১ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪.৫ কোটি! আপনিও বিনিয়োগ করছেন তো এই মাল্টিব্যাগার সুপার স্টকে
২৩ বছরের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক ৪৪,৯৫১.৬১% রিটার্ন দেওয়ার রেকর্ড তৈরি করতে পেরেছে HAIL। অর্থাৎ ২৩ বছরে যারা ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাদের বিনিয়োগ-মূল্য সর্বাধিক ৪.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
বিগত ২৩ বছরে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা হাতে পেয়েছেন ৪.৫ কোটি টাকা রিটার্ন। বর্তমানে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও শেয়ার মার্কেটের সবথেকে বড় মাল্টিব্যাগার স্টকের তালিকায় এখনও নিজের জায়গা ধরে রেখেছে হানিওয়েল অটোমেশন ইন্ডিয়া লিমিটেড বা ছোটো করে HAIL। এই স্টকে বিনিয়োগ করে লাখপতি হয়েছেন শেয়ার মার্কেটের বহু বিনিয়োগকারী। এই মুহূর্তে এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত রয়েছে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ BSE এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ NSE-তে। বর্তমানে এই কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল ৩৭,১১৭.৫৫ কোটি টাকা, যা শেয়ার বাজারের ইতিহাসের সব থেকে বড়ো মানের কয়েকটি শেয়ারের মধ্যে একটি।
১৯৮৪ সালে এই কোম্পানিটি শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করেছিল এবং এই কোম্পানির প্রধান শাখাটি রয়েছে পুনের হাদাপসার এলাকায়। ইন্টিগ্রেটেড অটোমেশন টেকনোলজির সম্প্রসারণের পাশাপাশি এই কোম্পানির পোর্টফোলিওতে রয়েছে সফটওয়্যার পরিষেবা, পরিবেশগত পরিষেবা, সেন্সিং ও কন্ট্রোলের মতো অত্যাধুনিক কিছু প্রযুক্তিগত বিষয়। তার পাশাপাশি সারা বিশ্বে অটোমেশিন এবং মেশিন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসও প্রদান করে থাকে HAIL। তার পাশাপাশি, ফরচুন ইন্ডিয়া ৫০০ শেয়ারেও নিজের নাম নথিভুক্ত করাতে পেরেছে HAIL।
১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি শেয়ার বাজারে এই স্টকের দাম ছিল মাত্র ৯৩ টাকা। তবে আজ এই স্টক ক্লোজ হয়েছে ৪২,১৮৭ টাকায়। গতকালের থেকে এই দাম ১.৭৫% শতাংশ অর্থাৎ ৭৫২ টাকা কম হলেও রিটার্নের দিক থেকে দেখতে গেলে HAIL প্রকৃতপক্ষে একটি মাল্টিব্যাগার স্টক।
আরও পড়ুন- শেয়ার বাজারের রাজা! কোটিপতি হয়েও কেন কোঁকড়ানো শার্ট পরতেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা?
মাল্টিব্যগার রিটার্ন
HAIL কোম্পানির এই শেয়ার সাধারণত বিনিয়োগকারীদের মাল্টিব্যাগার রিটার্ন দেওয়ার জন্য জনপ্রিয়। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ৮.১৮% রিটার্ন দিয়েছিল এই স্টক। পাশাপাশি, এক মাসে রিটার্নের পরিমাণ ছিল ৯.১৩%। যে সময়ে সমস্ত কোম্পানির স্টক নিম্নমুখী গতি ধারণ করতে শুরু করেছিল, সেই মন্দার সময়েও বিনিয়োগকারীদের উচ্চ হারে রিটার্ন দিতে পেরেছিল HAIL। গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির স্টক ২০০.০২% রিটার্ন দিয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত ১৭ বছরে মাত্র ২.৪% ট্রেডিং সেশনে এমন হয়েছে যে, HAIL এর স্টকের মূল্য ৫% এর বেশি পড়েছে।
এই কোম্পানির স্টক গ্রহণ করলে কোনরকম অতিরিক্ত ঋণের বোঝা থাকে না। নিফটি ১০০ এর থেকেও বেশি রিটার্ন দিতে সক্ষম HAIL এর এই মাল্টিব্যাগার স্টক। ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩ বছরে নিফটি ১০০ যেখানে বিনিয়োগকারীদের ৪০.৬৩% রিটার্ন দিয়েছিল, সেখানেই HAIL বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন দিয়েছিল ৫৩.৮৩%। দালাল স্ট্রিট ইনভেসমেন্ট জার্নালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১ জুলাই ২০২২ এই কোম্পানির স্টকের দাম ২০২.৪৫ থেকে এক লাফে ৩৫,৯৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপরে সেই সময়ে যে সমস্ত বিনিয়োগকারীরা এই স্টকে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা একসঙ্গে ১৭৬ কোটি টাকা রিটার্ন পেয়েছিলেন এক দিনেই। অর্থাৎ রিটার্নের পরিমাণ ছিল ১৭,৬৫৭%!
কোম্পানি ওভারভিউ
Honeywell Automation India Limited (HAIL) স্থাপন হয়েছিল টাটা গ্রুপ এবং হানিওয়েল কর্পোরেশনের একটি যুগ্ম পরিকল্পনায়। যখন এই কোম্পানিটি প্রথম স্থাপিত হয়েছিল, তখন এর নাম ছিল টাটা হানিওয়েল লিমিটেড। তবে পরবর্তীতে ২০০৪ সালে হানিওয়েল লিমিটেড টাটা গ্রুপের সমস্ত শেয়ার নিজের নামে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরেই এই কোম্পানির নামের থেকে টাটা গ্রুপের নাম সরে গিয়ে হয় হানিওয়েল এশিয়া প্যাসিফিক ইনকর্পোরেশন। তবে ভারতের জন্য এই নামটি খুব একটা ভালোভাবে কার্যকরী ছিল না। সেই কারণেই, ঠিক তার পরের বছর, হানিওয়েল কর্পোরেশন এই কোম্পানির দ্বিতীয়বার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৫ সালে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে এই সংস্থা। নাম দেওয়া হয়, হানিওয়েল অটোমেশন ইন্ডিয়া লিমিটেড বা HAIL।
স্টক ইতিহাস
এই কোম্পানির স্টক ইতিহাসের উপরে নজর রাখলে দেখা যায়, এই কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে ৯৩ টাকা দামের স্টক নিয়ে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্ট হয়েছিল। তবে তারপর থেকে, এই কোম্পানির শেয়ার মূল্য লাগাতার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ বছরের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক ৪৪,৯৫১.৬১% রিটার্ন দেওয়ার রেকর্ড তৈরি করতে পেরেছে HAIL। অর্থাৎ ২৩ বছরে যারা ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাদের বিনিয়োগ-মূল্য সর্বাধিক ৪.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। যদি আমরা গত ৫ বছরের ইতিহাস দেখি, তাহলে ১৩,৩৩৪ টাকা থেকে আজ ৪২,১৮৭ টাকায় পৌঁছেছে এই স্টকের দাম। অর্থাৎ গত ৫ বছরে ৩১৬.৫ শতাংশ রিটার্ন বিনিয়োগকারীদের দিয়েছে এই মাল্টিব্যগার স্টক।
২০২২ সালে যেহেতু ভারতীয় স্টক মার্কেট ওঠানামা করছে, তাই এই স্টকে সব সময় একই রকম রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না। কখনও কখনও লাল কালিতেও ট্রেড করছে এই কোম্পানির স্টক। ২০২২ সালে এখনো পর্যন্ত প্রায় ১.৫% নেগেটিভ রিটার্ন দিয়েছে HAIL।
আরও পড়ুন- শেয়ার বাজারে টানা মন্দা, এর মাঝেও মোটা মুনাফা পেতে ভরসা রাখুন এই স্টকগুলিতে
এই স্টকে কি এখন বিনিয়োগ করা উচিত?
ব্রোকার ফার্ম শেয়ার খানের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে এই কোম্পানির পারফরম্যান্স এস্টিমেটের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি। যেহেতু ২০২২ সালে ভারতীয় অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায়, এবং শেয়ার মার্কেটও ওঠানামা করতে শুরু করেছে, তাই আগে থেকে কোনও কোম্পানির ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী দিতে চাইছেন না অর্থনীতিবিদরা। তবে হ্যাঁ, এই বছরে এই কোম্পানিটির নিট মুনাফা ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে করা হয়েছিল এই কোম্পানি ৭৪৪ কোটি টাকা মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে। তবে, সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীকে ছাপিয়ে গিয়ে এবছর ৭৮৬ কোটি টাকা মুনাফা ঘরে তুলতে পেরেছে এই কোম্পানিটি। গ্রস মুনাফা আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৪% কম থাকলেও, মনে করা হচ্ছে যেহেতু ভারতে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই কারণেই এই গ্রস মুনাফার মান কমেছে। তবে, এই কোম্পানির ক্যাশ পজিশন এবং অ্যাসেট-লাইট বিজনেস মডেল এখনও অত্যন্ত যুগোপযোগী।
শেয়ার খানের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দুর্দান্ত বিজনেস মডেলের পাশাপাশি এই সংস্থা সম্পূর্ণভাবে করমুক্ত। অর্থাৎ যদি আপনি এই কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন, তাহলে আপনাকে করের বোঝা মাথায় নিতে হবে না। দামের নিরিখে কিছুটা বেশি হলেও, যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে, HAIL আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে দারুণ একটি স্টক। অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মাসে এই কোম্পানির স্টক মূল্য আবারও ঊর্ধ্বমুখী হবে। ৪৯,৭৫০ টাকার অঙ্ক স্পর্শ করবে এই কোম্পানির স্টক মূল্য। তাই যদি HAIL আপনার উইশলিস্টে থাকে তাহলে আর দেরি না করে, করেই ফেলুন বিনিয়োগ।