বাংলা থেকে বিশ্ব- ইতিহাসের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা যা আজও ভুলতে পারেনি কেউ
পশ্চিমবঙ্গের গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে ফ্রান্সের সেন্ট-মিশেল-ডি-মরিয়ানের রেল দুর্ঘটনা, বিশ্বের ইতিহাসে এরকম রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়।
বারবার বহু ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। পশ্চিমবঙ্গের গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে ফ্রান্সের সেন্ট-মিশেল-ডি-মরিয়ানের রেল দুর্ঘটনা, বিশ্বের ইতিহাসে এরকম রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক বাংলা থেকে বিশ্বের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এরকমই কিছু ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনার খণ্ডচিত্র।
প্রথমে নজর রাখা যাক বাংলার দিকে
গাইসাল রেল দুর্ঘটনা (নিহত - ২৮৫)
২ আগস্ট ১৯৯৯ তারিখের গভীর রাতে ঘটা এই রেল দুর্ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস এর সবথেকে বড় রেল দুর্ঘটনা হিসেবে এখনও মনে রাখে মানুষ। গভীর রাতে ভুল সিগন্যাল এর কারণে উত্তর দিনাজপুরের বিহার সংলগ্ন সীমানা অঞ্চলের স্টেশন গাইসালে একই লাইনে চলে এসেছিল অবধ আসাম এক্সপ্রেস এবং ব্রহ্মপুত্র মেল। উত্তর দিনাজপুরের সীমানা সংলগ্ন স্টেশনে উঠে গিয়েছিলো পূর্ব রেলওয়ে এর ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। এই স্টেশনে সাধারণত কোন বড় এক্সপ্রেস দাঁড়ায় না, তাই ট্রেন দুটির গতিও ছিল প্রবল। প্রায় ১২০ কিলোমিটার থেকে আসতে থাকা দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। অবধ এক্সপ্রেসটি কার্যত ব্রহ্মপুত্র মেল এর উপরে উঠে এসেছিল। এই গাইসাল রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৮৫ জনের। আহত হয়েছিলেন ৩০০ এরও বেশি।
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা (নিহত - ১৪১)
২৮ মে ২০১০, পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহা এবং খেমাশুলি স্টেশনের মাঝে আচমকাই লাইনচ্যুত হয়ে যায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। যে সময় এই লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে, সেই সময় উল্টো দিকে একই লাইন ধরে ছুটে আসছিল একটি পণ্যবাহী ট্রেন। দুটি ট্রেনের একেবারে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা যান ১৪১ জন। শোনা যায় এই ট্রেন দুর্ঘটনায় হাত ছিল মাওবাদীদের। মাওবাদী দৌরাত্ম্যের সময়ে ঘটা এই ঘটনায় তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছিল একাধিক গুরুতর অভিযোগ। এখনো এই জ্ঞানেশ্বরী কান্ডের বহু যাত্রীর খোঁজ মেলেনি। তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কেউই জানে না।
জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা (নিহত - ৪৫)
১ জুন ১৯৯৫, কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। কয়লা বোঝাই একটি মালগাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এই ট্রেনের। সেদিন জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেসের ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৫ জন। আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩০।
এবার আসা যাক বিশ্বের কিছু ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার তালিকায় -
শ্রীলঙ্কার 'কুইন অফ দ্যা সি' রেল দুর্ঘটনা (নিহত - অন্তত ১৭০০)
পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটা সবথেকে বড় রেল দুর্ঘটনা শ্রীলঙ্কার কুইন অফ দ্যা সি রেল কাণ্ড। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর, বক্সিং ডে'র দিন শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো থেকে ১৮০০ এর অধিক যাত্রী নিয়ে মাতারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল 'কুইন অব দ্য সি' এক্সপ্রেস। ট্রেনটির যাত্রাপথে ছিল ভারত মহাসাগর। আর সেই বছর ভারত মহাসাগরে ঘটেছিল ভয়াবহ সুনামি। ট্রেনটি যখন পেরালিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন ট্রেনে থাকা যাত্রীরা সমুদ্রের উপকূল থেকে দানবাকৃতি একটি ঢেউ তাদের দিকে ছুটে আসছে দেখেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ঢেউ ট্রেনের বগিগুলির উপরে আছড়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই কেঁপে ওঠে ওই ট্রেন এর সমস্ত বগি। একের পর এক ধাক্কায় ওই ঢেউ বিশালাকৃতির ট্রেনটিকে ফেলে দেয় একেবারে প্রবল জলস্রোত এর মাঝখানে। জলের প্রকাণ্ড ঢেউয়ের দাপটে ট্রেনের সমস্ত বগি, ইঞ্জিন সব একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ১৮০০ জনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত প্রাণ ধরে রাখতে পেরেছিলেন মাত্র ১৫০ জন। ভারত মহাসাগরের ডিসেম্বর মাসের হিমশীতল জলে প্রাণ হারান ১৭০০ জনের কাছাকাছি মানুষ। এই ট্রেন দুর্ঘটনায় শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। চরম অব্যবস্থার অভিযোগ ওঠে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে। দুঃখের বিষয় হল, এই ট্রেন দুর্ঘটনায় মাত্র ৭০০ জনের দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। ১০০০ জনের দেহ তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিল শ্রীলংকা সরকার।
১৯৮১ বিহার ট্রেন দুর্ঘটনা (নিহত - ৫০০ থেকে ৮০০)
বিশ্বের অন্যতম বড়ো রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য বিহারে। ১৯৮১ সালের জুন মাসের ৬ তারিখের ঘটনা। প্রতিদিনের মতো মানসি এবং সাহারাসা স্টেশনের মধ্যে দিয়ে ১০০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে ৯ বগি বিশিষ্ট একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। আচমকাই বাগমতী নদীর উপরে ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেন ইঞ্জিনিয়ার হঠাৎ একটি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। আর এই ব্রেকের কারণেই ট্রেনটির ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়ে সরাসরি বাগমতী নদীতে গিয়ে পড়ে।
এই ঘটনায় ৫০০ থেকে ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উদ্ধারকারী টিম এসে ৫ দিনে মাত্র ২০০ জনের মত মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। বাকিরা বাগমতী নদীর জলের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। তবে এই ট্রেনের দুর্ঘটনার কারণ ঠিক করে বলা যায় না। অনেকে মনে করেন এই ট্রেনের ব্রেক ফেল করা, অথবা ব্রেক কষার কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল। শোনা যায়, যে সময় ট্রেনটি ব্রিজ থেকে আবার নিচের দিকে নামছিল, সেই সময় লাইনের উপর একটি গরু চলে এসেছিল। যেহেতু ট্রেনের ইঞ্জিন ড্রাইভার একজন হিন্দু ছিলেন, তাই তিনি 'পবিত্র' প্রাণীটিকে মারতে চাননি, বরং ব্রেক কষে গরুটিকে বাঁচাতে গিয়ে ভয়ঙ্কর বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সাইক্লোন এবং মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।
ফ্রান্সের মরিয়ান উপত্যকার ট্রেন দুর্ঘটনা (নিহত - ৬৭৫)
ফ্রান্সের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবথেকে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সের মরিয়ান উপত্যকার রেল দুর্ঘটনা। তবে, এই দুর্ঘটনাটি ঘটে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। প্রায় ১০০০ সৈন্য নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছিল ইতালি থেকে। কিন্তু মরিয়ান উপত্যকার কাছে আচমকাই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। জানা যায় অতিরিক্ত পরিমাণ যাত্রী নিয়ে এই ট্রেন নিজের গন্তব্যস্থলের দিকে যাচ্ছিল। অত্যধিক সংখ্যক যাত্রী এবং ১৯টি অতিরিক্ত বগি যোগ করার ফলে ওই ট্রেনের ওজন দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫২৬ টন।
ওই অঞ্চলটিতে লোকোমোটিভের ঘাটতির কারণে ওই ট্রেনের সাথে বেশ কিছু অতিরিক্ত বগি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম তিনটি বগির জন্য এয়ারব্রেক থাকলেও বাকি গুলোর জন্য শুধুমাত্র হ্যান্ড ব্রেক দেওয়া হয়েছিল, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল ওই ট্রেনের জন্য। পরোয়া না করেই ১৯টি বগি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল ওই ট্রেনের সাথে। কিন্তু উপত্যকা থেকে নিচে নামার সময় ঘটেছিল বিপত্তি। যতটা সম্ভব আস্তে আস্তে করেই চালক ট্রেনটিকে নিচে নামিয়ে আনছিলেন। সেই সময় গতি ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পরেই অতিরিক্ত বগির চাপের কারণে ওই ট্রেনের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ট্রেনের গতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পিছনের বগিগুলো ইঞ্জিনকে সামনের দিকে দ্রুত এগোনোর জন্য বাধ্য করছিলো, ফলে ট্রেনের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল চালকের হাতের বাইরে চলে যায়।
সেই সময় কোন ব্রেক কাজ করেনি। ট্রেনটির অনিয়ন্ত্রিত গতির জন্য ট্রেন লাইন থেকে পড়ে যায়। এই সময় ট্রেনের গতি ছিল প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা, যা সেই যুগের ট্রেনের ক্ষেত্রে ভাবাই যায় না। প্রথম বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল প্রায় ১০২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় গতিবেগে, যেখানে ট্রেনের সর্বাধিক গতিবেগ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।
ট্রেনের বগিগুলি তৈরি করাতে সেই সময় কাঠের ব্যবহার করা হতো। দুটি কাঠের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে অত্যধিক চাপে ব্রেক অত্যন্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। আর তার সঙ্গেই যুক্ত হয় সৈন্যদের সঙ্গে থাকা হ্যান্ডগ্রেনেডগুলি। গরমের জন্য হঠাৎ করেই ট্রেনের মধ্যে ফেটে যায় কিছু হ্যান্ড গ্রেনেড। ফলে, ট্রেনটিতে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। এই ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৬৭৫ জন সেনার। তারমধ্যে ১৩৫ জনের এতটাই খারাপ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল যে তাদেরকে আর শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি।
মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা ট্রেন দুর্ঘটনা (নিহত - অন্তত ৬০০)
এই ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে আরো একটি ছোট ইতিহাস জড়িত। ১৯১৩ সালে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সেস্কো মাদেরওকে হত্যা করার পরে যখন মেক্সিকোর রাজনীতির সব থেকে কালো অধ্যায় চলছে, সেই সময় প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ভিক্টোরিয়ানো হুয়েরতা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ভেনুসটিয়ানো কারানজা। তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান পাঞ্চো ভিলা।
১৯১৫ সালের জানুয়ারি মাসে পাঞ্চ ভিলার সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর দক্ষিণ মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা বেসের উপরে আবারও কর্তৃত্ব স্থাপন করে কারানজার সেনাবাহিনী। এই ঘটনাকে উদযাপন করার জন্য কারানজা তার পরিবার এবং সেনাবাহিনীকে গুয়াদালাজারাতে আমন্ত্রণ জানান। সেই মতো ১৯১৫ সালের ২২ জানুয়ারি কলিমা থেকে গুয়াদালাজারার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে একটি ২০ বগিযুক্ত বিশেষ ট্রেন, যাতে ছিলেন প্রায় ৯০০ জন যাত্রী। ট্রেনের সর্বাধিক ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি যাত্রী ছিলেন এই ট্রেনে। অনেকে এই ট্রেনের ছাদের উপরেও উঠে পড়েছিলেন।
এত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে একটি খাড়া ঢাল এর মধ্যে নিয়ে নিজের দিকে নামছিল ওই বিশেষ ট্রেন। ট্রেনের চালক ব্রেক বেশ ভালো করেই ধরেছিলেন কিন্তু, একটা সময় ট্রেন হঠাৎ ব্রেক ফেল করে। ঢাল অত্যন্ত খাড়া থাকার কারণে ট্রেনের গতি বেড়ে যায়। লাইন থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে গুয়াদালাজারার একটি গিরিখাতে নিমগ্ন হয়ে যায় ওই ট্রেন। যেহেতু ট্রেনের গতি অনেক বেশি ছিল, তাই ট্রেন থেকে দ্রুতগতিতে অনেক যাত্রী ছিটকে পড়ে গিয়েছিলেন, এবং সেখানেই অনেকে প্রাণ হারান। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ৬০০ জনের মত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ঘটনার খবর শুনে শোকাহত হয়ে আরও অনেকে আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও জানা যায়।
রাশিয়ার উফা ট্রেন দুর্ঘটনা (নিহত - ৫৭৫)
১৯৮৯ এর জুন মাসের একটি স্নিগ্ধ সন্ধ্যে, রাশিয়ার উরাল পর্বতের উফা এবং আশা অঞ্চল দিয়ে পাশাপাশি চলে যাচ্ছিল দুটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। দুটি ট্রেনে ৪০টি কামরায় ছিলেন প্রায় ১৩০০ জনের কাছাকাছি যাত্রী। ওই দুটি ট্রেনে শতাধিক শিশুও ছিল যারা ব্ল্যাক সি এর সমুদ্রসৈকতে ছুটি কাটিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছিল। কিন্তু এক লহমায় সব শেষ। উফা অঞ্চলের মোটামুটি ১০০ মিটার দূরত্বে ছিল একটি গ্যাস পাইপলাইন। সেই গ্যাস পাইপলাইনে ছিল একটি ছোট্ট ফাটল। আর সেই ছোট্ট ফাটলের কারণে ঘটে গিয়েছিল রাশিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস এর সবথেকে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, যা ইতিহাসে পরিচিত উফা ট্রেন দুর্ঘটনা হিসেবে।
হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠেন ট্রেনের মধ্যে থাকা যাত্রীরা। হতচকিত হয়ে যান সকলে। কিছু বোঝার আগেই বিস্ফোরণের তীব্রতায় একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন শতাধিক যাত্রী। হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থলে মৃতের সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৫৭৫। এই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৮০০ জন। যদিও এটা ছিল সরকারি হিসাব। বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৮০, যেখানে ১৮০ জন ছিল শিশু। যারা কোনও ক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের পরবর্তীতে ব্রেন টিউমার, ব্রেইন ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগ ধরা পড়েছিল, অনেকেই পুড়ে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে জীবন কাটিয়েছিলেন। এই ঘটনার স্মৃতি অনেকের কাছেই এখনো তাজা। স্বজন হারানোর বেদনায় অনেকেই এদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও শোনা যায়।