বিশ্বের 'অশ্লীলতম' উৎসব! জাপানের এই পুরুষাঙ্গের মিছিল কেন এত জনপ্রিয়?

Japan Phallus Festival: কানামারা মাতসুরির শোভাযাত্রায় মূলত তিনটি মিকোশি বা বিশাল পুরুষাঙ্গ থাকে।

ভদ্রতা ও নম্র আচার-ব্যবহারে যদি কোনও দেশের সুনাম থাকে, তা নির্দ্বিধায় জাপান। জাপানিরা নম্র, কখনও কোথাও দেরি করে না এবং ভীষণ ভব্য আচরণে অভ্যস্ত। জাপানিদের জীবনযাপন যে কারণে বহু মানুষের অনুকরণীয়। তবে এই নরম, ভদ্র মানুষদের একটি উৎসবে গেলে খানিক ধাক্কা লাগতে পারে ভাবাবেগে! টোকিওর ঠিক দক্ষিণে কাওয়াসাকিতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এমন এক ধর্মীয় উত্সব যা জাপানিদের সম্বন্ধে সেই চিরাচরিত ধারণা খানিকটা বদলাতেও পারে, জাগাতে পারে বিশেষ আগ্রহও। কানামারা মাতসুরি বা 'স্টিল ফ্যালাস উৎসব’ হচ্ছে পুরুষাঙ্গের উৎসব!

এপ্রিলের প্রথম রবিবার কাওয়াসাকি জুড়ে সর্বত্র চোখে পড়বে নানা রঙ এবং আকারের পুরুষাঙ্গ। বিশাল এক মিছিল ঘুরে বেড়ায় শহরের রাস্তায়, আর সেই মিছিলের মূল আকর্ষণ বিশাল লিঙ্গ মিকোশি বা উপাসনালয়ের রেপ্লিকা। প্রতিটি মিকোশি বয়ে নিয়ে যান সাজগোজ করা মানুষ। কিছু কিছু পুরুষ আবার ফান্ডোশি মানে লয়েনক্লথের অন্তর্বাস পরেই শোভাযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। কানামারা মাতসুরি বহিরাগতদের কাছে 'অদ্ভুত' বা 'অশ্লীল' হলেও আসলে জাপানের মানুষদের কাছে এ এক গুরুতর ধর্মীয় উৎসব, যা জাপানের প্রকৃতি-উপাসনাকারী শিন্তো ধর্মের সঙ্গে যুক্ত।

আরও পড়ুন- দেওয়ালে, দরজায় সর্বত্র আঁকা পুরুষাঙ্গ! ভুটানের এই রহস্যময় রীতির আসল কারণ কী?

কথিত আছে, এই পুরুষাঙ্গের উৎসবের জন্ম এডো যুগে। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, একটি রাক্ষস এক মহিলার প্রেমে পড়ে কিন্তু সেই মহিলাকে অন্য কারও প্রেমে পড়তে দেখে আর সইতে পারেনি। সেই রাক্ষস তখন ওই মহিলার যোনির মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। যখনই কোনও প্রেমিকের সঙ্গে যৌনতায় যেতেন ওই মহিলা তখন সেই প্রেমিকের লিঙ্গে কামড়ে দিত রাক্ষস। এই অসুবিধা থেকে বাঁচতে এক ফন্দি আঁটেন ওই মহিলা! তিনি ইস্পাতের তৈরি একটি লিঙ্গ নিজের যোনিতে প্রবেশ করান। বুঝতে না পেরে রাক্ষস দেয় মোক্ষম কামড়। ব্যাস, দাঁত ভেঙে কুটিকুটি! রাক্ষসটি শেষমেশ পালিয়ে যায়।


কানায়ামা জিনজার পুরোহিতরা এই উৎসবের আয়োজক। বৃহত্তর ওয়াকামিয়া হাচিমাঙ্গুর একটি 'উপ-তীর্থস্থান' হচ্ছে কানায়ামা জিনজা। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে, কানায়ামা এমন একটি স্থান হয়ে উঠেছে যেখানে দম্পতিরা উর্বরতা এবং বৈবাহিক সম্প্রীতির জন্য প্রার্থনা করে আসছেন। এডো যুগে অর্থাৎ ১৭ থেকে ১৯ শতকের মধ্যে, যৌনকর্মীরা নিজেদের যৌনরোগ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিডেড ডিজিজ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই উপাসনালয়েই প্রার্থনা করত। এমনকী সেই সময়ে উর্বরতা এবং যৌন স্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে একটি উত্সবও পালিত হতো। কিন্তু এই ঐতিহ্যটি ১৮০০-র দশকের শেষ দিকে এসে হারিয়েই যায়। ১৯৭০-এর দশকে, তৎকালীন প্রধান পুরোহিত হিরোহিকো নাকামুরা এই উৎসবকে ফের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকেই পালিত হচ্ছে এই নতুন কানামারা মাতসুরি, পুরুষাঙ্গের এক ব্যাপক এবং সুস্পষ্ট উদযাপন।

জাপানিদের যৌন জীবন নিয়ে বিশেষ তথ্য মেলে না। খুব সম্প্রতি, কানামারা মাতসুরি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। ঠিক পাঁচ বছর আগে জাপানের এই উৎসব বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। মাতসুকো ডিলাক্স নামে একজন জাপানি টিভি ব্যক্তিত্ব নিজের ক্রস-ড্রেসিং এবং প্রো-সেক্সুয়ালিটি মতামতের জন্য সুপরিচিত। তার নামের সঙ্গ মিল থাকা এই উত্সবটি বিদেশের পাশাপাশি জাপানের নিজস্ব নাগরিকদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে৷

আরও পড়ুন- ২,০০০ বছর আগেও ছিল সেক্স টয়! ৭ ইঞ্চির প্রাচীন ‘ডিলডো’ আবিষ্কার গবেষকদের!

কানামারা মাতসুরির শোভাযাত্রায় মূলত তিনটি মিকোশি বা বিশাল পুরুষাঙ্গ থাকে। প্রথমটি সোজা এবং চকচকে কালো ধাতু দিয়ে তৈরি। শিস দিতে দিতে উপাসকদের একটি দল এই পুরুষাঙ্গ বয়ে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়টি, পুরনো কাঠের তৈরি, প্রাচীন। তৃতীয়টি বহন করে জোসো গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর মানুষ এলিজাবেথ কাইকান নামক একটি ক্রস-ড্রেসিং ক্লাবের সদস্য। উজ্জ্বল মেকআপ এবং রঙিন উইগ পরে থাকেন তারা। হাওয়াতে মিকোশিকে তুলে ঝাঁকান। এখানেই শেষ না। শোভাযাত্রায় লিঙ্গ আকৃতির সবুজ, নীল, বেগুনি এবং গোলাপী রঙের ললিপপও খেতে খেতে এগিয়ে যান মানুষ। সন্তানদের কাঁধে চাপিয়ে এই শোভাযাত্রায় পা মেলান জাপানের মানুষ।

অনেকেই উত্সবটিকে মজার বিষয় হিসাবেই দেখেন। কিন্তু এই উপাসনালয়ের প্রাক্তন প্রধান পুরোহিত কিমিকো নাকামুরার (যিনি উত্সবটি ফের চালু করেছিলেন সেই হিরোহিকোর স্ত্রী) মতে এই উৎসবের একটি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণও রয়েছে৷

More Articles