সাত বছর ধরে বানিয়েছিলেন তিনশো শ্রমিক, বিশ্বশ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটসের বাড়ির অন্দর কেমন?

বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তি গেটসের বাড়ি তৈরি করতে সময় লেগেছিল সাত বছর। এটি আমেরিকার ওয়াশিংটনের মেডিনায় লেক ওয়াশিংটনের পাশে ৬৬ হাজার স্কোয়ারফুটের ওপর নির্মিত।

বিল গেটস। এই নামটা বললেই মাথায় আসে পৃথিবীর এমন এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কথা, যার তুলনা তিনি নিজেই। গেটসকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তাঁর বাড়ির অন্দর কেমন, বেডরুম কেমন, সুইমিং পুলে কী চমক, তা নিয়ে কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। ঢুঁ মারা যাক গেটসের বাড়ির অন্দরে।

বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তি গেটসের বাড়ি তৈরি করতে সময় লেগেছিল সাত বছর। এটি আমেরিকার ওয়াশিংটনের মেডিনায় লেক ওয়াশিংটনের পাশে ৬৬ হাজার স্কোয়ারফুটের ওপর নির্মিত। ১৯৮৮ সালে ২০ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে ওয়াশিংটন এস্টেট কেনেন গেটস। এরপর দীর্ঘ ৭ বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে ওঠে তাঁর স্বপ্নের ইন্দ্রপুরী। `সিটিজেন কেন’ ছবির নায়ক চার্লস ফস্টার কেন-এর বাড়ির আদলে গেটস তাঁর আস্তানার নাম রেখেছেন `জনাডু ২.০’ শুধুমাত্র বিত্তের আস্ফালন নয়, বিল গেটসের বাড়ির আপাদমস্তক ছেয়ে রয়েছে অত‍্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক।

বাড়িটি গেটস এমনভাবে তৈরি করেছেন, কেউ এখানে ঢুকলে ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন। মূল বাড়িকে অন্যান্য অংশ থেকে একেবারেই আলাদা রেখেছেন। মূল বাড়িতে রয়েছে ৭টি শোওয়ার ঘর। বাড়ির রিসেপশন হলে প্রায় ২০০ গেস্টের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গেস্ট রুমগুলো অধিকাংশই মাটির নিচে। বাড়িতে প্রবেশ করলেই ৯০ ফিট লম্বা এবং ৬৩ ফিট উঁচু সিঁড়ি। এর ধাপ রয়েছে ৮০ টি। সিঁড়িটি একেবারে বাড়ির নিচ পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর মাটির ওপর দোতলা ভবনটি কাঠ আর কাচ দিয়ে তৈরি।

আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসৈকতে বসে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে পারেন আপনিও!

নির্মাণের চমক
বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে, শেষ হয় ২০০৫ সালে। সাত বছর ধরে ৩০০ নির্মাণশ্রমিক ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন এই বিলাসবহুল প্রাসাদপুরী। তাঁদের মধ্যে ১০০ জন ছিলেন ইলেকট্রিশিয়ান।

৫০০ বছরের পুরনো বহু মূল্যবান ডগলাস ফরগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই বাড়ির বেশিরভাগ অংশ। কালচে বাদামি রঙের এই কাঠ বাড়ির ফ্লোর, ফার্নিচার, সিঁড়ি, ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড, পুল সাইট, ডক ইয়ার্ড ইত্যাদি তৈরিতে বিখ্যাত। এই বাড়ি আর্থ শেল্টার্ড টেকনোলজিতে তৈরি। অর্থাৎ আশপাশের আবহাওয়া, তাপমাত্রার সঙ্গে ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

পুলের জলের নিচে মিউজিক
বিল গেটসের বাড়িতে প্রযুক্তির চমক থাকবে না তা হয় নাকি! জানডু ২.০ এর মধ্যে রয়েছে ৩৯০০ স্কয়ার ফিটের বিশাল এক বাংলো। তার সামনে রয়েছে ৬০ ফিট লম্বা এক সুইমিং পুল। এই পুলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জলের নিচে মিউজিক। জলের নিচ থেকে সাঁতার কাটতে কাটতে গান শোনার বিরল অনুভূতি। সাঁতার কেটে পুলের বাইরেও চলে যাওয়া যায় অনায়াসে। এর জন্য কাচ ঘেরা এক পথ পাড়ি দিতে হয়।

রিসেপশন হল ও হোম থিয়েটার
গেটসের রিসেপশন হলটির আয়তন ২ হাজার ৩০০ বর্গ ফিট। এখানে রয়েছে ১৫০ অতিথির বসে খাওয়া ও ২০০ জন অতিথির ককটেল পার্টির ব্যবস্থা। হলঘরের একপাশে রয়েছে ছয় ফিট চওড়া ফায়ারপ্লেস। রয়েছে ২২ ফিট চওড়া ভিডিও স্ক্রিন। যেটি বানানো হয়েছে, ৪০ ইঞ্চি ২৪টি টিভি দিয়ে। বাড়িতে রয়েছে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের হোম থিয়েটার।

গ্যারেজ
গেটসের বাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্যারেজ। মাটির নিচে ৬ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি আর ওপরে রয়েছে একই আয়তনের গ্যারেজ। এগুলো কংক্রিটে তৈরি, দেখতে গুহার মতো। প্রতিটি গ্যারেজে ১০টি করে গাড়ি রাখা যায়।

লাইব্রেরিতে দ্য ভিঞ্চির পাণ্ডুলিপি
বিল গেটসের বইয়ের নেশা কে না জানেন! তাঁর ২১০০ বর্গ ফিট গ্রন্থাগারের সিলিংটি গম্বুজাকৃতির। এতে রয়েছে ২টি গোপন বুক কেস। এর মধ্যে আসলে একটি গুপ্ত বার। এখানে লুকোনো রয়েছে বিশ্বের দুর্মূল্য মদিরার সম্ভার। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ও বিষয়বস্তুও আকর্ষণীয়। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতার সংগ্রহে রয়েছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পাণ্ডুলিপি সুবিখ্যাত `কোডেক্স লিসেস্টার’। ১৯৯৪ সালে নিলামঘর থেকে ৩কোটি ৮ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন গেটস। তাঁর সংগ্রহে থাকা এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কী হতে পারে!

বাড়ির ট্যাক্স
প্রতি বছরই এই বাড়ির জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার কর দেন বিল গেটস। ২০০৯ সালে মোট স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১০,৬৩,০০০ ডলার ট্যাক্স দেন গেটস। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের বাড়ির বর্তমান মূল্য প্রায় ১২.৩৫৪ কোটি ডলার। বছরে মার্কিন সরকারকে ১০ লক্ষ ডলার কর দেন গেটস। এই কর দেন তাঁর বাড়ির জন্য।

কোথাও র‍্যাঞ্চ, কোথাও দ্বীপ, এখানে-ওখানে ছড়িয়ে গেটসের এমনই অনেক সম্পত্তি!

বিল গেটসের ব্যক্তিগত দ্বীপ: গ্র্যান্ড বোগ কেয়ে
গেটস মধ্য আমেরিকার বেলিজ উপকূলে অবস্থিত একটি ৩১৪ একর দ্বীপ গ্র্যান্ড বোগ কেয়ের মালিক। তিনি এই দ্বীপটি ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি দামে কিনেছিলেন।

ওয়েলিংটনে বিল গেটসের র‍্যাঞ্চ
গেটস ফ্লোরিডার ওয়েলিংটনে ৪.৪ একর অবকাশের র‍্যাঞ্চ কিনেছিলেন। যেখানে ২২ মিলিয়ন ডলারে একটি ১২,৮৬৪ বর্গফুটের ম্যানসন রয়েছে। এর বর্তমান মূল্য ৫৫ মিলিয়ন ডলার অনুমেয়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় সম্পত্তি
২২৮ একর জমির র‍্যাঞ্চো প্যাসিয়ানা সম্পত্তি, যা আসলে রেস ট্র্যাক, একটি বাগান এবং ৫টি বার্ন ১৮ মিলিয়ন ডলারে কিনেছিলেন।

বাণিজ্যিক সম্পত্তি
বিল গেটস তাঁর ব্যক্তিগত বিনিয়োগ সংস্থা ক্যাসকেডের মাধ্যমে বিভিন্ন হাই-প্রোফাইল বাণিজ্যিক সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন। তিনি ক্যাসকেডের মাধ্যমে ফোর সিজন হোল্ডিংয়ের হোটেল চেইনের প্রায় অর্ধেক মালিক। তিনি ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজের চার্লস হোটেলের আংশিক মালিকানা পেয়েছেন।

বিল গেটসের সম্পত্তির এই ফিরিস্তি যে কোনও ধনকুবেরকেও লজ্জায় ফেলে দিতে পারে, যেমন ভিরমি খেতে পারেন আমাদের গৌরী সেন। তাই তো বলা হয়, গেটসের সমগ্র সম্পত্তির ওপর পাওয়া সুদ দিয়েই কেবল আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের জাতীয় ঋণ শোধ করে দেওয়া যায়। তাহলে বুঝে দেখুন!

More Articles