মোদির ‘সঙ্কল্পপত্র’-কে টেক্কা দিতে পারল ‘দিদির শপথ’? ভোটমুখী ইস্তেহারে এগিয়ে কারা?
Lok Sabha Election 2024: তৃণমূল কংগ্রেসের এবারে ইস্তেহারে একের পর এক উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। যাকে 'দিদির শপথ' বলে চিহ্নিত করেছে ঘাসফুল শিবির।
ভোটের বছর বলে কথা। বাংলা বছরের প্রথম দিনেই ইস্তেহারপত্র প্রকাশ করেছে বিজেপি। সেই ইস্তেহারপত্রে রয়েছে একাধিক প্রতিশ্রুতি। শিয়রে ভোট বলে কথা। সেই ভোটের বাজারে ইস্তেহারপত্রে যে একাধিক প্রতিশ্রুতি থাকবে, তাতে আর অবাক কথা কী। বিজেপির সেই 'সঙ্কল্পপত্র'-কে বিজেপির 'মাফিনামা' বলে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। ১৯ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে লোকসভা ভোট। তার ঠিক দু'দিন আগে নিজেদের ইস্তেহার সামনে আনল তৃণমূল কংগ্রেস।
জাতীয় দলের তকমা আগেই হারিয়েছে তৃণমূল। ফলে গোটা দেশ তোষনের দায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেই। আপাতত বাংলার মুখের দিকে তাকিয়েই ভোটের আগে ইস্তেহারপত্র প্রকাশ করেছে ঘাসফুল শিবির। বুধবার বিকেলেই প্রকাশ্যে এসেছে সেই ইস্তেহারপত্র। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থেকে তিন কোটি লাখপতি দিদি তৈরির লক্ষ্য, নারী সংরক্ষণ, কৃষক-জেলেদের উন্নতি থেকে শুরু করে এক জাতি, এক নির্বাচণের প্রতিশ্রুতি। কী নেই বিজেপির ইস্তেহারে। তৃণমূল নিজেদের ইস্তেহারে বিজেপিকে জবাব দিতে পারল কতটা?
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বলছেন, এবার তৃণমূলকে দু'নম্বরে ঠেলে বাংলায় শীর্ষে উঠে আসবে বিজেপি। পিকের সেই দাবি সত্যিই ফলতে চলেছে বাংলায়। সে নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বাংলায় কি সত্যিই পিছিয়ে পড়বে তৃণমূল? অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে নাকানিচোবানি খাওয়া বিজেপিকে ইস্তেহারে কতটা মাত দিতে পারল ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল কংগ্রেসের এবারে ইস্তেহারে একের পর এক উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। যাকে 'দিদির শপথ' বলে চিহ্নিত করেছে ঘাসফুল শিবির। মোট দশটি শপথের কথা বলা হয়েছে সেই ইস্তেহারে। ভোটমুখী বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের অস্ত্র হতে চলেছে সেগুলিই।
আরও পড়ুন: বাংলার একপেশে রাজনীতি বিজেপিকে জায়গা করে দিল । মুখোমুখি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
শ্রমিকদের জন্য বর্ধিত আয়ের কথা বলা হয়েছে ইস্তেহারের প্রথমেই। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের আয় বাড়ানোরও। তার পরেই রয়েছে প্রত্যেকের মাথায় ছাদ করে দেওয়ার কথা। দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় বাংলার সঙ্গে খটাখটি লেগেই রয়েছে মোদি সরকারকে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে একাধিক বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কেন্দ্রের ভরসায় না থেকে সেই অভাব রাজ্যই মেটাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে। মোদি ঘোষণা করেছেন তিন কোটি নতুন বাড়ি বানানোর কথা। তার টেক্কা দিতেই কি মমতার সরকারও সবার মাথায় ছাদের কথা ঘোষণা করে দিল! উঠেছে প্রশ্ন।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এই ইস্তেহারে বিনামূল্যে দশটি রান্নার সিলেন্ডার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিদি বিপিএল গ্রাহকদেক। উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পের কথা বললেও কথা রাখতে ব্যার্থ মোদি সরকার। আর সেই ফাঁক দিয়েই রাজ্যবাসীকে তৃণমূলমুখী করতে চাইছে দল। ইতিমধ্যেই তৃণমূল সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্প যথেষ্ট সফল। ভোটমুখী ইস্তেহারে ৫ বছর বিনামূল্য রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। আর তাকে টেক্কা দিতেই দুয়ারে রেশন প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবাসীকে পাঁচ কেজি করে রেশন তাঁর দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মমতা সরকার। কী কী থাকবে সেই রেশনে। থাকছে চাল, ডাল এবং শস্য। মানুষের যাতে অন্ন নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকে, তা-ই এই ব্যবস্থা।
ক্ষমতায় এসে নতুন করে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। তিন কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রাও নিয়েছেন। তৃণমূলের ইস্তেহারে পাল্টা কর্মসংস্থানের সুরক্ষা দিল তৃণমূলও। নানাবিধ দুর্নীতির জালে প্রাণ ওষ্ঠাগত মমতা সরকারের। নিয়োগ দুর্নীতি, শিক্ষাদুর্নীতি থেকে শুরু করে রেশন কেলেঙ্কারি। ভোটের আগে প্রায় সব কটি ক্ষেত্রেই নতুন করে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ঘোষা করে দেওয়া হল ইস্তেহারে। পাশাপাশি স্বামিনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। তা-ও আবার আইন মেনে। যা এখন দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের।
এখানেই শেষ নয়। মোদি বিনামূল্য বিদ্যুৎ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাস মিলেছে বিদ্যুতের বিল কমিয়ে আনারও। তৃণমূলের ইস্তেহারে বিদ্যুৎ নিয়ে আশ্বাস না থাকলেও পেট্রোপণ্যের দাম কমানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে। এমনকী যাতে দামের ওঠা নামায় মানুষের অসুবিধা না হয় তার জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা হবে। সেখান থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঘাস শিবির। ভবিষ্যতের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বিশে। প্রশিক্ষণের কথাও বলা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডেরও।
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের সবচেয়ে বড় ঘুঁটি রামমন্দির? সমীক্ষায় ফাঁস বিজেপির যে অকল্পনীয় ছক
তৃণমূলের ভোটবাক্সের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন সংখ্যালঘুরা। নিন্দুকেরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণেরও অভিযোগ তোলেন প্রায়শই। এবার ইদের মঞ্চ থেকেও সিএএ-এনআরসি বিরোধিতার সুর চড়িয়েছিলেন মমতা। ভোটের আগে এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার হাতের বড় অস্ত্র যে সিএএ-এনআরসি, তা বলাই বাহুল্য। নির্বাচনী ইস্তেহারেও সেই ইস্যুকে ব্যবহার করতে ভুলল না তৃণমূল। ইস্তেহারের শেষের দিকে স্বচ্ছ আইন স্বাধীন ভারত নামে একটি পর্ব রেখেছে তারা। যেখানে সিএএ, এনআরসি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে একাধিক প্রকল্প রয়েছে তৃণমূলের। বাংলায় লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো একাধিক উদ্যোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আস্তিনের তাস। ইস্তেহারেও মেয়েদের আর্থিক ক্ষমতায়নের উপর জোর দিল তৃণমূল। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় দশ লক্ষ টাকার চিকিৎসার ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ইস্তেহারে।
বাংলায় মোদির 'সঙ্কল্পপত্রে'র অ্য়ান্টিটোড হিসেবে মমতা সরকারের ইস্তেহারপত্রকে তুলে ধরতেই কি রয়ে-সয়ে সময় নিয়ে 'দিদির শপথ'-কে সামনে আনল তৃণমূল? ভোটমুখী বাংলায় তৃণমূলের আসনকে আরও শক্ত করবে তৃণমূলের এই প্রতিশ্রুতিগুচ্ছ? নাকি পিকে-র কথা সত্য করেই গেরুয়া ঝড়েই বেশি আস্থা রাখবে বাংলার মানুষ। সেই উত্তর অবশ্য মিলবে ভোটবাক্সেই।