১ লাখ টাকা হয়ে যেতে পারে ২ কোটি! ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দেরি না করে বিনিয়োগ করুন এই স্টকে

Wipro multibagger super stock: Wipro-র স্টক বিগত ২০ বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫ বার বোনাস শেয়ার দিয়েছে।

রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা থেকে শুরু করে ওয়ারেন বাফেট, শেয়ার মার্কেটে সকলের একটাই 'ফান্ডা'- শেয়ার মার্কেটের রাজা হতে গেলে চাই ধৈর্য। আপনার যদি ধৈর্য না থাকে, তাহলে আপনি শেয়ার মার্কেটে কখনওই ভালো ব্যবসা করতে পারবেন না। লম্বা দৌড়ে মুনাফার পরিকল্পনা নিয়ে আপনাকে করে যেতে হবে নিয়মিত বিনিয়োগ। আর এই সমস্ত বিনিয়োগের সব থেকে বড় উদাহরণ হলো ভারতের সবথেকে বড় ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানি Wipro-র শেয়ার। সঠিক সময় সঠিক শেয়ারে বিনিয়োগ করলে যে কী হতে পারে, তা প্রমাণ করে দিয়েছে এই কোম্পানির শেয়ার।

এই মুহূর্তে শেয়ার বাজারে আকছার এই মাল্টিব্যাগার স্টক বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হলেও, আগে কিন্তু ব্যাপারটা এরকম ছিল না। এই সময় ভারতের প্রত্যেক বিনিয়োগকারী এমন সমস্ত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক, যেখানে বিনিয়োগ হবে একেবারে সুনিশ্চিত এবং তার সঙ্গেই রিটার্ন হবে গ্যারান্টিড। এই মুহূর্তে বাজারে একাধিক কোম্পানির স্টক রয়েছে, যেগুলি আপনাকে রিটার্ন দিতে সম্ভব। কিন্তু, খুব কম এমন কোম্পানি রয়েছে যাদের স্টক এই সময় হয়ে উঠেছে মাল্টিব্যাগার। এরকমই একটি কোম্পানি হলো Wipro, যাদের স্টক বিগত ২০ বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫ বার বোনাস শেয়ার দিয়েছে। অন্যদিকে, এই কোম্পানির স্টকে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের ১ লক্ষ টাকা আজকের দিনে হয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮ কোটি টাকা।

১৯৮০ সাল। তৎকালীন ভারতে টেকনোলজি শব্দটা এখনকার মতো এতটা জনপ্রিয় ছিল না। আর প্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারও ছিল স্বভাবতই অত্যন্ত নিম্নমুখী। সেই সময় ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে প্রবেশ করেছিল একটি কোম্পানি, যা আজকের দিনে হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের সবথেকে বড় আইটি কোম্পানি। Wipro, এই কোম্পানির শেয়ারে সেই সময় যদি কেউ ১০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন, তিনি আজ হয়ে গিয়েছেন ধনকুবের। সমস্ত বোনাস শেয়ার এবং স্প্লিট শেয়ার মিলিয়ে আজকে তার সেই বিনিয়োগ করা ১০,০০০ টাকার দাম দাঁড়াবে প্রায় ৮৯৯ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: ১ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪.৫ কোটি! আপনিও বিনিয়োগ করছেন তো এই মাল্টিব্যাগার সুপার স্টকে

একজন বিনিয়োগকারী যদি আজ থেকে ৪২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮০ সালে Wipro কোম্পানির শেয়ারে মাত্র ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতেন এবং আজ অব্দি স্টক ধরে রাখতেন, তাহলে আজ তিনি হতেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ১৯৮০ সালে উইপ্রো শেয়ারের দাম ছিল প্রায় ১০০ টাকা করে। আর এই মুহূর্তে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে Wipro শেয়ারের দাম ৪২১.৭৫ টাকা। তবে শুধু ৪২ বছর নয়, মোটামুটি ২০ বছর আগেও যিনি এই কোম্পানির শেয়ারে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তিনিও কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হয়েছেন কোটিপতি। এই কোম্পানির স্টক এর ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, বিগত ২০ বছরে বিনিয়োগকারীদের কম করে পাঁচবার বোনাস শেয়ার অফার করেছিল এই উইপ্রো কোম্পানিটি।

Wipro-র বোনাস শেয়ার
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি আমরা উইপ্রো-র ব্যাপারে কথা বলি তাহলে, অবশ্যই বলতে হয় এই শেয়ারের বোনাস শেয়ারের কথা। একদিকে যেমন নির্দিষ্ট সময় অন্তরে এই শেয়ারের আসল দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি মাঝেমধ্যেই বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন বোনাস শেয়ার। ভারতের সমস্ত আইটি কোম্পানিগুলির মধ্যে wipro হলো এমন একটি কোম্পানি, যারা বোনাস শেয়ার জারি করার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয়। ২০০৪ সালের পরে লাগাতার পাঁচবারের জন্য এই কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের বোনাস রিটার্ন দিয়েছিল। এই পাঁচবার বোনাস শেয়ার পাওয়ার ফলে ২০ বছরে ১ লক্ষ টাকা প্রায় ২ কোটি টাকার অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছিল নিমেষেই।

কতটা পাওয়া গিয়েছিল বোনাস শেয়ার?
বিগত ২০ বছরে Wipro তাদের বিনিয়োগকারীদের পাঁচবার বোনাস শেয়ার অফার করেছিল। শেষবারের মতো এই কোম্পানিটি বোনাস শেয়ার অফার করেছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। সেই সময় ১:৩ অনুপাতে বিনিয়োগকারীদের বোনাস শেয়ার দিয়েছিল Wipro। অর্থাৎ, সেই সময় যদি আপনার কাছে উইপ্রো কোম্পানির তিনটি শেয়ার থেকে থাকে, তাহলে Wipro কোম্পানির একটি শেয়ার আপনি বিনামূল্যে পাচ্ছিলেন। জুন, ২০০৪ সালে ২:১ অনুপাতে, অগাস্ট, ২০০৫ সালে ১:১ অনুপাতে, জুন, ২০১০ সালে ২:৩ অনুপাতে এবং জুন, ২০১৭ সালে ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার দিয়েছিল Wipro।

কত গুণ মিলেছিল টাকা?
Wipro কোম্পানির শেয়ারের রিটার্নের ব্যাপারে জানতে গেলে প্রথমে এই কোম্পানির শেয়ার প্রাইস ইতিহাসের ওপরে নজর রাখতে হবে। ১৯৮০ সালে এই আইটি কোম্পানি-র শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্ট করা হলেও, ৩০ এপ্রিল ২০০৪ সালে এই কোম্পানির শেয়ার পৌঁছে গিয়েছিল মাত্র ৫৭.৯২ টাকায়। এটি ছিল এই কোম্পানির শেয়ারের সবথেকে নিম্নতম দাম। অর্থাৎ সেই সময় যদি এই কোম্পানির শেয়ারে আপনি ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতেন, তার বিনিময়ে আপনি এই কোম্পানির ১৭২৬টি শেয়ার পেতেন। এই শেয়ার যদি আপনি এতদিন পর্যন্ত টানা চালিয়ে যেতেন, তাহলে পাঁচবার বোনাস শেয়ার পেয়ে এই মুহূর্তে আপনার শেয়ার সংখ্যা দাঁড়াত ৪৬,০২৬ তে। অর্থাৎ, যদি ২০ বছরের জন্য কেউ এই Wipro কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন, তাহলে এই মুহূর্তে তাঁর কাছে মোট ৪৬,০২৬টি শেয়ার থাকত।

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এর হিসেব দেখতে গেলে এই মুহূর্তে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে Wipro কোম্পানির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪২১.৭৫ টাকা। আজকের হিসেব দেখতে গেলে যদি আপনার কাছে এই মুহূর্তে ওই কোম্পানির ৪৬,০২৬টি শেয়ার থাকত তাহলে তার দাম হত ১.৯৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। বিগত কয়েক মাসে উইপ্রো কোম্পানি-র শেয়ার ৪৩ শতাংশ নিচে নামলেও, এখনও এই কোম্পানির শেয়ার রয়েছে মাল্টিব্যাগার। তবে কিছুদিন আগেই এই কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৫০০ টাকার ওপরে লেনদেন করছিল। আশা করা যায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আবারও আগের জায়গায় ফিরে যাবে এই কোম্পানির শেয়ার মূল্য। অর্থাৎ, সেই সময় আপনার রিটার্ন হবে ২ কোটি টাকার থেকেও অনেকটাই বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব সময় বড় কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগ করা উচিত। কখনও কখনও এই সমস্ত কোম্পানির স্টক নিচের দিকে নামতে পারে। সব সময় যে প্রত্যেকটি কোম্পানির স্টক ভালো জায়গায় থাকবে,  আগে থেকে তার কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। মার্কেটে যদি নিজের জায়গা তৈরি করতে হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। বজায় রাখতে হবে ধৈর্য এবং তার সঙ্গেই সেই কোম্পানির ওপর ভরসা রাখতে হবে। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত যদি কোনও বড় কোম্পানির শেয়ারে আপনি বিনিয়োগ করেন, তাহলে  ৯০% ক্ষেত্রে আপনি ভালো রিটার্ন পাবেন। ডিভিডেন্ড, বোনাস এবং অন্যান্য সমস্ত লাভ মিলিয়ে আপনাকে দারুণ রিটার্ন দেবে এই সমস্ত বড় কোম্পানির মাল্টিব্যাগার স্টক। তাই যদি পুজোর মুখে আপনারও নতুন বিনিয়োগের ইচ্ছে থাকে, তাহলে অবশ্যই বেছে নিন ভারতের সবথেকে বড় আইটি কোম্পানি Wipro-কে।

More Articles