প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা কি আবার কোনও মায়ার খেলা?

উত্তরপ্রদেশে কার্যত ফাঁকা মাঠে গোল করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। সেইসময় বিরোধী ঐক্য দানা বাঁধেনি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে দ্বিধা করেনি গেরুয়া ব্রিগেড। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শোনা গেছিল, মায়াবতী নাকি তলেতলে বিজেপিকে সাহায্য করেছেন। বিজেপি তার পুরস্কার দেবে না তা হয় নাকি! যদিও রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা আগেই উড়িয়ে দিয়েছেন মায়া নিজেই। কিন্তু এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। আগুনে আবার ঘি ঢেলেছেন অখিলেশ যাদব। এর জবাব দিতে দেরি করেননি বিএসপি সুপ্রিমো। কী বললেন?

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিতে ভোট হস্তান্তরের অভিযোগে মাইনপুরিতে মায়াবতীকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, এখন দেখার বিষয় যে বিজেপি তাঁকে দেশের রাষ্ট্রপতি করে কি না। এরই পাল্টা মায়াবতী বলেন, `সমাজবাদী পার্টির আমাকে রাষ্ট্রপতি করে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার স্বপ্ন ভুলে যাওয়া উচিত। তারা এসব করতে চায় যাতে উত্তরপ্রদেশে তাদের ক্ষমতায় বসার পথ পরিষ্কার হয়। আমি কখনই রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখব না কারণ আমি আরামের জীবন চাই না, সংগ্রামের জীবন চাই। আমি আবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও স্বপ্ন দেখি।'

আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশ জয়ী যোগীকে এবার মোদীর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরবে সঙ্ঘ?

সাংবাদিক সম্মেলনে মায়াবতী আরও বলেন, 'আমাদের সরকারের আমলে তৈরি স্মৃতিস্তম্ভগুলি সপা এবং বিজেপি উভয় সরকারই অবহেলিত হয়েছে, হচ্ছে! এই বিষয়েই রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এস সি মিশ্রের নেতৃত্বে বিএসপির একটি প্রতিনিধি দল যোগীজির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। যদিও অখিলেশ যাদব সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিএসপিকে তার ভোটারদের ভোট বিজেপিতে স্থানান্তর করার অভিযোগ করেছেন! পাল্টা মায়াবতী সপাকে আক্রমণ করে বলেছেন যে ওরাই (সমাজবাদী পার্টি) নির্বাচনকে হিন্দু-মুসলিম ভেঙে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করেছে এবং বিজেপির প্রত্যাবর্তনের দায়ভার ওদেরই! তিনি বলেন রাজ্যে মুসলিম এবং অন্যদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত নৃশংসতা ঘটছে তার জন্য সপা-ই দায়ী।

২০২৪-এ বিজেপিকে ঠেকাতে বিরোধী ঐক্যের পরিসর তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। তবে ২০২৪ এর আগে সবথেকে বড় পরীক্ষা ছিল ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ। এখানে যোগীর গদি নড়াতে পারলে দিল্লি কেঁপে উঠত, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তবে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি বিরোধীরা। বিএসপি নেত্রী অনেক আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি জোটে যাবেন না। তিনি বলেছিলেন, পাঞ্জাব ছাড়া উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল কারও সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বে না। এই সুযোগে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে বেরিয়ে যান যোগী। এখন সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। মায়াবতীকে নিয়ে কম জল্পনা হয়নি। 

ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কি হতে চলেছেন মায়াবতী? সম্প্রতি এমনই জল্পনা ছড়িয়েছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে। তবে এই ‘সম্ভাবনাকে’ রটনা বলে উড়িয়ে দিলেন মায়াবতী স্বয়ং। বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী বলেন যে, তিনি কোনও দলের তরফেই রাষ্ট্রপতি পদের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এর প্রেক্ষিতে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ তুলে বলেন, গেরুয়া শিবির উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রচারে মিথ্যা বলেছিল যে তারা উত্তরপ্রদেশে জয়ী হলে আমাকে রাষ্ট্রপতি করা হবে।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি হিসেবে রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ ২৪ জুলাই শেষ হবে এবং তার আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ হতে হবে। পাঁচ রাজ্যের ভোট মিটে যাওয়ার পর তাই এখন সব রাজনৈতিক দলেরই নজর সেদিকে। দিল্লির রাজনৈতিক মহলে এখন শুধু দু’টো প্রশ্ন, বিজেপি কাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থী করবে? বিরোধীরা কাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থী করবে?

একাধিক রাজনৈতিক দল চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে শক্তিশালী বিরোধী জোট তৈরি করতে। কারণ বিজেপিকে ঠেকাতে বিরোধী মুখ তিনিই। আর তার মহড়া হতে পারে আগামী জুলাই মাসের রাষ্ট্রপতি এবং উপ–রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মধ্য দিয়েই। ইতিমধ্যে সেই বার্তা এসে পৌঁছেছে কালীঘাটে। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) চাইছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের সেই প্রার্থীকে সমর্থন দেবে বিরোধী দলগুলি। সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে,  এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব, আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বিজেডির নবীন পট্টনায়েক–এর সঙ্গে হালকা কথা হয়েই রয়েছে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়বে নয়াদিল্লিতে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে ক্রমেই রাজনৈতিক পারদ চড়ছে। বিজেপি এবং তাদের শরিক দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত হলেও এখনও প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় করতে পারেনি বিজেপি। এদিকে বিজেপিকে ঠেকাতে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। বিজেপির কাছে যে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই, তা জানেন বিরোধীরা। আর তাই সম্মিলিত ভাবে একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে তাঁকে জেতাতে চাইছে কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপির মতো দলগুলি। এই আবহে এবার বিজেপির কৌশল গ্রহণের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কৌশল ঠিক করার অঙ্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। দলের তরফে অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ, সংলাপ এবং সমন্বয়ের সম্মুখভাগে থাকছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

আগামী জুনের মাঝামাঝি সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রার্থীদের নাম নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। একই সময়ে, নন-এনডিএ দলকে খুঁজে বের করার কাজও চলছে যারা বিজেপিকে সাহায্য করতে প্রস্তুত হবে। মে মাস থেকে এসব দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ ও যোগাযোগের কাজ শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোল দিতে বিজেপি যে মরিয়া চেষ্টা চালাবে, তা বলাই বাহুল্য। 
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সরগরম দিল্লি। মায়ার নাম নিয়ে জল্পনা। এই অবস্থায় মায়াবতী পরিষ্কার করে দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের চেনা পিচ ছেড়ে তিনি নড়বেন না। তাও শেষপর্যন্ত মায়ার খেলা- কোনদিকে গড়ায়, তা সময়ই বলবে। নজর থাকবে।

More Articles