বিজেপি হারলে শেয়ার বাজারে বিপুল পতন! কী করা উচিত এখন?
BJP and Stock Market: বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে অস্থিরতা আরও বাড়তে চলেছে। ফলে, এই মুহূর্তে ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ না করতে পারলে সমূহ ক্ষতি।
প্রায় দু' মাসের লোকসভা নির্বাচন শেষের মুখে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে তৃতীয় দফার জন্য নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কিনা তার উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর তো করছেই, দেশের স্টক মার্কেটের সমস্ত ওঠা নামাও দাঁড়িয়ে আছে বিজেপির জয় অথবা হারের উপর। এই মুহূর্তে যারা শেয়ারবাজার, স্টক কেনাবেচায় জড়িত, তাদের তাই বেশি সতর্ক থাকতে হবেই। কোন খাতে বিনিয়োগ করলে ভরাডুবি আর কোন খাতে বিনিয়োগে লাভ তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশেষজ্ঞ মহলে। কোটাক অল্টারনেট অ্যাসেট ম্যানেজারের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট জিতেন্দ্র গোহিল যেমন বলছেন, এনডিএ জোট পরবর্তী সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে স্টক মার্কেট ২০ শতাংশেরও বেশি পড়ে যেতে পারে এবং তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দীর্ঘ দীর্ঘ সময় লাগবে। অবশ্য এই ধরনের ফলাফলের সম্ভাবনা যে ক্ষীণ তাও বলছেন জিতেন্দ্র। তবে বিনিয়োগকারীদের আগেভাগেই সতর্ক হতে বলছেন তিনি যাতে নির্বাচনের ফলাফলের আগেই ঝুঁকি কমানো যায়।
জিতেন্দ্র গোহিল বলছেন, বিজেপি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং এনডিএ সরকার গঠন করবে এই সম্ভাবনাই প্রবল। নির্বাচন ১ জুন শেষ হবে এবং ৩ জুন এক্সিট পোল হবে। বিগত দু'টি নির্বাচনেই, নির্বাচনী ফলের পূর্বাভাসের তুলনায় বিজেপি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি আসন পেয়েছে।
আরও পড়ুন- মোদির কথা শুনতে চাইছে না মানুষ! কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে হু হু করে কমছে মোদির ‘ভিউ’?
বেকারের সংখ্যা বাড়া, শিক্ষার বেহাল দশা, কট্টর হিন্দুত্ববাদকে আরও চড়িয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানো এবং ইডি-সিবিআইয়ের মতো সরকারি সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগের খানিক ফল যে ভুগতে হবে না বিজেপিকে, তা নয়। তবে, এবার আরও বেশি মহিলা ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির, কঠিন সময়ে অর্থনীতিকে পরিচালনা করা, কঠোর বিদেশী নীতির জন্য কিছু ভোট বাড়বে এবং সর্বোপরি দুর্বল বিরোধীদের ভোটের শেয়ার বিজেপিতে যাবে এবার, বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
জিতেন্দ্র গোহিলের দাবি, গতবারের ৩০৩ আসন সংখ্যার তুলনায় ১০-২০ টা আসন বিজেপির এদিক ওদিক হলেও জয়ের পার্থক্যে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না, কারণ বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চান এবং স্থিতিশীল সরকার চান। সুতরাং, বিজেপির পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাজারের জন্য সর্বোত্তম। এবার যদি বিজেপি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে কম আসন পায় এবং এনডিএ শরিকদের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে তবে কী হবে? এই পরিস্থিতিতে বাজারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ প্রভাব পড়বে বলে ব্যাখ্যা শেয়ার বিশেষজ্ঞদের। এনডিএ সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে বাজার ২০ শতাংশের বেশি প্রভাব পড়বে যা স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে।
আরও পড়ুন- কাঁটা উপড়ে ফেলতে দক্ষ মোদি! ক্ষমতায় আসতে কাকে কাকে পথ থেকে সরিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি?
বিজেপি হেরে গেলে, পিএসইউ, মূলধনী পণ্য, উৎপাদন (বিশেষ করে পিএলআই স্কিম সম্পর্কিত সেক্টর), প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত স্টকগুলিতে বড় প্রভাব পড়বে। তবে আইটি এবং এফএমসিজি সেক্টরে শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখা যেতে পারে। এই মুহূর্তে শেয়ার বাজার অস্থির তা বলাই বাহুল্য। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে অস্থিরতা আরও বাড়তে চলেছে। ফলে, এই মুহূর্তে ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ না করতে পারলে সমূহ ক্ষতি। স্টক বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব ভাসিন বলছেন, এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের উচিত স্টক বিক্রি করে প্রফিট বুক করা। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অন্তর্ভুক্ত কিছু স্টক বিক্রি করে দেওয়া উচিত। পরিকাঠামো, রেল, প্রতিরক্ষা এবং পিএসইউ খাতের বাজার বেশ ভালো চলেছে ঠিকই, তবে, এবার এই স্টকগুলি বিক্রি করে মুনাফা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। তাই এই খাতের স্টক কেনা থাকলে এখুনি তা বিক্রি করে দেওয়া উচিত। স্টক বিক্রি করে নগদ ধরে রাখতে হবে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ কেটে গেলেই বাজারের ভাবগতিক বোঝা যাবে।
তবে ভোটকালীন ও ভোটপরবর্তী অস্থিরতা সত্ত্বেও কিছু খাতে বিনিয়োগের ভালো সুযোগও আছে, যেমন, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, এফএমসিজি, রিয়েল এস্টেট। ভোডাফোন, ইন্ডিয়াবুলস রিয়েল এস্টেটের স্টকগুলির অবস্থাও বাজারে খুবই ভালো। তবে, আগামীতে এফএমসিজি, বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও স্পেশালিটি কেমিক্যাল- এই তিনটি খাত আউটপারফর্ম করতে পারে বলেও মনে করছেন সঞ্জীব ভাসিন। তাই বিনিয়োগকারীরা রিটার্ন পাওয়ার জন্য এই খাতগুলির স্টকের উপর লক্ষ্য রাখতে পারেন।