SPADEX মিশন: নতুন বছরে প্রথম মহাকাশ অভিযানে সফল হবে দেশ?
SpaDex Mission: এবারের অভিযানের বিশেষত্বই হচ্ছে এই স্বয়ংক্রিয় ডকিং-আনডকিং মেকানিজম। সেজন্যই প্রায় পৌনে চারশো কোটির এই মিশনের নাম ‘স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট’ বা SpaDeX
কথা ছিল ৭ জানুয়ারি দেশের প্রথম সফল ডকিং পর্যবেক্ষণ করবে উৎসাহী জনতা। চন্দ্রযান বা ইসরোর অন্যান্য সফল অভিযানের পর এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল দেশজুড়ে। কিন্তু যান্ত্রিক কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ৯ জানুয়ারিতেও ডকিং স্থগিত রাখে ইসরো এবং পরবর্তী সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করে ১১ জানুয়ারি। তবে অন্যান্যবারের মতো এবার আর সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না বলেও জানিয়ে দেয়। সদ্য একটি সফল উৎক্ষেপণ দিয়ে বছর শেষ করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। গত ৩০ ডিসেম্বর PSLV-C60 রকেটে করে SDX01 এ SDX02 নামক দু'টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠায় তারা। ২২০ কেজি ভরের উপগ্রহ দু'টির নাম যথাক্রমে 'চেজার' ও 'টার্গেট'। সফল উৎক্ষেপণের পর এখন প্রতিক্ষার পালা, কখন তারা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে তথা লোয়ার অর্বিটে মিলিত হবে অর্থাৎ ডক করবে, পরে আনডক করবে সফলভাবে।
এবারের অভিযানের বিশেষত্বই হচ্ছে এই স্বয়ংক্রিয় ডকিং-আনডকিং মেকানিজম। সেজন্যই প্রায় পৌনে চারশো কোটির এই মিশনের নাম ‘স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট’ বা SpaDeX, যার মুখ্য উদ্দেশ্য আগামী দশ বছরের মধ্যে মহাকাশে ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন, অন্তরীক্ষ স্টেশন স্থাপন করা। যেখান থেকে ভবিষ্যতে মহাকাশে নজরদারি চালানো যাবে, স্পেসওয়াক করা যাবে, ও এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি অবস্থায় গবেষণা চালানো যাবে।
আরও পড়ুন- হচ্ছে না স্পেসএক্সের মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ, কীভাবে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনীতারা?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ডকিং আসলে কী? সোজা কথায়, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ভ্রমণকারী দু'টি মহাকাশযানকে নিখুঁতভাবে প্রান্তিককরণে নিয়ে আসা এবং বাহ্যিক কোনও সাহায্য ছাড়াই তাদেরকে সংযুক্ত করা। স্পেস স্টেশন থেকে যন্ত্রপাতি ও মহাকাশচারীদের স্থানান্তর করার জন্য ডকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই মিশনে ইসরোর PSLV-C60 লঞ্চার দু'টি মহাকাশযানকেই ৪৭৫-কিমি পরিধি বিশিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে নিরক্ষরেখার সঙ্গে ৫৫ ডিগ্রি কোণে স্থাপন করে। এমনকী উপগ্রহ দু'টির বেগও ছিল আলাদা আলাদা, যাতে কক্ষপথে স্থাপনের একদিনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫ থেকে ২০ কিমি।
এক্ষেত্রে প্রপালশন সিস্টেমটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘টার্গেটের’ বেগ কমতে কমতে ‘চেজারের’ বেগের কাছাকাছি চলে আসবে। কিন্তু মিশনের প্রথম মাইলস্টোনের মধ্যে তাদের মধ্যবর্তী ব্যবধান থাকবে ২০ কিমি। তারপর তাদের মধ্যে দূরত্ব কমতে কমতে ৫ কিমি, ১.৫ কিমি, ৫০০ মিটার, ২২৫ মিটার, ১৫ মিটার, ৩ মিটার, তারপর আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, অর্থাৎ ডকিং। আগে ঠিক ছিল ৭ জানুয়ারি সম্পন্ন হবে ডকিং। পরপর দু'দিন ডকিং সফল না হওয়ায় ইসরো তাদের এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়ে দেয়, মহাকাশযানগুলি ১.৫ কিলোমিটার দূরত্বে হোল্ড মোডে রয়েছে, সকালের মধ্যে আরও ৫০০ মিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্যাটেলাইট দু'টি আনডকিং-এর মাধ্যমে দূরে চলে যাওয়ার আগে তাদের ভেতরে বৈদ্যুতিক শক্তির আদানপ্রদান হওয়ার কথা। তারপর কার্যক্রম শুরু করবে তাদের সঙ্গে থাকা পেলোড। 'চেজারে’ থাকছে উচ্চমানের বিশ্লেষণী ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা, অপরদিকে ‘টার্গেটে’ রয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট বহুবর্ণী পেলোড ও রেডিয়েশন মনিটর। এই যন্ত্রগুলি ভবিষ্যতে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশের অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক মূল্যবান তথ্য আমাদের সরবরাহ করবে, যা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতির একটি অপরিহার্য উপাদান।
আরও পড়ুন- এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন ভারতীয় নভোশ্চর! নয়া মাইলফলক ছুঁতে পারবে ISRO?
এই PSLV-C60 রকেটের চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে ‘PSLV অর্বিটাল এক্সপেরিমেন্টাল মডিউল’ বা POEM-4, যেটিতে দু'ডজন পেলোড রয়েছে, এদের মধ্যে ১৪টি বানিয়েছে দেশের বিভিন্ন ইসরো সেন্টার, আর বাকি ১০টি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট সংস্থা। আনডকিং সম্পন্ন হওয়ার পর স্যাটেলাইট দু'টি কাজ করতে শুরু করবে।
মহাকাশে নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি করা ছাড়াও এই SPADEX মিশনের অন্যতম লক্ষ্য হলো ২০২৭ সালের চন্দ্রযান-৪ মিশনে ডকিং-আনডকিং মেকানিজম ব্যবহার করা, যাতে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে কেজি তিনেকের বেশি নমুনা সংগ্রহ করে আনা যায়। একবার এই ডকিং-আনডকিং ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারলে ভারতের মহাকাশ ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হবে, তখন বিদেশি কোনও স্পেস এজেন্সির সহায়তা ছাড়াই কক্ষপথে থাকা যেকোনও নভোযান থেকে নভোচারীদের আনডক করে অন্য নভোযানে ডক করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানান, তিনি আরও জটিল ডকিং সিস্টেম সহ ভারী মহাকাশযান সম্বলিত SpaDeX মিশনের ব্যপারে আশাবাদী, যাতে ভারত স্পেস ভিশন ২০৪৭-এর দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাবে। এই মিশন পুরোপুরি সফল হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিনের পরে ভারত হবে বিশ্বের চতুর্থ দেশ, যারা এই অটোমেটিক ডকিং সিস্টেমের শিরোপা অর্জন করবে।