পৃথিবীর ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুতে ব্যবহৃত হতো চাকা! নারকীয় যে ইতিহাস অবাক করবে
Breaking Wheel Torture: এই ধরনের নির্যাতন সাধারণত সেই ব্যক্তিদেরই করা হতো, যাদের প্লেগ ছড়ানোর জন্য সন্দেহ করা হতো।
দেহকে ৩৫ টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দেওয়া বেশি ভয়াবহ না কি গিলোটিনে মাথা কেটে নেওয়া? ধারালো যন্ত্রে দেহ ঢুকিয়ে ফালাফালা করে দেওয়া বেশি যন্ত্রণাদায়ক না কি ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে শক দেওয়া ক্রমাগত? যন্ত্রণার কোনও তুল্যমূল্য কি হয় আদৌ? শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মৃত্যুকে কতটা যন্ত্রণাদায়ক করে তোলা যায় তা নিয়ে পরীক্ষা তো কম হয়নি। ইতিহাসে শিহরণ জাগানো এমন বহু ভয়ঙ্কর মৃত্যুর নজির রয়েছে, যা মনে পড়লে আজও কেঁদে ফেলবেন বেশিরভাগ মানুষই। নিষ্ঠুরতা এবং চরম অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে হত্যার একটি নজির পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিল। কিছুকাল আগেই আবিষ্কৃত এক কঙ্কালের পরীক্ষা করে যা তথ্য মিলেছে, তা স্তব্ধ করে দেওয়া মতোই।
জার্নাল অব আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স বলছে, মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকরা মধ্যযুগীয় এক ব্যক্তির কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন। ওই ব্যক্তিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, অমন চূড়ান্ত বেদনাদায়ক নির্যাতন পদ্ধতি তুলনাহীন! শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল ওই ব্যক্তির কিন্তু তার পদ্ধতিটি ছিল অদ্ভুত। কঙ্কালটিকে পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, বয়স কমই ছিল তার। ১৭ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল। ১৩ শতকের কোনও এক সময়ে উত্তর ইতালির মিলানে একটি ক্যাথেড্রালের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন- স্তনবৃন্ত, কাটা জিভ দিয়ে বেল্ট, চেয়ার তৈরি- রাতের ঘুম কেড়েছে বীভৎসতম এই সিরিয়াল কিলাররা

কঙ্কালটির প্রাথমিক পরীক্ষাতেই দেখা গিয়েছিল, বাহু এবং পায়ে একই জায়গাতে ক্ষত ছিল তার। সাফ বোঝা যাচ্ছিল, এই ক্ষত ইচ্ছাকৃত কোনও কিছুর আঘাতের ফলেই সৃষ্ট। ঐতিহাসিক রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা অনুমান করেন, ওই ব্যক্তিকে কুখ্যাত 'চাকা' বা 'ব্রেকিং হুইল' বা 'ক্যাথারিন হুইল' ব্যবহার করে নির্যাতন করা হয়েছিল। চাকা দিয়ে হত্যা? কেমন ছিল এই চাকা?
ব্রেকিং হুইল ছিল মূলত নির্যাতনের যন্ত্র। ইওরোপিয় ইতিহাস বলছে, আধুনিক যুগের শুরুর আগে পর্যন্ত জনসাধারণের মৃত্যুদণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল এই চাকা। এই চাকাটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল তা সময় এবং স্থানের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতো। তবে এই চাকাটি সাধারণত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙে ফেলার কাজেই লাগানো হতো।

ঐতিহাসিক নির্যাতনের কিছু বিবরণ অনুযায়ী, নির্যাতনকারীরা ভারী কাঠের চাকাটি মানুষের গায়ে ফেলত। চাকার আঘাতে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙে যেত। একবার তাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যাথা হয়ে গেলে, ভাঙা অঙ্গগুলি চাকার স্পোকের ভিতরে ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে শক্তভাবে বেঁধে দেওয়া হতো। আঘাতগুলিকে আরও স্পষ্ট করতে, মানুষটিকে আরও কষ্ট দিতে ব্লেড, ভোঁতা কোনও জিনিস, আগুন, চাবুক বা লোহার রড গরম করে ব্যবহার করা হতো। এর পরে চাকাটিকে একটি খুঁটিতে বেঁধে পতাকার মতো ঝোলানো হতো। কষ্ট, যন্ত্রণা পেতে পেতে যখন মানুষটি আধমরা, তখন কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য এই চাকা থেকে ঝুলিয়ে রাখা হতো ওই ব্যক্তিকে। যতক্ষণ না প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, ওভাবেই ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হতো প্রকাশ্যে।
আরও পড়ুন- মমি বিক্রি হতো ফুটপাথে! কেন দলে দলে মমি খাওয়ার হিড়িক উঠেছিল বিশ্বে?
গবেষকরা বলছেন, সাধারণত কোনও জঘন্য অপরাধে অভিযুক্তদের উপরেই নিষ্ঠুর নির্যাতনের এই কৌশলটি প্রায়ই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু উত্তর ইতালিতে, যেখানে এই মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছিল সেখানে এই ধরনের নির্যাতন সাধারণত সেই ব্যক্তিদেরই করা হতো, যাদের প্লেগ ছড়ানোর জন্য সন্দেহ করা হতো। স্রেফ সন্দেহের বশেই এমন ভয়াবহ অত্যাচার করে খুন করা হতো ওই ব্যক্তিদের!

তবে, এই কঙ্কালের ক্ষেত্রে যেন এটুকু নির্যাতনই যথেষ্ট ছিল না! কঙ্কালের ফরেনসিক বিশ্লেষণে তার খুলিতে এক অস্বাভাবিক রৈখিক ফাটলও দেখা গিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, অদ্ভুতভাবে শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল ওই ব্যক্তির। সেই সময় ভারী অস্ত্র দিয়ে মাথায় মারা হয়েছিল তাকে।
যে চাকা আদিম মানুষের সভ্যতার এক উল্লেখযোগ্য বাঁকবদল ঘটিয়েছিল, সে চাকাকেই মানুষ ব্যবহার করেছে এমন নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবেও। সব চাকাই সামনের দিকে এগোয় না, কিছু চাকা আঁধারের উদ্দেশ্যেও রওনা দেয়। মধ্যযুগের ব্রেকিং হুইল আসলে সেই আঁধারেরই চাকা!

Whatsapp
