ভুল অর্ডার পরিবেশন করাই রীতি! জানেন কোথায় আছে এমন আজব রেস্তোরাঁ?
The restaurant of mistaken orders : ভুল অর্ডার পরিবেশনই আসল ইউএসপি জাপানের এই রেস্তোরাঁয়, কেন এমন অভিনব ভাবনা মালিকের?
বললেন এক, আর এল সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু! এ যেন পুরো উলোট পুরাণ! ব্যবহারিক জীবনে এ ঘটনা ঘটলে মেজাজ বিগড়ে যায়, তার ওপর যদি এমনটা হয় কোনও রেস্তোরাঁর টেবিলে, তবে তো কেলেঙ্কারি! ধরা যাক, ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের সঙ্গে খেতে গিয়েছেন রেস্তোরাঁয়। চেয়ার টেনে বসেই হাতে তুলে নিলেন মেনুকার্ড। তারপর অনেক শলা পরামর্শ করে কোনও খাবার ঠিক করে অর্ডার দিলেন। কিন্তু আসল ঘটনাটা ঘটল এর কিছুক্ষণ পরেই। পরিবেশনের সময় দেখলেন, যা অর্ডার দিয়েছিলেন তার বদলে সম্পূর্ণ অন্য একটি পদ পরিবেশন করা হয়েছে সবার টেবিলে। আর আপনার অর্ডার করা পছন্দের পদটিই কিনা তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছেন পাশের টেবিলের ভদ্রলোক! ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে আর কে আটকায় আপনাকে! মেজাজ সপ্তমে চড়িয়ে রে রে করে তেড়ে যাবেন নিশ্চয়ই? কিন্তু জানেন কি এই বিশ্বের একটি দেশে রয়েছে এমন এক রেস্তোরাঁ যেখানে ভুল খাবার পরিবেশন করাই রীতি!
সাজানো গোছানো রেস্তোরাঁ, চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে আপ্যায়ন, কোথাও কোনও খামতি নেই। টেবিলের ওপর রয়েছে মেনুকার্ডও। কেবল অর্ডার করা খাবারের আশা করে লাভ নেই এখানে। যা অর্ডার করবেন, অবশ্যম্ভাবী আসবে তার থেকে আলাদা কিছুই। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন এ নিয়ে মোটেই কোনও অভিযোগ করেন না রেস্তোরাঁর অতিথিরা। বরং এক খাবার অর্ডার করে অন্য খাবার চেখে দেখার বিষয়টিই এই দোকানের ইউ.এস.পি।
আরও পড়ুন - খোদ ওয়ারেন হেস্টিংসের পছন্দ ছিল এই পদ, ডায়েট যুগেও কেন ভরসার নাম গরিবের ‘পান্তা’
জাপানে রয়েছে এমনই এক অভিনব রেস্তোরাঁ, যেখানে এক খাবার অর্ডার করে অতিথিরা অপেক্ষা করেন সম্পূর্ণ অন্য কোনও অজানা ডিশের জন্য। রেস্তোরাঁটির নাম ‘দ্য রেস্তোরাঁ অফ মিসটেকেন অর্ডারস’। নামের মধ্যেই রয়েছে রহস্যের গন্ধ। ‘মিসটেকেন অর্ডারস’, অর্থাৎ অর্ডার দিলে তা ভুল হওয়াই আবশ্যক। আজব রীতির এই রেস্তোরাঁটিতে সবসময় অতিথিদের ভিড় উপচে পড়ে। অজানা খাবার চেখে দেখার জন্যই যে এই ভিড় তা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
আসলে এই রেস্তোরাঁর কর্মীদের সকলেই প্রায় এসে পৌঁছেছেন জীবনের উপান্তে। বয়স পেরিয়েছে অনেকখানি। তার ওপর প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া কিংবা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের প্রত্যেকেই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসা শাস্ত্রে, ডিমেনশিয়া হল এমন একটি অসুখ, যাতে আক্রান্ত মানুষ অতি সামান্য জিনিসও মনে রাখতে পারেন না। ফলে কর্মীরা স্বাভাবিক ভাবেই যে দেওয়া অর্ডার গোলমাল করে ফেলবেন এমনটা জেনেই এই রেস্তোরাঁয় আসেন অতিথিরা। খাবারের অর্ডার নেওয়ার পরেই কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেমালুম ভুলে যান, আসলে কোন ডিশ অর্ডার করা হয়েছিল। আর সেই কারণেই পরিবেশন করার সময় বদলে যায় অর্ডার।
আরও পড়ুন - ৩২ টাকায় মাটন বিরিয়ানি, রুমালি রুটির দাম মাত্র ১ টাকা, যে মেনুকার্ড দেখে অবাক হবেন আপনিও
রাগারাগি নয় বরং সারপ্রাইজ ডিশের অপেক্ষায় থাকাই অতিথিদের লক্ষ্য এখানে। জাপানের অভিনীত এই রেস্তোরাঁটির মালিক হলেন, শিরো ওগুনি নামের এক ব্যক্তি। এমন আজব ভাবনার তাঁর মাথায় কীভাবে এল, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছেন। শিরো জানিয়েছেন, আসলে জাপানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে একটা বড় অংশের মানুষ বয়স্ক। শুধু তাই নয় এঁদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার প্রকোপও দিনদিন বাড়ছে বলেই জানাচ্ছে সমীক্ষা। আর এই মানুষগুলোকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতেই এমন উদ্যোগের কথা মাথায় আসে শিরোর। ২০১৭ সালে পথচলা শুরু হয়েছিল এই ‘দ্য রেস্তোরাঁ অফ মিসটেকেন অর্ডারস’-এর।
যদিও জানা গেছে, সব সময় যে ভুল খাবারই পরিবেশন করা হয় অতিথিদের তাই নয় সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে অতিথিদের ভুল খাবার পরিবেশন করা হয়। যদিও এ নিয়ে অতিথিদের মধ্যে কোন অভিযোগ নেই বলেই দাবি রেস্তোরাঁর মালিকের। এর পিছনে রয়েছে রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদ-যশ। এই রেস্তোরাঁ সমস্ত খাবারে খুশি অতিথি অতিথিরা ফলে অর্ডার দেওয়া ডিশ বদলে গেলেও বিশেষ সমস্যায় পড়েন না কেউই। প্রথম দিকে ভাবতে অবাক লাগলেও সময় বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিক কতটা সার্থক শিরোর এই অভিনব প্রয়াস। প্রাথমিকভাবে একটিমাত্র রেস্তোরাঁ দিয়ে পথ চলা শুরু করলেও গত ছয় বছরে এই রেস্তোরাঁর সাফল্যই গোটা দেশজুড়ে আরও তিনটি শাখা তৈরি করতে পথ সুগম করেছে। সারা বিশ্বের কাছেই এটি একটু উদাহরণ স্বরূপ!