নতুন অবতারে বাজারে আসছে ভারতের 'কিডন্যাপিং কার', হাতের নাগালে কবে পাচ্ছেন জানুন
Maruti Suzuki Omni Electric car : এখনও রাস্তায় এই ধরনের বেশকিছু ভ্যান দেখা যায়। তবে এবার এই গাড়িটি ভারতের বাজারে নতুন ইলেকট্রিক অবতারে আসতে চলেছে।
Hyundai, Tata, Mahindra থেকে শুরু করে ভারতের সমস্ত বড় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলি তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি ভারতের মার্কেটে লঞ্চ করার পরিকল্পনা করে ফেলেছে। এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই সমস্ত কোম্পানির ইলেকট্রিক গাড়ি ভারতের বাজারে আসবে। বিভিন্ন পুরনো গাড়ির ইলেকট্রিক মডেলগুলিও রীতিমতো ভাইরাল হচ্ছে। এই আবহেই এবার বাজার কাঁপাতে হাজির মারুতি সুজুকি ওমনি ইলেকট্রিক ভেহিকেল।
মাল্টিপারপাস ভেহিকেল সেগমেন্টে একসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এই মারুতি সুজুকি ওমনি ভ্যান। গাড়িটি দেখতে ছোট হলেও আটজন খুবই সহজে এখানে বসতে পারেন। তবে তার থেকেও বেশি ইন্টারেস্টিং হল সিনেমায় এর ব্যবহার। হিন্দি এবং বাংলা সিনেমায় কিডন্যাপিং দৃশ্যগুলিতে এই গাড়ি ব্যবহার করা হতো। সেটি এতটাই বেশি ছিল যে, অনেকে এই মারুতি ওমনিকে একটা সময় 'কিডন্যাপিং কার'-ও বলতেন।
তবে, দীর্ঘ সময় ধরে জাঁকিয়ে ব্যবসা করার পর, বছর কয়েক আগে এই ভ্যানের প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয় মারুতি সুজুকি কোম্পানি। তবে এখনও ভারতের রাস্তায় এই ধরনের বেশকিছু ভ্যান দেখা যায়। তবে এবার এই গাড়িটি ভারতের বাজারে নতুন ইলেকট্রিক অবতারে আসতে চলেছে বলেই খবর। একটি নতুন রেন্ডার প্রকাশ্যে এসেছে যেখানে গাড়িটির বেশ কয়েকটি রং দেখা গিয়েছে। সেই রেন্ডার থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, পুরনো MPV মডেলের মতো লুক থাকলেও অনেকাংশেই পাল্টাতে চলেছে মারুতি সুজুকি ওমনি।
আরও পড়ুন : অসাধ্য সাধন! বাতিল জিনিস দিয়ে তৈরি আস্ত গাড়ি, তাক লাগালেন নদিয়ার শ্রমিক
এই মুহূর্তে ভারতের বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ির একটা বিশাল চাহিদা রয়েছে। সকলেই কার্যত এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন, ইলেকট্রিক গাড়ি হতে চলেছে ভারতের আসল ভবিষ্যৎ। তাই, অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার শশাঙ্ক শেখর সম্প্রতি নিজের প্রচেষ্টায় বানিয়ে ফেলেছেন মারুতি সুজুকি ওমনির একটি ইলেকট্রিক অবতার। ICE চালিত মডেলের মতোই, এই গাড়ির ইলেকট্রিক মডেলটিও একই রকম ভাবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে সকলের মধ্যে।
বাইরে থেকে এর ডিজাইন একেবারে পুরনো ওমনি গাড়ির মতই। তবে, পরিবর্তন এসেছে ইঞ্জিনে। এই গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে চৌকো এলইডি হেডলাইট, তার সঙ্গেই রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড এলইডি ডিআরএল। পুরনো মারুতি সুজুকি ওমনি গাড়িতে কোনওরকম ফ্রন্ট গ্রিল ব্যবহার করা হতো না। সেরকমভাবেই এই মডেলেও দেখা যাবে না কোনও ফ্রন্ট গ্রিল। এছাড়াও, এই গাড়িতে আপনারা দেখতে পাবেন এলইডি ব্লিংকার।
৪০০ কিলোমিটারের রেঞ্জ
নতুন ইলেকট্রিক মডেলের ওমনি গাড়িতে থাকবে কম্প্যাক্ট ফুটপ্রিন্ট, বক্সি শেপ এবং স্লাইডিং দরজা। এছাড়াও এই গাড়িতে পিছন দিকেও একটি স্লাইডিং দরজা দেওয়া হয়েছে। এই গাড়িটির নিচের দিকে একটি কালো রঙের প্লাস্টিক ক্ল্যাডিং করা হয়েছে। এই গাড়ির চাকা আকারে অনেকটাই ছোট হলেও, অ্যালয় হুইল ব্যবহার করার কারণে দেখতে খারাপ লাগছে না। এই গাড়ির সামনে থাকছে এলইডি হেড লাইট। এছাড়াও দেওয়া হচ্ছে আরও বেশকিছু ইউজার ফ্রেন্ডলি ফিচার, যেমন রিয়ার ভিউ ক্যামেরা, ডোর হ্যান্ডেল, লো ড্র্যাগ হুইল। মনে করা হচ্ছে আগের মতোই, এই ওমনি গাড়িতে আপনারা পেয়ে যাবেন আট সিটের অপশন। তবে অনেকে বলছেন, এই গাড়িতে ৬ জন বসতে পারবেন এবার থেকে। রেন্ডারের ছবি দেখে অনেকের বক্তব্য, এই গাড়িতে নাকি উল্টোদিকের সিটটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একবার চার্জ দিলে এই গাড়িটি ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ দিতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে। সেই কারণেই গাড়িটি গ্রাম এবং শহর দুই ধরনের জনতাকেই আকৃষ্ট করতে পারে।
আরও পড়ুন : বয়স ষাট, কলকাতার লাল-সাদা স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড লজ্জায় ফেলে ইনোভা-জাগুয়ারকেও
মডেল আপডেট করার সুযোগ ছিল না
২০১৯ সালে ৩৫ বছর পুরনো এই গাড়ির প্রোডাকশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিল মারুতি সুজুকি কোম্পানিটি। এমনিতে বিক্রি ছিল ভালই, তবে এই গাড়ির মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল মারুতি সুজুকি। শেষদিকে ও একই রকম বাজার ধরে রাখতে পেরেছিল এই গাড়িটি। পাশাপাশি তার চালকদের জন্য বেশ কিছু কাস্টমাইজেশনের অপশনও নিয়ে এসেছিল। চালকরা চাইলে এই গাড়িটিকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারতেন। তবে মডেল আপডেট করার সুযোগ কখনই মারুতি সুজুকির কাছে ছিল না।
MARUTI SUZUKI কোম্পানির প্রথম গাড়ি মারুতি ৮০০ লঞ্চ হওয়ার ঠিক এক বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালে মার্কেটে এসেছিল মারুতি ওমনি। তবে নতুন রোড সেফটি নিয়ম আসার পরেই এই গাড়িটি মার্কেট থেকে তুলে নিতে হয়েছিল মারুতিকে। সপ্তম জেনারেশনের সুপার ক্যারিতে ব্যাজ হওয়ার ফলে অমনি গাড়ির নতুন নাম্বারগুলির কথা মাথায় রেখে পরবর্তী মডেল আপডেট করার কোনও সুযোগ ছিল না মারুতির কাছে। সেই কারণেই এই গাড়িটি বন্ধ করে একটি নতুন গাড়ি মার্কেটে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় মারুতি সুজুকি। বাজারে এই পুরনো ওমনি গাড়ির এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই গাড়ির ১৫.৭ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি করেছিল মারুতি সুজুকি। পরবর্তীতে পাকিস্তানে এই গাড়িটি সুজুকি বোলান নামে বিক্রি করা হয়। একটা বিশাল কেবিন স্পেস থাকার কারণে পাকিস্তানে এটিকে মিনিবাস বলা হত। সুজুকি বোলান গাড়িতে ০.৮ লিটারের পেট্রল ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে যা ৪ স্পিড ম্যানুয়াল গিয়ার বক্সের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই গাড়িটির দাম পাকিস্থানে ছিল ১১.৩৪ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন : আজও দু’চাকাতেই গড়াচ্ছে দেশ, গরিব ভারত ভোটে জেতাল স্কুটারকে
ভারতে আসে EECO
Omni গাড়ির প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গেলেও ভারতের এই ধরনের ভ্যান একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিল মারুতি সেটা বলা যাবে না। ওমনি গাড়িটির প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যাবার পরেই ভারতের বাজারে লঞ্চ হয় নতুন মারুতি সুজুকি ইকো (EECO)। এই নতুন MPV তে রয়েছে রিভার্স পার্কিং থেকে শুরু করে কো-ড্রাইভার রিমাইন্ডার সহ একাধিক সেফটি ফিচার। সরকারের তরফে এবিএস, এয়ার ব্যাগ, এবং BS 6 ইঞ্জিন বাধ্যতামূলক করার পরেই এই গাড়িটিকে ভারতের বাজারে নিয়ে আসা হয়েছিল মারুতি সুজুকির তরফ থেকে। এই মুহূর্তে মারুতি সুজুকি ইকো গাড়ির ভারতে দাম ৫.১০ লক্ষ টাকা।