জিএসটি চালু হওয়ায় আপাতত বিলক্ষণ স্বস্তিতে আছে শিল্প-বানিজ্যের বড় অংশ

সাক্ষর সেনগুপ্ত: ভ্যাট কমানো-বাড়ানোর নামে অর্থ দফতরের নানা টেবিলে প্রণামী দেওয়ার বন্দোবস্ত আর নেই। রাজ্যভিত্তিক কর নেওয়ার সুযোগে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের দমচাপা হাঁসফাঁসও বন্ধ। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে তো কার্যত বড় মাপের সাহায্য হয়ে উঠেছে গুডস অ্যান্ডস সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি। ২০১৭ সাল নাগাদ সিআইআই -এর তরফে একটি যৌথ সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছিল, অনলাইনে কেনাকাটাই নেট বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে চলেছে। ২০২০ সালের মধ্যে তা ১০ হাজার কোটি ডলার (৬.৭০ লক্ষ কোটি টাকা) ছুঁতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। পরিসংখ্যান-এর তথ্য তার কাছাকাছিই থেকেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল যাতে জিএসটি-র ই-কমার্স সংক্রান্ত বিধি ঠিক মতো রূপায়িত হয়। পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত ই-কমার্স সংস্থাগুলি যাতে তাদের গুদাম বা পরিষেবা কেন্দ্রগুলিকেও নয়া কর ব্যবস্থায় নথিভুক্ত করতে পারে। সেই বিষয়টির উপর অনেকটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে তা রূপায়িত হয়েছে। উপরন্তু করোনা আবহে যে অনলাইন ব্যবসার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ।

দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ উৎপাদন ও বিপননের ব্যবসায় অভিজ্ঞ অ্যাবে হেলথ কেয়ার প্রাইভেট লিমিটিড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইন্দ্রজিৎ রায় জিএসটি পরবর্তী ব্যবসায়িক আবহে অত্যন্ত মূল্যবান অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। জিএসটি-পূর্ববর্তী পরিিস্থিতিতে কি ধরণের সমস্যার মোকাবিলা করতেন তাঁরা? ইন্দ্রজিৎবাবু জানালেন, একটা সময় এমন পরিস্থিতি ছিল যখন কর কাঠামোর তফাতের সুযোগে বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে ওষুধ ঢূুুূকত এরাজ্যে আর তারপর বাগড়ি মার্কটে চলত দেদার ব্যবসা। কিন্তু এখন সে সবের সুযোগ একেবারেই কমে গিয়েছে আগেকার পরিস্থিতির তুলনায় কোনও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইনভয়েস সিস্টেম মাফিক যাবতীয় স্বচ্ছতা দুপক্ষেই বজায় রাখা অনেক বেশি সুবিধাজনক হয়ে পড়েছে। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যই ইন্দ্রজিৎবাবু জানালেন, আগে সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখন নিয়মিত খতিয়ে দেখলেই সহজেই বোঝা যায় যাদের সঙ্গে লেনদেনের কারবার তারা নিয়মমাফিক সমস্ত তথ্য আপডেট করছে কি না তা জানা যাচ্ছে সহজেই। অপর তরফেও যদি ভুলবশত কোনও সমস্যা থাকে তাহলে ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ থাকছে।

প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা ছিল নানা ধরণের ছোট দোকান এর মালিকরা সমস্যায় পড়তে চলেছিলেন জিএসটি নিবন্ধকরণের দরুন। মুদির দোকানের মত সাধারণ ব্যাবসায়ী যারা আগে কখনো এরকম বড় একটা সার্ভিস ট্যাক্স এর কথা শোনেওনি বা দেওয়ার মত পরিস্থিতি কখনও আসেনি , তাদের পক্ষে হঠাৎ করে এই পরিবর্তন যথেষ্ট সমস্যার। বেশিরভাগ মুদির দোকানের মালিকদের কাছে সার্ভিস অ্যান্ড গুডস ট্যাক্স এখনও অস্পষ্ট আর তার কারণেই আগামী দিনে এটি ছোট খুচরো ব্যাবসায়ীদের পথের কাঁটা হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। খুচরো দোকানের মালিকদের বক্তব্য ছিল, এই জিএসটি চালু হওয়ার পর তারা হয়তো খুব শীঘ্রই ব্যবসা গোটাতে বাধ্য হবেন। কারণ এই অনলাইন কেনাকাটার প্রতিযোগিতায় তারা বহুলাংশে পিছিয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে যখন স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হল যাদের বার্ষিক আয় ২০ লক্ষ টাকার তাদের জিএসটি নিয়ে কোনওরকম চিন্তাভাবনা দরকার নেই। এমনকি তাদের কারওকেই জিএসটি নম্বর এর জন্যও আবেদন করার প্রয়োজন নেই তখন অনেকটাই স্বস্তি এল একটা বড় অংশের মধ্যে।

 জিএসটি ২০১৭ সালে বাস্তবায়িত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল পণ্য ও পরিষেবার লেনদেনের জন্য একটি অভিন্ন কর ব্যবস্থা তৈরি করা। জিএসটি নিয়মমাফিক বা অনুমোদিত ব্যবসার জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। কিন্তু এই বিষয়টি সর্বজনবিদিত যে দেশের অর্থনীতি অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকেও চলে। চালু হওয়ার কমবেশি তিন বছর পরে জিএসটি- র সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আপাতত আমরা দুদিক থেকেই ভালমন্দ খতিয়ে দেখতে পারি----

জিএসটি-র সুবিধা :

  • জিএসটি একটি সহজবোধ্য কর কাঠামো এবং এটি পরোক্ষ করের সংখ্যা কমিয়ে দেয়।
  • এটিতে কোন লুকানো কর থাকেনা, নথিভুক্ত খুচরা বিক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত কর লাগে না তাই ব্যবসা করার খরচ কমে যায়।
  • এর আগে, ভ্যাট কাঠামোতে, ৫ লাখ টাকার বেশি (বেশিরভাগ রাজ্যে) টার্নওভার সহ যে কোনও ব্যবসায় ভ্যাট দিতে হতো। জিএসটি ব্যবস্থার অধীনে, এই সীমার পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা অনেক ছোট ব্যবসায়ী এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
  • জিএসটি-র সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (রেজিস্ট্রেশন থেকে রিটার্ন দাখিল করা) অনলাইনে করা হয় এবং এটি খুবই সহজ এবং স্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়া।
  • আগে ভ্যাট এবং সার্ভিস ট্যাক্স ছিল, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব রিটার্ন এবং সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত প্রক্রিয়া ছিল। জিএসটি -র অধীনে অবশ্য একটি মাত্র রিটার্ন দাখিল করতে হয় ।
  • ই-কমার্স অপারেটরদের জন্য নির্ধারিত কর প্রচলনের ব্যবস্থা।
  • এই ব্যবস্থা চালুর আগে, ভারতে লজিস্টিক শিল্পের জন্য ভিন্ন রাজ্যে একাধিক জায়গায় গুদাম রক্ষণাবেক্ষণ করতে হত রাজ্যে প্রবেশ কর এড়াতে। জিএসটি-র আওতায়, পণ্যগুলির অন্য রাজ্যে চলাচলের উপর এই বিধিনিষেধগুলি অনেকটাই কমিয়ে ফেলা হয়েছে।

একইসঙ্গে আপাতত জিএসটি-র অসুবিধাগুলি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ব্যবসাগুলিকে ঠিকভাবে চালানোর জন্য এই অসুবিধাগুলি কাটিয়ে ওঠার সমস্ত প্রচেষ্টাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে-

জি এস টি অসুবিধাগুলির সম্ভাব্য সম্ভাবনা :

  • ব্যবসায়ী দের হয় চালু থাকা হিসাবনিকাশ বা ইআরপি সফটওয়্যারটি জিএসটি-র-বিধি মাফিক আপডেট করা প্রয়োজনীয়, এজন্য জিএসটি সফটওয়্যার কিনতে হলে নতুন সফটওয়্যার কেনার কারণে খরচ বাড়তে পারে।
  • জিএসটি মেনে চলতে না পারলে জরিমানা হতে পারে, ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলির ক্ষেত্রে। এখনও ডিজিটাল না হয়ে ওঠার কারণে জিএসটি কর ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বুঝতে অনেকেরই সময় লাগতে পারে। ডিজিটাল রেকর্ড-রক্ষার পাশাপাশি অবশ্যই সময়মত রিটার্ন দাখিল করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
  • ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে উৎপাদন খাতে জিএসটি -র অধীনে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এর আগে, কেবলমাত্র যেসব ব্যবসা ১.৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল তাদের কর দিতে হত , কিন্তু এখন যে কোনও ব্যবসা যার টার্নওভার ২০ লক্ষ টাকার বেশি হবে তাকে জিএসটি দিতে হবে।
  • কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের মত শিল্পে জিএসটি -র আওতায় পড়ে না, যা তেল ও পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের কোম্পানিগুলির জন্য খানিকটা অসুবিধাজনক। কারণ তারা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট দাবি করতে পারবে না।
  • বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কোম্পানিকে প্রতিটি রাজ্যের জন্য আলাদাভাবে জিএসটি,রেজিস্ট্রেশন করার মত সমস্যাও আছে। যার ফলে তার পরিচালনার খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

আর্থিক বিশেষজ্ঞ সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাসুদেব রাউতের কথায় আরও বেশ কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন ---

বছরে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করলে একটি বিকল্প সোজা নিয়মও আছে। শর্ত, ব্যবসা করতে হবে শুধু রাজ্যে। এটির নাম কম্পোজিশন স্কিম।

এতে নথিভুক্তির সুবিধা— প্রতি ত্রৈমাসিকে একটি করে রিটার্ন দিলেই চলবে। ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি ১%। উৎপাদনকারীদের ২%।

অসুবিধা— ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের সুবিধা মিলবে না। সামান্য কর দিতে হবে বলে ক্রেতাদের থেকে সেই টাকা উসুলের পথ বন্ধ। রেস্তোরাঁ ছাড়া পরিষেবা শিল্পের অন্য ক্ষেত্র প্রকল্পটির সুবিধা নিতে পারবে না।

জিএসটি-তে পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য ছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। ফলে উপকৃত হবে ছোট মাপের পরিষেবা সংস্থাগুলি।

পণ্য-পরিষেবা সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী যে পণ্য ও পরিষেবা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করবেন, সেই বাবদ খরচের উপর গোনা করের টাকা ফেরত মিলবে। এরই নাম ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট।


কী ভাবে, কখন--

জিএসটি-র প্রাথমিক যে-শর্তগুলি মনে রাখা প্রয়োজন, সেগুলি হল—

কোনও মাসের জিএসটি দিতে হবে তার পরের মাসের ২০ তারিখের মধ্যে।

এজন্য করদাতার জিএসটি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (জিএসটিআইএন) থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পোর্টালে (www.gst.gov.i• বা www.cbec.gov.i•) যে অনলাইন চালান থাকবে, তা পূরণ করতে হবে।

সম্মিলিত জিএসটি (আইজিএসটি), কেন্দ্রীয় জিএসটি (সিজিএসটি) এবং রাজ্য জিএসটি (এসজিএসটি)— তিন ধরনের করই চোকাতে হবে একটিমাত্র চালানের মাধ্যমে।

করের টাকা দিতে হবে অনলাইনে। নেট ব্যাঙ্কিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে।

তবে হাতে-হাতে জিএসটি দেওয়ার সুযোগ মিলবে কর মেটানোর প্রত্যেক মেয়াদে, চালান পিছু ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নগদে, চেকে, ডিমান্ড ড্রাফ্ট মারফত দেওয়া যাবে।

কোন রিটার্ন, কবে জমা দেওয়া জরুরি---

জিএসটি রিটার্ন দাখিলের জন্য বেশ কয়েক ধরনের ফর্ম রয়েছে। যা জমা দিতে হবে জিএসটি-র পোর্টালে গিয়ে।

জিএসটি চালু হওয়ায় আপাতত বিলক্ষণ স্বস্তিতে আছে শিল্প-বানিজ্যের বড় অংশ

চিত্রঋণ : Google

জিএসটিআর-১ঃ জিএসটি আইন অনুযায়ী, এই রিটার্ন ফর্ম দাখিল করা দরকার যে সব পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ (আউটওয়ার্ড সাপ্লাই) করা হচ্ছে, তার জন্য। এই ক্ষেত্রে দেখা প্রয়োজন সেই সরবরাহের তথ্য (যেমন: বিক্রি, আন্তঃ-রাজ্য শাখার মধ্যে স্থানান্তর, লিজ বা ভাড়া দেওয়া, পণ্য-পরিষেবা জোগাতে নেওয়া অগ্রিম ইত্যাদি) এবং তার উপর প্রদেয় কর। যে মাসের হিসেব, তার পরের মাসের ১০ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে এই রিটার্ন।

জিএসটিআর-২: এই রিটার্ন ফর্ম দিতে হবে ব্যবসা চালাতে যে-সব পণ্য বা পরিষেবা নেওয়া (ইনওয়ার্ড সাপ্লাই) হচ্ছে, তার জন্য। সেখানে দেখাতে হবে সেগুলি পাওয়ার তথ্য (যেমন: ক্রয়, আন্তঃ-রাজ্য শাখার মধ্যে স্থানান্তর, ক্রেডিট নোটস, ডেবিট নোটস ইত্যাদি) এবং তার উপর কর। এই রিটার্নের বেশির ভাগটাই ‘ব্যবসায়ীর জমা দেওয়া জিএসটিআর-১ ফর্মটির ভিত্তিতে। ফলে সেই অং‌শ করদাতাকে আর ভর্তি করতে হবে না। এই ফর্মেই থাকবে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট দাবির অঙ্ক। এটি পরের মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে।

জিএসটিআর-৩: এটি সম্মিলিত মাসিক রিটার্ন দাখিলের ফর্ম। এই রিটার্নও ‘অটো পপুলেটেড’। অর্থাৎ করদাতার জমা দেওয়া জিএসটিআর-১ বা জিএসটিআর-২ জমা দেওয়ার পরে, সেগুলির ভিত্তিতে এই ফর্মের বিভিন্ন অংশ ভর্তি হয়ে যাবে আগেই। নিট কর কত দেওয়া হল, তার পরিমাণ থাকবে এতে। পরের মাসের ২০ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে এটি। তবে করের টাকা জমা দিলে তবেই তা নেওয়া হবে।

জিএসটিআর-৩বি: রিটার্নের এককালীন সার-সংক্ষেপ এই ফর্ম। আপাতত এটি শুধুমাত্র জুলাই ও অগস্টের জন্যই দিতে হবে।

জিএসটিআর-৯: সার্বিক বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের ফর্ম। একে সারা বছরের সম্মিলিত রিটার্ন-ও বলা যায়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও অর্থবর্ষের জন্য তার পরের আর্থিক বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি জমা দিতে হবে।

কেন্দ্র বারবার জানিয়েছে, জিএসটি আসায় কর ফাঁকির রেওয়াজ অনেক কমেছে। এর কারণ কী? আসলে কর ব্যবস্থাটি তৈরিই হয়েছে এমন ভাবে যে, জিএসটিআর-১ ও জিএসটিআর-২ দাখিলের পরে জিএসটিআর-৩ দাখিলের আগে ব্যবসায়ীরা কর মেটাতে বাধ্য। তা না হলে সেই ফর্মটি জমাই দেওয়া যাবে না। কারণ, কর মেটানোর সময়সীমা মাসের ২০ তারিখ। আর জিএসটিআর-৩ জমার সময়ও শেষ হবে সেই একই দিনে। ফলে কর না-দিয়ে রিটার্ন জমা দিতে গেলেই আটকে যাবেন করদাতা। স্পষ্ট হয়ে যাবে তাঁর কর-বকেয়া। ফলে কর না-দিলে নিস্তার নেই।

এ ছাড়া, জিএসটি-তে নথিভুক্ত ব্যবসায়ীদের সব বিক্রি ও কেনার তথ্য আপনা থেকেই জিএসটি নেটওয়ার্ক (জিএসটিএন) পরিচালিত জিএসটি পোর্টালে রেকর্ড হয়ে যাবে। সুতরাং কোনও লেনদেন লুকোনোর জায়গাই নেই। ফলে তাঁদের অ্যাকাউন্টেও ক্রয়-বিক্রয়ের আসল মূল্য প্রতিফলিত হবে। যে কারণে কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে এক দিকে যেমন সরকারের ঘরে অনেক বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর জমা পড়বে, তেমনই চোখে পড়ার মতো কমবে কর ফাঁকির পরিমাণ। পাশাপাশি যেমন, একটি দোকান চালাতে ব্যবসায়ীকে দোকান ভাড়ার উপর যে জিএসটি দিতে হচ্ছে, তা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট হিসেবে ফেরত পাওয়া যাবে। আগে অবশ্য এই সুবিধা ছিল না। আবার ছোট মুদির দোকান , যা আমাদের সমস্থ এলাকাতেই পাড়ার মোড়ে দেখা যায়। যেখানে আপনি, আপনার সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেয়ে যেতে পারেন খুবই সামান্য দামে , সেখানে কিন্তু বেচাকেনা সম্ভব অতিরিক্ত কোনও কর ছাড়াই।

তথ্যসূত্র - GST Benefits : Know About Advantage & Disadvantage of GST --CLEARTAX.IN, আনন্দবাজার পত্রিকা - ১৭ আগস্ট, ২০১৭

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য প্রতিবেদকের নেওয়া

More Articles