্ভ। সংগীতে, স্বর-ধনির ভাষায় যাকে ‘সা’ বলি আমরা। ‘আত্মীয়স্বজন’ কবিতাগ্রন্থের ভূমিকায় জয় গোস্বামী একবার লিখেছিলেন, ‘মা-ই তো আমার ‘সা’। বাকি পৃথিবী তৈরি হল অন্য অন্য স্বরগুলি দিয়ে। জগৎকে যদি সংগীত-ই ধরি, খুব ভুল হয় না তো?’

না, ভুল হয় না। এই সমস্ত স্বরের মধ্যে ভ্রমণ করে প্রথম স্বরের দিকে, ‘সা’-এর দিকে, মায়ের দিকে— অর্থাৎ আমার জন্মগৃহের দিকে কখনও-কখনও ফিরে তাকায় মন। ক্লান্ত, দীর্ণ, একাকি মন!

‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-তে শুরুর থেকেই আমরা দেখতে পাই অভিরূপ সেন (ঋতুপর্ণ ঘোষ অভিনীত চরিত্র) তার পরিচালনার কাজ, বাসু-র সঙ্গে প্রেমসম্পর্ক, চপল ভাদুড়ীর জীবন— এই সমস্ত কিছুর মধ্যে দিনের বিভিন্ন মুহূর্তে বারবার মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতম তথ্য যেমন সে নিজের মাকে জানাচ্ছে, তেমনই, যখন বাসুর স্ত্রী শুটিং ফ্লোরে এসে নিজের অন্তঃসত্তা হওয়ার ঘটনাটি বলছে, তখনও অভিরূপ নিজের মাকে অনুরোধ করছে, তার মা যেন তাকে দূর থেকে শুভ-ইচ্ছে পাঠায়। কারণ, বাসু ও তার স্ত্রীর মতোই অভিরূপও চায় এই নতুন প্রাণকে আনন্দে স্বাগত জানাতে। অভিরূপের সঙ্গে তার মায়ের মানসিক অবস্থানের নিবিড়তা এখানে লক্ষ্যণীয়।

আরও পড়ুন- নিষিদ্ধ জন্মের অভিজ্ঞতাভূমিতে মিশে যান ঋতুপর্ণ ও চপল ভাদুড়ী

এরপরই, ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’-এও অর্ণবের (ঋতুপর্ণ ঘোষ অভিনীত চরিত্র) সঙ্গে তার মায়ের সংযোগচিত্র একটি স্বল্প ফোন কলে খুঁজে পাই আমরা। এমনকী, তার মৃত প্রেমিকের মায়ের সঙ্গে অর্ণবের বন্ধুত্বও সেই মাতৃত্ব-সংযোগের একটি ছায়াসূত্র যেন রেখে যেতে চায়।
আমরা জানি, এই দু'টি ছবিরই পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ নন। যদিও, ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’-এর চিত্রনাট্য ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা। কিন্তু এই দু'টি ছবিতেই মায়ের সঙ্গে প্রধান চরিত্রটির যে অসম্ভব নিবিড় সম্পর্ক, তা আমাকে একবার ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করে।

ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখায় বারংবার তাঁর মায়ের কথা আমরা দেখতে পেয়েছি। ২৮ অক্টোবর, ২০০৭, মায়ের মৃত্যুর পর ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর ‘রোববার’-এ লিখছেন:

মা বলত আমাকে, ‘আমি আসব তোর কাছে । ঠিক আসব, দেখিস। আর যদি না আসি, বুঝবি আত্মা আসতে পারে না।’ আমি বিশ্বাস করেছিলাম মা-র কথা। মা তো কখনও মিথ্যে কথা বলত না। সবাই খুব অবাক হয়েছিল দেখে যে, যতটা ভেঙে পড়ার কথা আমার, তার তুলনায় আমি যেন অনেক বেশি শক্ত। আসলে মা-র ওই সান্ত্বনাটাই ছিল আমার শক্তি। জানতাম, মা যখন বলেছে ঠিক আসবে। আমাদের আবার দেখা হবে, কথা হবে। মা তো আমাকে ‘আসি’ বলেও গেল না। তা কেমন করে হয়? রাতের পর রাত জেগে থেকেছি আমি। যদি মা আসে। মা তো! এসে যদি দেখে আমি ঘুমিয়ে আছি, হয়তো ডাকবে না। চলে যাবে।

…অনন্ত পূর্ণিমা পার হয়ে গিয়েছে, মা। নিশ্চন্দ্র নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মতো। জ্যোৎস্নারাতে সবাই যখন উৎসবমগ্ন— আমি সত্যিই জেগে আছি ঠায়, এক অনন্ত প্রতীক্ষায়।

অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ভাল করে হাঁটতে পারত না মা। পা টেনে টেনে হাঁটত। দূরে বারান্দা থেকে শুনতে পেতাম চটির খসখস আওয়াজ।

আজও মাঝরাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। ঘরের একটা আলো জ্বেলে দিই— অন্ধকারে মা যাতে হোঁচট না খায়। ঘরের দরজাটা হালকা করে ভেজিয়ে রাখি, ভাবি রগা হাতে দরজা ঠেলে ঢুকতে যদি মা-র কষ্ট হয়!

এখান থেকে আমরা একটি আভাস পাই যে কেমন সুদূর ছিল ঋতুপর্ণ ও তাঁর মায়ের সম্পর্ক! এই লেখাটির থেকে প্রায় দু-বছর এগিয়ে এসে, ১৯ জুলাই, ২০০৯ সালে প্রকাশিত ঋতুপর্ণ ঘোষের আরেকটি লেখার সামনে দাঁড়াতে চাইব। সমাজ ও সারা পৃথিবীতে ঘটে চলা নানা কিছুর মধ্যেই, সে লেখাতেও আচমকাই এসে পড়েছে তাঁর মায়ের প্রসঙ্গ। ঋতুপর্ণ লিখছেন:

৩৭৭ ধারা নিয়ে মাতামাতি অনেক স্তিমিত হয়ে এসেছে। তাঁরা এখন অন্য জিনিস নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের ক্যামেরায় তাই হয়তো ধরাই পড়ল না আরেকজন প্রৌঢ়ার ছবি— আমার মা।

কিন্তু আমি মনে-মনে জানি, অন্তরীক্ষ বলে যদি কোনও নিঃসীমা পথ থাকে সেখানে ক্লিষ্ট পায়ে অশক্ত শরীরে দুর্বল হাতে PROUD MOTHER প্ল্যাকার্ড নিয়ে হেঁটে চেলেছে আমার মা।

আমার সব নিভৃত নিঃসঙ্গ বিজয়মিছিলের সঙ্গী!

যে কোনও আর্টিস্টের ক্ষেত্রেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও তাঁর শিল্পজীবন কখনও-না-কখনও একাকার হয়ে যায়। প্রশ্ন জাগে, ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষের দিকের এই ছবিগুলিও কি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন মাতৃনির্ভরতার তীব্রতায় ভেসে উঠেছে? মৃত্যুর কিছু দিন আগে, লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনফারেন্সে ঋতুপর্ণ ঘোষকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘what do you think is new in your cinema or what is newness for you at this point of time?’ ঋতুপর্ণ জানিয়েছিলেন, ‘creating a friendship with death.’

আরও পড়ুন-ভিন্ন যৌনতার সহজাত একত্রবাস: ঋতুপর্ণের ‘বাড়িওয়ালি’

‘creating a friendship with death’ কথাটির মানে আসলে কী? ওই যে ঋতুপর্ণ বলছেন, রাতে ঘরে আলো জ্বেলে রেখে দিই, যদি মা আসে, পায়ে যেন হোঁচট না লাগে মা-র! তিনি মনে মনে দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর ভিন্ন যৌনতার গর্বিত পরিচয় নিয়ে, অন্তরীক্ষে PROUD MOTHER-এর প্ল্যাকার্ড হাতে হেঁটে চলেছে মা এবং তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন, মা-ই তাঁর ‘সব নিভৃত নিঃসঙ্গ বিজয়মিছিলের সঙ্গী!’
ঠিক এইখান থেকে আজকে আমি প্রবেশ করতে চাইব ‘চিত্রাঙ্গদা’-য়। ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’-এর পর, ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ও অভিনীত এই ছবিটিতে পৌঁছে আমরা প্রত্যক্ষভাবে মা ও সন্তানের মুখোমুখি সংলাপ শুনতে পেলাম। ওই দু'টি ছবিতে যা ছিল একপাক্ষিক নির্ভরতার চরিত্র-সূত্র, সেই ‘মা’ শব্দটিই এখানে এবার দেখা দিল নিজের রক্তমাংস-বক্তব্য নিয়ে। ‘চিত্রাঙ্গদা’-য়, রুদ্র ও তার মায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে। এখানে তার মধ্যে থেকে দু'টি দৃশ্যের উল্লেখ করতে চাইব।

খাওয়ার টেবিল। বাবা-মা ও রুদ্র বসে আছে। এখানে ইচ্ছে করেই আমি ‘বাবা-মা’ কথাটিকে একত্রে হাইফেন বদ্ধ রেখে রুদ্রকে পাশে একা রাখলাম। কারণ সে যে সিদ্ধান্ত জানাতে চাইছে, সেখানে সে একা-ই। দৃশ্যটি, এমন:

রুদ্র। আমি একটা কথা বলব তোমাদের, প্লিজ একটু ঠান্ডা মাথায় শোনো।
বাবা। বলো!
রুদ্র। আমি যদি অন্য কোথাও গিয়ে থাকি, তোমাদের অসুবিধে হবে?
মা। কেন, কোথায় যাবে তুমি?
রুদ্র। সেটা ইম্পরট্যান্ট নয়। মানে, ধরো অন্য কোথাও! কোনও প্রবলেম হবে?
বাবা। আমরা তো তোমার কোনও কাজেই বাধা দিই না। এখানে তাহলে কী প্রবলেম?
রুদ্র। আমার কোনও প্রবলেম নেই। তোমাদের প্রবলেম হতে পারে, তাই বলছি।
বাবা। আমাদের আবার নতুন করে কী প্রবলেম হবে?
রুদ্র। হতে পারে বাবা…
মা। তুমি কি পার্থ-র কথা বলছ নাকি? ওর সঙ্গে?
রুদ্র। আমি সেরম ভাবছিলাম। আমি এইজন্য বলছিলাম অন্য জায়গায় গিয়ে থাকি, তোমাদের তাহলে…
মা। কী করে বুঝবে তুমি? বিয়ে করোনি, সংসার করোনি… সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের কী চিন্তা, তার কী মানে, কী করে বুঝবে তুমি বলো তো!
রুদ্র। আমি জানি মা, আমি সারাজীবন তোমাদের খুব ভুগিয়েছি। I have been a perennial embarrassment, তাই বলছিলাম অন্য কোথাও গিয়ে থাকি।
মা। বোঝো না, না তুমি? বুঝতে পারছ না [রুদ্র-র বাবার দিকে তাকিয়ে] ওই ছেলেটা ওকে ইউজ করছে। জাস্ট তোমার এই লোনলিনেস-এর সুযোগ নিচ্ছে ছেলেটা, এটা তুমি বুঝতে পারছ না খোকন?
রুদ্র। কোনটা ভালো মা? বলো? সারাজীবন লোনলি থাকা? না ইভেন ফর আ ওয়াইল একটা কম্পেনিয়ান পাওয়া?
মা। চলে যাবে তো, আবার সে চলে যাবে। আবার তুমি কষ্ট পাবে। কী ভাবছ, এটা কি পার্মানেন্ট?
রুদ্র। ওয়াটস পার্মানেন্ট মা? তুমি বলো কোনটা পার্মানেন্ট? এই যে আমাদের শরীর, এটা পার্মানেন্ট? এমন তো হতে পারে ও মরেও যেতে পারে, আমাকে সেই একলাই থাকতে হবে সারাজীবন।
বাবা। একলা থাকতে হবে কেন? অনেকবার তো বলেছি, ডাক্তার দেখাও, চিকিৎসা করাও, দরকার হলে কাউন্সিলিং করাও। দেখবে, মে বি ইটস নট সো ডিফিকাল্ট টু গেট ব্যাক টু নরমাল লাইফ!
রুদ্র। আমি আজ ডাক্তারের কাছ থেকে আসছি বাবা। নেক্সট উইক থেকে আমার ট্রিটমেন্ট শুরু। ওঁরাও কাউন্সিলিংয়ের কথা বলেছিলেন, আমি ওটা রিফিউজ করেছি।
বাবা। থ্যাঙ্ক গড, সুমতি হয়েছে তোমার। ইন দ্যাট কেস, ওয়াট ইজ ইওর প্রবলেম?
রুদ্র। আমায় হাসপাতালে গিয়ে থাকতে হবে মাঝেমাঝে। ধরো, মাস ছয়েকের জন্য।
মা। হাসপাতালে কেন?
রুদ্র। আমার কতগুলো অপরেশন হবে।
মা। কীসের অপরেশন খোকন?
রুদ্র। জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি।
মা। এর মানে কী গো? [রুদ্র-র বাবার দিকে তাকিয়ে]
রুদ্র। আমি সেক্স চেঞ্জ করাচ্ছি মা। ইফ অল গোজ অয়েল, আই উইল বিকাম আ উইমেন ইন সিক্স মান্থস। তাই বলছিলাম আমি অন্য জায়গায় গিয়ে থাকি।

এই শেষ বাক্যটি বলার সময়, বা বলার পরের মুহূর্তেই, রুদ্র নিজের কাতর হাতটি মায়ের দিকে এগিয়ে দেয়। তার মা, হাতটি সরিয়ে নেয়। এখানে অভাবনীয়ভাবে ঋতুপর্ণ দু'টি সূক্ষ্ম সংকেতের তাৎপর্য বোধহয় রাখতে চেয়েছিলেন। রুদ্র-র মা, একজন নারী। বাবা, একজন পুরুষ। এটাই তাদের জন্মগত যৌনপরিচয়। রুদ্র পুরুষ থেকে নারী হচ্ছে। ‘হচ্ছে’ মানে সে ‘পুরুষ’ শব্দটির দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে, কিন্তু ‘নারী’ শব্দটির দ্বারে এখনও প্রবেশ করেনি। দুয়ের মধ্যে, এক অদৃশ্য যাতায়াতপথে এখন তার অবস্থান।

এখানে মুগ্ধ হই একটিই কারণে, রুদ্রর বাবা রুদ্রর নারীমনকে মেনে নিতে পারে না তা প্রথম থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু আমরা দেখেছি, রুদ্রর মা তার সহমর্মী ছিল। যখন সেক্স চেঞ্জ করানোর কথা বলল রুদ্র, তখন তার মা সেটা আর মেনে নিতে পারল না। এই মেনে না নিতে পারার মধ্যে— একজন নারী, আর একজন পুরুষ থেকে নারী হতে চাইছে— তাকে ‘নারী’ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার সামাজিক মনকেও যেন দেখতে পাওয়া যায়। তখন রুদ্র চরিত্রটির মতো মানুষদের জন্য ‘প্রান্তিক’ শব্দটি আরও বেশি করে সহায়হীনভাবে জেগে ওঠে।

আরও পড়ুন-স্মৃতি আসলে কার? ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’-এ যে উত্তর খুঁজেছেন ঋতুপর্ণ

এর পাশাপাশি, আরও একটি কারণ বোধহয় ওই ‘হাত সরিয়ে নেওয়ার’ দৃশ্যটির মধ্যে তাকিয়ে রয়েছে। আমার শরীরকে কাটাছেঁড়া করার অধিকার কেবল আমার একার হাতে নেই। কারণ, এই শরীরটা আমার জন্মদাত্রীরও শরীর। এই চিন্তাকে মাথায় রেখে উল্লেখ করতে চাইব ‘চিত্রাঙ্গদা’ আরেকটি দৃশ্য। হাসপাতাল থেকে কয়েকটি অপরেশনের পর ফিরে এসেছে রুদ্র। শুয়ে আছে নিজের ঘরে। মা এসেছে কথা বলতে। দৃশ্যটি এমন:

মা। ওরা কী কী করল?
রুদ্র। কারা?
মা। ডাক্তাররা?
রুদ্র। কতগুলো অপরেশন করল।
মা। জানি তো। এবার কী কী করল?
রুদ্র। কী করবে মা জেনে? ওরা জাস্ট একটা লম্বা প্রসেসকে কন্ডাক্ট করার জন্য এগুলো করছে, এগুলো জেনে তোমার কোনও লাভ আছে?
মা। আমি জানব। তুমি থেকে আমার জন্মেছ খোকন। ওই শরীরে আমার অধিকার আছে। তেল মাখিয়ে, স্নান করিয়ে, পাউডার লাগিয়ে একদিন ওই শরীরকে আমি বহু যত্ন করেছি। আজ যদি ইচ্ছেমতো ওই শরীরটা কাটাছেঁড়া করো, সেটা আমি জানতে চাই।

রুদ্রর মায়ের এই বক্তব্যের উলটো দিকে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কোনও প্রত্যুত্তর ছিল না রুদ্রর কাছে। আমাদের কাছেও নেই। ‘মা’ শব্দটিকে বহুবার নিজের জীবনে এবং শিল্পে এক আশ্চর্য মহিমায়, নিবিড় আশ্রয় হিসেবে রোপণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ। লীলা মজুমদার লিখেছিলেন, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হল আমার মায়ের বাড়ি। ঋতুপর্ণ ঘোষের খুব পছন্দের লাইন ছিল এটি। কেন? তা তাঁর লেখা ও শেষের দিকের ছবিগুলি এক নিবিড় আশ্রয়ের তরুছায়ার আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে যায়!

More Articles