নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের জেল! ঠিক কোন অভিযোগে কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত?
Muhammad Yunus Jail : গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের মধ্যে ৬৭ জনকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
তিনি নোবেলজয়ী! বাংলাভাষী মানুষ হিসেবে নোবেল সম্মান অর্জন করার গৌরব যাঁর ঝুলিতে খোদ তিনিই কারাদণ্ডপ্রাপ্ত! শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের একটি আদালত।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের বয়স এখন ৮৩। ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। মাইক্রোলেন্ডার, অর্থাৎ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়েই ছিল তাঁর কাজ। ছোট ঋণ বিষয়ে কাজ করা একটি ব্যাংক ব্যবস্থা তৈরির জন্যই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনূস। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম গ্রামীণ টেলিকম। দেশের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষদের জন্য ১০০ ডলারের নীচে ঋণ দিয়েছে এই গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। দেশের কোনও ঐতিহ্যবাহী বড় ব্যাঙ্কই কিন্তু এত কম ঋণ দিতে চায় না দরিদ্র মানুষদের। তাহলে কোন অভিযোগে জেল হলো নোবেলজয়ীর?
বাংলাদেশের আদালত নিজের রায়ে ঠিক কী জানিয়েছে? রাজধানী ঢাকার এই আদালত মহম্মদ ইউনূস এবং অন্য তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। প্রবেশন পিরিয়ড বা চাকরির শিক্ষানবিশি মেয়াদের পরে চাকরিতে নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাঁদের। দেখা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের মধ্যে ৬৭ জনকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বিবাদীরাও কর্তৃপক্ষের কাছে এই কর্মীদের সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালতের রায় অনুসারে, এই চারজন সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বার্ষিক যে লভ্যাংশ দেওয়া হয় তাও আটকে রেখেছে।
মহম্মদ ইউনূস এই গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারপার্সন। অন্য দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান এবং পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মহম্মদ শাহজাহা। এই চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি মোটা টাকার জরিমানাও করা হয়েছে। আদালত আসামিদের আপিলের জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছেন। আপাতত আসামিদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
মহম্মদ ইউনূস অবশ্য তাঁর পক্ষ থেকে হওয়া কোনও রকমের অন্যায়ের কথাই অস্বীকার করেছেন। মহম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলছেন, আদালতের এই রায় ত্রুটিপূর্ণ। তাঁর দাবি, ন্যায়বিচার হয়নি মোটেও তাই উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তারা। মহম্মদ ইউনূসের আরেক আইনজীবী খাজা তনভীর জানাচ্ছেন, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নোবেল বিজয়ীকে হেনস্থার উদ্দেশ্যেই তা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন মহম্মদ ইউনূস। হাসিনা বারেবারেই গরিবদের ঠকানোর অভিযোগ এনেছেন নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে কর এড়ানোর কৌশল হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমকে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন, বলেছেন ঋণ দিয়ে আসলে 'গরিবের রক্ত চুষে নেন' মহম্মদ ইউনূস।
ইউনূসের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ইউনূসকে হেনস্থা করার জন্যই এমন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এই নির্বাচনে হাসিনা চতুর্থবারের জন্য আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন।
গত অগাস্টে, ১৭০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা এবং নোবেল বিজয়ী একটি খোলা চিঠিতে ইউনূসের বিরুদ্ধে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত করার জন্য হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন। ইউনূসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং তহবিল আত্মস্যাতর পাশাপাশি আরও কয়েকটি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।
২০১০ সালে একটি তথ্যচিত্র অভিযোগ করে যে, মহম্মদ ইউনূস ১০০ মিলিয়ন ডলার আত্মস্যাত করেছেন। নরওয়ে সরকার এই টাকাটি দিয়েছিল ব্যাঙ্কে। কোনও অনুমতি ছাড়াই সম্পূর্ণ টাকাটি নিজে নিয়ে নেন ইউনূস। ২০০৭ সালে, ইউনূস প্রকাশ্যে একটি রাজনৈতিক দল শুরু করার পরিকল্পনার কথাও বলেছিলেন। অনেকেই মনে করেন, এই পদক্ষেপটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মূল ক্ষোভের কারণ। সেই সময় তোলাবাজির অভিযোগে আটক ছিলেন হাসিনা। পরে হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। তারপর থেকেই হাসিনার প্রশাসন ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত শুরু করে।
২০১১ সালে অবসরের বয়সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। সেই সময় হাসিনা সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে হেরে যান ইউনূস। ২০১৩ সালে, ইউনূসের নোবেল পুরস্কার এবং একটি বই থেকে রয়্যালটি সহ সরকারি অনুমতি ছাড়া অর্থ গ্রহণের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।