মাঝ রাস্তায় ডাকাতি, অনলাইনে গচ্চা তিন হাজার, মধ্যরাতে কতটা নিরাপদ কলকাতা?

Digital economy : কেবল শপিং মল অথবা গাড়ি ভাড়াই নয়, চোরেও আছে ফোন পে!

দুনিয়াদারির চক্করে জীবন এখন ডিজিটাল। চলতে ফিরতে স্ক্যান করাই এখন দস্তুর। একসময় পকেটে টাকার টান পড়লে ধার করতে হতো কিন্তু এখন সেসব অতীত। বিপদে পড়লেই পকেট থেকে ফোন ভার করে স্ক্যান করে সরাসরি দেওয়া যায় প্রয়োজনীয় অর্থ। দোকানে জিনিস কিনতে গেলেও অনেকেই খোঁজ করেন, ‘দাদা ফোন পে, গুগল পে হয় তো?’ বড় দোকানের লম্বা বিল থেকে শুরু করে মুদির দোকান, ফুচকার দোকানের দশ বিশ টাকার হিসেব মেলাতেও স্ক্যান করেছেন হামেশাই। কিন্তু এই যান্ত্রিক যুগে দাঁড়িয়ে কতটা ভালো আর কতটা কালোর মধ্যে দিনদিন পর্যবসিত হচ্ছি আমরা সেই খোঁজ রাখেন কি?

একটা সময় ছিল দূরপাল্লার ট্রেনে বাসে অথবা রাস্তায় প্রায়ই ছোট বড় চুরি ডাকাতি অথবা ছিনতাই এর কবলে পড়তেন অনেকেই। বাধ্য হয়েই মানুষ এখন রাস্তাঘাটে সোনার জিনিস পরে না, এমনকী নগদ অর্থও নিয়ে বেরোতে চান না অনেকেই। ডিজিটাল যুগের সুবিধা অবশ্য অনেক। টাকা না থাকলেও কার্ড আছে, নিদেন পক্ষে স্ক্যানার আছে। কিন্তু এই সুফল ভোগ করতে গিয়ে যদি ভাবেন চুরি ডাকাতি ঠেকাতে পারবেন তবে হয়তো সত্যিই ভুল করছেন। ডিজিটাল জমানায় চোরও ডিজিটাল। পকেটে টাকায় টান? কুছ পরোয়া নেই, ফোন পে করেই চোরের অ্যাকাউন্টে যাচিত অর্থ পাঠাতে হবে এমনটাই দাবি চোরের। শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি ঠিক এরকম একটি ঘটনারই সাক্ষী থেকেছে আগরপাড়া নিবাসী সৌত্রিক চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন - মৃত্যুর পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের কী হয়? ‘ডিজিটাল উইল’-এর যে তথ্য অজানাই

উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সৌত্রিক। পেশায় একজন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। নতুন বছরের ২ তারিখ রাতের ঘটনা। দক্ষিণেশ্বর থেকে ডানলপ ফেরার রাস্তায় হঠাৎ হাত দেখিয়ে দাঁড় করে দুই বাইক আরোহী। মুহূর্তের মধ্যে পকেট থেকে বের হয় বন্দুক। কিন্তু হায় রে চোর পকেটে তখন কানাকড়ি বিশেষ কিছুই নেই সৌত্রিকবাবুর। বাধ্য হয়েই পরনের জ্যাকেট আর পকেটে থাকা সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে নেয় তারা।

সৌত্রিক বাবুর সাফ কথা, “আমরা এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে চাকরি নেই, পড়াশোনাও প্রায় অস্তাচলে। তার ওপর আবার রাজনৈতিক দাদাদের সঙ্গে মাতামাতি সব মিলিয়ে এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা যাতে করে চোর, ডাকাত তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তাই সমাজ বদলানোর দায় না নিয়ে কেবল চোরের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।”

ডিজিটাল মাধ্যমে ৩০০০ টাকা হারিয়েও ডিজিটাল দুনিয়াকে দোষ দিতে নারাজ সৌত্রিক চক্রবর্তী। বরং তিনি জানালেন, “ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল পাকা হাতের কাজ নয়। কিন্তু খুব প্রয়োজন টাকার। মনে মনে ভাবলাম যদি ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা দিতে পারি তাহলে ওদের ধরার কাজ সহজ হবে পুলিশের পক্ষে। তাই নিজে থেকেই বলি ফোন পের কথা। জানতে পারলাম চুরি করলেও সেসব বিষয় চৌখস তারা। তাই স্ক্যান করে টাকা নিতে রাজি হয়ে গেল।”

উক্ত অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা নেই দেখে নাকি দর দস্তুরও করেছে চোর। গরীবের কষ্ট হয়তো ওরাও ভালোই বোঝে তাই ৩০০০ টাকাতেই সওদা করে। দুনিয়ার গোলকধাঁধাই তো তৈরি করে এদের মতো মানুষকে। এ দায় তো কেবল সেদিনের ওই দুটি চোরের নয়, বরং দায় বর্তমান সময়ের। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় সেইদিনই। ইতিমধ্যে ধরাও পড়েছেন একজন, নাম রাজীব গুই। জানা গিয়েছে মাত্র ছয় মাসের একটি ছেলেও রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন - গান্ধীছাপ নোটের দিন শেষ? ডিসেম্বর থেকেই আসছে ডিজিটাল মুদ্রা, কীভাবে করবেন ব্যবহার?

আগেই বল হয়েছে, পাকা হাতের চোর নয় তারা। তাহলে হয়তো দামী বাইক অথবা দামী ফোন নিতে চাইত তারা, দাবী সৌত্রিক চক্রবর্তীর। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই চুরির পথ বেঁচে নিয়েছিল তারা এখনও ধোঁয়াশা।থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় সেইদিনই। ইতিমধ্যে ধরাও পড়েছেন একজন, নাম রাজীব গুই। জানা গিয়েছে মাত্র ছয় মাসের একটি ছেলেও রয়েছে তাঁর।

আগেই বল হয়েছে, পাকা হাতের চোর নয় তারা। তাহলে হয়তো দামী বাইক অথবা দামী ফোন নিতে চাইত তারা, দাবী সৌত্রিক চক্রবর্তীর। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই চুরির পথ বেঁচে নিয়েছিল তারা এখনও ধোঁয়াশা। সময়ের সঙ্গে যান্ত্রিক হচ্ছি আমরা। সাইবার ক্রাইমের ঘটনা এখন হামেশাই শোনা যায়। তবে মাঝরাস্তায় ফোন পে দিয়ে স্ক্যান করে টাকা চুরি এ ঘটনা অভিনবই বটে। ভাবতে অবাক লাগে কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঘটছে এই ঘটনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই শিকেয়! আজ একটা বন্দুক কপালে ঠেকিয়ে যে ঘটনা ঘটছে, বলা তো যায় না কাল আরও দুটি বন্দুক দেখিয়ে একই ঘটনার সাক্ষী হবে কলকাতা। তিলোত্তমাকে বিদেশ বানাতে গিয়ে মর্মে মর্মে এত এত অন্ধকার জমা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মানুষের সত্যিই বড় অভাব।

More Articles