নির্বাচনী প্রচার ইউটিউব, ইনস্টা-তেই? কী ভাবছে রাজনৈতিক দলেরা

Lok Sabha Election 2024: ইকোনমিক টাইমস-এর একটি সমীক্ষায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গিয়েছে ২০০৯ সালে যেমন ফেসবুক একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এখন আর তার সেই প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা নেই।

একুশেই ভরসা রাখছে সব রাজনৈতিক দল। ২০২৪-এ পাখির চোখ ছাত্রযুব-র ভোট। সমাজমাধ্যম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মতামত গড়ে দেয় মাধ্যমগুলি। ফেসবুক, ইউটিউব, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ—নিত্যনৈমিত্তিক আলাপের সিংহভাগ এখন দখল করে ফেলেছে তারা। ফলে নির্বাচনে যে তাকে কাজে লাগাতে চাইবে রাজনৈতিক দলগুলো, তা অত্যন্ত স্বাভাবিক। গত দশক থেকেই বারেবারে নির্বাচনী প্রচারে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা দেখা গিয়েছে। 'ভারত জোড়ো' যাত্রার সময় যেমন অনেক ইউটিউবারকেই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আবার জুলাই মাসে প্রকাশিত নিউজ লন্ড্রির একটা রিপোর্ট বলছে দেশের অন্তত আঠেরোটি রাজ্যে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিজেপি। 'নাইন ইয়ারস অফ মোদী' প্রচার করা শুরু হয়েছিল সে সময়। ২০২৪-এর নির্বাচনে তবে কীভাবে এই মাধ্যমকে কাজে লাগাবে দলগুলি?

ইকোনমিক টাইমস-এর একটি সমীক্ষায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গিয়েছে ২০০৯ সালে যেমন ফেসবুক একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এখন আর তার সেই প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা নেই। কারণ অফিশিয়াল আন-অফিশিয়াল পেজগুলিতে তেমন স্বাভাবিক এনগেজমেন্ট নেই। ফলে প্লাটফর্মটির প্রতি একটা অনীহা দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির। তারা ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে অনেক বেশি আগ্রহী। ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে তারা। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় দাবিদাওয়া নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে। ইস্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে সে প্রচার। বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থাপনাও ছাত্রযুবকে আকৃষ্ট করবে বলে ধারণা দলগুলির।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস আর বিজেপির ফারাক কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী বাছাই-ই ২০২৪-এ মোদির মাস্টারস্ট্রোক?

বিজেপির মন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সম্পাদক তেজস্বী সূর্য জানিয়েছেন পডকাস্ট, ওয়েবিনার, ব্লগ, ই-ম্যাগাজিন—যাবতীয় উপায়কে ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি। মানুষের কাছে পৌঁছনোই লক্ষ্য। বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সারেরা সাংবাদিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। মিম এবং গান—দুইই ভোটারদের প্রভাবিত করার অস্ত্র মনে করছেন তাঁরা। ওয়াইআইএফ-এর কৌশিক জানাচ্ছেন, "আদতে সরাসরি বাক্য বিনিময়ে যেতে চাইছে না রাজনৈতিক দলগুলো। তর্কবিতর্ক এড়িয়ে তারা এমন মাধ্যম বেছে নিচ্ছে যেখানে মূল সুরটি তাদের হাতেই থাকবে। ছাত্রযুবরা ভাবছেন, তাঁরা নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করে ভোট দিচ্ছেন। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না।" হিমানী চৌধুরী ইনস্টাগ্রামে ব্যক্তিগত আর্থিক সংস্থানের বিষয়ে কন্টেন বানান। তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা সাত লক্ষেরও বেশি। এ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪-এর নির্বাচন ইনফ্লুয়েন্সারদের আরও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবে। তাঁর মতে, ফলোয়ার সংখ্যা দেখে তাঁদের ডাকছে রাজনৈতিক দলগুলি। ফলোয়ারদের মতামত জানতে চাইছেন তাঁরা। "কিন্তু কয়েকটি সমাবেশে গিয়েই মোটামুটি বুঝতে পারছি, কে সত্যিই মতামত জানতে চায়, আর কে নিজের মিছিলের প্রচার করাতে চায়।"—জানিয়েছেন হিমানী।

আরও পড়ুন: ইউটিউব ভিডিও দেখে UPSC-তে র‍্যাঙ্ক করাও সম্ভব! বাজিমাত করে দেখালেন তরুণী

মহারাষ্ট্রে কেবল মাত্র নির্বাচনী প্রচারের জন্যই ৫০০-র বেশি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূল স্তরের প্রচার তারা করতে চায় অনলাইনেই। মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে তারা। মহারাষ্ট্রে বিজেপির নির্বাচনী কাজকর্ম যিনি দেখাশোনা করেন, সেই দেবাঙ্গ ডেভ জানিয়েছেন,  হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারের 'মাইক্রো প্ল্যানিং' করছেন তাঁরা। ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ না পাঠিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপের মধ্যে নিজস্ব সদস্য রেখেছে বিজেপি‌। সেখানে প্রচার চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। রাজস্থান কংগ্রেসের ভাগাসারা জানিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় সামাজিক মাধ্যম সেলের নির্দেশ, হোয়াটসঅ্যাপকে যেন যতটা পারা যায় নির্বাচনী প্রচারের কাজে লাগানো হয়। রাজস্থানে নির্বাচন হেরেছে কংগ্রেস। ফলে জোটের অন্যান্য দলের থেকেও সাহায্য আশা করছেন তাঁরা।

যদিও অফলাইন প্রচারের ভোটব্যাঙ্ক ছাড়তে রাজি নয় প্রায় কোনও দলই। বাস্তব প্রচারকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। 'লোকনীতি'-র এক গবেষক জ্যোতি মিশ্র জানিয়েছেন, বর্তমানে ইউটিউব ও ওটিটি মাধ্যমের ব্যবহার ২০১৯-এর থেকে অনেকখানি বেড়েছে। জিও সিনেমার মতো প্লাটফর্মগুলি রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে জোর কদমে। ছাত্রযুবদের যে অংশ দূরদর্শনের সংবাদমাধ্যম বা খবরের কাগজের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন, তাঁরাই এই প্রচারের মূল লক্ষ্য। অনলাইনেই যুদ্ধ চলছে রাজনৈতিক মতাদর্শের।

More Articles