বাংলায় দেদার চল কচুরি, লুচি এবং পুরির, জানেন আসলে কী তফাৎ এই তিনটি খাবারের?

Interesting Facts About Luchi : বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে অবশ্য লুচি, পুরী আর কচুরী তিনটে প্রায় একই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে ভিন্ন ভিন্ন

ছুটির সকাল মানেই পরিবারের সঙ্গে তোয়াজ করে বসে জলখাবার। নিত্যদিনের পাউরুটি, কেক ইত্যাদিকে সাময়িক ছুটি দিয়ে গরম গরম ফুলকো লুচি আর সাদা আলুর তরকারি। বাঙালি বাড়ির এই স্বাদের সত্যিই কোনও জবাব নেই। রান্নাঘর থেকে ছাঁকা তেলে লুচি ভাজার গন্ধ আসা মাত্রই মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভুতি তৈরি হয় আমাদের। হঠাৎ করেই ভুলে বসতে ইচ্ছে হয় ডায়েট চার্টের তালিকা। তবে এই লুচির সফর শুধু এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে যোগ হয় কচুরি এবং পুরিও।

কোথাও লুচি, কোথাও পুরি, কোথাও আবার কচুরি, রাস্তার মোড়ে মোড়ে আজকাল জলখাবারের দোকানে মেলে চিরাচরিত এই স্বাদ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নামের এমন হেরফের নিয়ে জানেনা কেউই। লুচি এবং পুরির পার্থক্য যদিও বা কেউ কেউ বলতে পারবে, কিন্তু পুরির সঙ্গে কচুরির পার্থক্যটা আসলে ঠিক কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু জানে না বেশিরভাগ জনই।

ভারতীয় উপমহাদেশে খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই তিনটিই। বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে অবশ্য লুচি, পুরি আর কচুরি তিনটে প্রায় একই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে ভিন্ন ভিন্ন। যদি এই তিনটির শ্রেণীবিন্যাস করতে যান তাহলে বলতে হয় এই তিনটি পদই একই বর্গের কিন্তু তাদের গোত্র আলাদা আলাদা।

আরও পড়ুন - গরম ফুলকো লুচি বানাতে অপরিহার্য, কিন্তু ‘ময়ান’ শব্দের আসল অর্থ কী? ফেল করেছে অভিধানও

ময়দায় পরিমাণ মতো নুন, চিনি এবং ময়ান দিয়ে মেখে, তারপর তা থেকে লেচি কেটে গোল গোল করে বেলে ছাঁকা তেলে ভাজা হয় লুচি। পুরি এবং কচুরি তৈরিতেও অবশ্য এই ময়দা মাখা এবং ভাজার ধরনে বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য আছে লেচির মধ্যে পুর ভরার প্রথা নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে, নাম শুনেই আন্দাজ করা যায় ‘পুরি’ অর্থাৎ তাতে পুর ভরা আছে। তাহলে কচুরির সঙ্গে কী তফাৎ পুরির? কচুরিতেও তো দিব্যি ভরা থাকে পুর। কড়াইশুটির কচুরি, হিংয়ের কচুরি অথবা মাছের কচুরির চল বাংলায় বহুকালের।

আসল বিষয়টা হল, পুরিতে আসলে লেচির মধ্যে ডাল বাটা অথবা আলুর ভর্তা জাতীয় পুরের ব্যবহার,আর অন্যদিকে কচুরি বললে বোঝায় লেচির মধ্যে ঠাসা পুর। মিষ্টির দোকানে গুটকে কচুরি বলে যে পদটি বিক্রি হয় তার মধ্যে যেমন পুর ভরা থাকে ঠিক তেমনটা। তাই কড়াইশুটির কচুরির ক্ষেত্রেও বাঙালি বাড়িতে বড় বড় আকারে লেচি করা হয়, যাতে তার মধ্যে ভর্তি করে পুর দেওয়া যায়। অনেকে যদিও বলেন লুচি আর কচুরির ক্ষেত্রে কেবল সাবেকি সাদা ময়দার ব্যবহার করা হতো, কিন্তু পুরির ক্ষেত্রে আটার ব্যবহার হতো।

রন্ধন এমন একটা শিল্প যা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে সাযুজ্য করে তুলেছে। স্বাদ এবং যুগের চাহিদা, এই দুয়ের প্রভাব পড়েছে সাবেকি পদেও। প্রয়োজনে এসেছে ফিউশন। তাই পুর ভরার ঝক্কি এড়াতে ময়দার সঙ্গে একযোগে মেখে নেওয়া হয় পুর এখন। তাতে অবশ্য স্বাদও হয় ভালোই। তবে বাঙালি বাড়িতে এখনও জলখাবারের প্রসঙ্গ উঠলে ফিরে ফিরে আসে লুচির কথাই। আর কচুরি হয় উৎসব অনুষ্ঠানে। বছরের বিশেষ কিছু সময়ে। তবে আজকাল রাস্তার কিছু দোকানে লুচিকেই বিক্রি করা হয় পুরি বলে। এতে অবশ্য খানিকটা হিন্দি আগ্রাসন যে আছে, তা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে নামে আর কীই বা যায় আসে, আসল কথা হল ওই উদর এবং মননের তৃপ্তি। সেটুকু যে নাম ভেদেও তিনটে পদই দিতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।

More Articles