টাইটানিকের মধ্যে 'ডেস্টিনেশন ওয়েডিং'! ভাঙা জাহাজকে ঘিরে যেভাবে চলে বিপুল ব্যবসা...

Marriage on Titanic Deck: জলের তলায় টাইটানিকে গিয়ে বিয়ে সম্ভব, একথা ২০০১ অবধি কেউ ভাবেননি!

টাইটান ডুবে যাওয়ার ঘটনা টাইটানিকের নস্টালজিয়াকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে ফের। টাইটানিকের প্রাচীন আভিজাত্যের পাশাপাশি উঠে এসেছে নব্য টাইটানের বিপুল খরচের খতিয়ানও। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মানুষ হাঁ হয়ে গিয়েছে টাইটানে চেপে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের হাল হকিকত জেনে। পরিদর্শন বা অনুসন্ধান বললে কিঞ্চিৎ ভুল হবে। এ এক এমন অ্যাডভেঞ্চার, যার সামর্থ রয়েছে কেবল ধনকুবেরদেরই!

সমুদ্রে কেবল টাইটানিকই ডুবেছিল এমন নয়। ফলে সমুদ্রের অতলে এমন বহু বহু জাহাজের ধ্বংসাবশেষই মেলে। তবে সামরিক জাহাজ, যেগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাগরে ডুবে গেছে সেখানে যাওয়া অভিযাত্রী, পর্যটক এবং সাধারণ মানুষদের নাগালে নেই। রয়েছে বিবিধ নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমায় শুয়ে থাকা টাইটানিক জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা UNESCO দ্বারা সুরক্ষিত। টাইটানিককে আজও ছুঁয়ে দেখা যায় পকেটে ভালোমতো কানাকড়ি রইলেই। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ এবং ধ্বংসাবশেষ লুঠ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে পরবর্তীতে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিও করেছে।

ফলে, সাধারণ মানুষ এখনও টাইটানিকের সন্ধানে মহাসাগরের গর্ভে ডুব দেওয়ার অনুমতি পান এবং যদি ব্যবস্থা করা যায় তাহলে শতবর্ষ প্রাচীন নিমজ্জিত টাইটানিকের ভেতরে ঢোকার অনুমতিও পেতে পারেন। তবে জিনিসপত্র নিজের মনে করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারবেন না। শুধুমাত্র একটি সংস্থা- আরএমএস টাইটানিক ইনকর্পোরেটেডকে (RMS Titanic, Inc) আইনত ধ্বংসাবশেষ থেকে জিনিস উদ্ধার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- দৈব না দুর্বিপাক! টাইটানিকের অতল রহস্যে হারাল টাইটানও

সুতরাং চাইলে যাওয়াই যায়। শুধু যাওয়া যায় না, ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-ও সম্ভব! এর আগে বেশ কিছু পর্যটক টাইটানিকে ঘুরতে গিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে একজন দম্পতি টাইটানিক জাহাজের ডেকে বিয়েও করেন। নিউইয়র্কের ডেভিড লেইবোভিটজ এবং কিম্বারলে মিলার, ডাইভিং কোম্পানি সাবসি এক্সপ্লোরারের একটি প্রতিযোগিতায় জিতে ২০০১ সালে টাইটানিকের ডেকে চড়ে বিয়ে সেরে ফেলেন। সমুদ্রের তলদেশে ৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এই অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন তারা।

রাশিয়ান গবেষণা জাহাজ আকাদেমিক কেলডিশে চড়ে নীচে নেমে তারা বিয়ে করেছিলেন। ওয়েডিং গাউন বা স্যুট পরা তো সম্ভব ছিল না। স্থানের সীমাবদ্ধতা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে দম্পতি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন জলের তলার বিশেষ পোশাক পরেছিলেন। টাকা থাকলে ভূতের বাবার শ্রাদ্ধ সম্ভব একথা বিশ্ব জানে, জলের তলায় টাইটানিকে গিয়ে বিয়ে সম্ভব, একথা ২০০১ অবধি কেউ ভাবেননি! স্বাভাবিকভাবেই এই প্রতিযোগিতা এবং বিয়ে নিয়ে বিবধ বিতর্ক দেখা দেয়। টাইটানিকের ইতিহাসবিদ ব্রায়ান টাইসহার্স্ট বলেই ফেলেছিলেন, টাইটানিকের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে নষ্ট করে এই দম্পতি বহু বহু মানুষকে অপমান করেছেন। তাতে অবশ্য কর্ণপাতও করেননি বর কনে! উল্টে লেইবোভিটজ সেই সময়ে বলেছিলেন, টাইটানিককে কবরস্থান হিসাবে দেখেন না তারা।

ওশানগেটের টাইটান সাবমার্সিবলের বিস্ফোরণের পরে টাইটানিক যাত্রীদের উত্তরসূরিরা কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের সকলের কাছেই টাইটানিক তাঁদের পূর্বজদের সমাধিস্থল। এই সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শন বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সকলেই।

ব্রেট গ্ল্যাডস্টোনের প্রপিতামহ টাইটানিক বিপর্যয়ে মারা গিয়েছিলেন ১৯১২ সালে। তিনি ইনসাইড এডিশনকে জানিয়েছেন, এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে যেখানে সেই জাহাজের শোষণ নিয়ে চিরকালই অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। তাঁর ঠাকুমা দিদার মৃতদেহ কখনও পাওয়াই যায়নি, সমস্তই তলিয়ে গিয়েছিল। এই সকল মানুষের 'আত্মা' টাইটানিকের কবরস্থানে আছে বলেই বিশ্বাস তাঁর। শুধু তাঁর না, তাঁর মতো স্বজন হারানো অনেকেরই। তাই টাইটানিককে এমন 'বারোয়ারি' করে দেওয়া যায় কিনা, সেই প্রশ্ন এতকাল পর ফের চাগাড় দিয়েছে।

More Articles