ট্রাম্পের পরিবারই 'অনুপ্রবেশকারী'! কেন অভিবাসীদের নিয়ে কড়া আমেরিকা?
Donald Trump Migration: কাজের দাবিতে পথে নামা কর্মহীন মানুষদের বোঝানো হয়, বেআইনি অভিবাসীরা তোমাদের কাজ ছিনিয়ে নিচ্ছে।
বন্ধু নরেন্দ্র মোদির দেশের ১০৪ জন মানুষকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেরত পাঠালেন হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল পরিয়ে। এদের অপরাধ, সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঠগিদের ফাঁদে পা দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছিলেন। ভবিষ্যতের সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে এই মানুষগুলো খুইয়েছেন বর্তমানের সামান্য সম্পদটুকুও। শুধু ভারতই নয়, ব্রাজিল, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, পেরুর মতো দেশগুলোতেও হাতকড়া, শেকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের। বেআইনি অনুপ্রবেশ বা অবৈধ অভিবাসন একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যা বিভিন্ন দেশের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত গরিব দেশগুলি থেকে অনেক মানুষ উন্নত দেশগুলিতে উন্নত জীবনযাত্রার জন্য বেআইনি ভাবে প্রবেশ করেন। তারা সাধারণত উন্নত দেশের শ্রম বাজারে কাজের সুযোগ খোঁজেন। আবার যুদ্ধ, সংঘাত বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশে চলে যান। যার মধ্যে বেআইনি অনুপ্রবেশও থাকতে পারে। উন্নত দেশে ভালো শিক্ষা বা চিকিৎসা পাওয়ার জন্য অনেকে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের আইন ও কৌশল গ্রহণ করেছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে, অভিবাসন আইন কঠোর করেছে এবং দেশগুলোর মধ্যে অভিবাসন চুক্তি ও সমঝোতা করেছে। অথচ, এই জটিল সমস্যার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবিলা করা প্রয়োজন কিন্তু বর্তমান বিশ্বে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বেআইনি অনুপ্রবেশ বা অভিবাসন ইস্যু।
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগী শিল্পপতি এলন মাস্ক কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে। এই দু'জনের শেকড়ই কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাদু ফ্রেডেরিক ট্রাম্প এবং দিদিমা এলিজাবেথ ট্রাম্প ছিলেন জার্মানির ক্যালস্টাট শহরের (তৎকালীন ব্যাভারিয়া রাজ্য) নাগরিক। ফ্রেডেরিক ট্রাম্প কাজের সন্ধানে ১৮৮৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করেন। ১৮৯১ সালে তিনি সিয়াটলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করেন। ক্লন্ডাইক গোল্ড রাশের সময়, তিনি ইউক্রেনে চলে যান এবং হোয়াইটহর্সে খনি শ্রমিকদের জন্য একটি রেস্তোরাঁ এবং একটি পতিতালয় চালিয়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। ১৯০১ সালে ট্রাম্প ক্যালস্টাটে ফিরে যান এবং এলিজাবেথ ক্রিস্টকে বিয়ে করেন। তথ্যমতে, তিনি বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা এড়ানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করেছিলেন। এই কারণে, ১৯০৫ সালে ব্যাভারিয়ান সরকার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে। ফলে, তিনি পরিবার সহ পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। দ্বিতীয় দফায় ফ্রেডরিক ট্রাম্প একজন নাপিত এবং হোটেল ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন এবং কুইন্সে সম্পত্তি কেনার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীতে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর এলিজাবেথ ক্রিস্ট ট্রাম্প তাঁদের ছেলে সদ্য যৌবনে পা রাখা ফ্রেডেরিক ক্রিস্ট ট্রাম্প সিনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে ই. ট্রাম্প অ্যান্ড সন নামে একটি রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রসারণ করেন।এই ফ্রেডেরিক ক্রিস্ট ট্রাম্প সিনিয়র হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা।
আরও পড়ুন- ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে সমস্যায় পড়বে ভারত? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চ্যালেঞ্জ কী কী?
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ার, ট্রান্সভালে ধনী মাস্ক পরিবারে এলন মাস্ক জন্মগ্রহণ করেন। এরোল মাস্ক ও মায়ে মাস্কের সন্তান এলন মাস্ক ১৯৮৯ সালে কানাডায় অভিবাসন করেন, যেখানে তিনি তাঁর কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মায়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করেন। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা, তারপরে ১৯৮৯ সালে কানাডা এবং ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তিনি। আসলে ধনীরা বিশ্ব নাগরিক। আর যাঁদের শ্রমে তাঁরা টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন, সেই মানুষগুলোকে ক্ষুদ্র ভৌগোলিক সীমানায় বেঁধে রাখা হয় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে। কেউ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অনুমতিবিহীন বেড়া টপকানোর স্পর্ধা দেখালে তাঁকে হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। আসলে দক্ষিণপন্থী ও তাদের দোসর বিকৃত পুঁজিবাদীরা এটা করে শাসন ক্ষমতা ও লুন্ঠন কায়েম রাখতে।
সাড়ে চার দশক আগে বিনা রক্তপাতে বিশ্বের বাজার দখলের লক্ষ্যে যে বিশ্বায়নের স্লোগান দিয়েছিল উন্নত ধনী দেশগুলি, তা আজ বুমেরাং হয়ে আঘাত করেছে তাদেরই। বিশ্বায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, তবে এর সুফল মূলত উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের, কর্পোরেশনগুলোর এবং মূলধন মালিকদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের শ্রমিকরা চাকরি হারানো, মজুরি স্থবিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে, যার ফলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮০ সালে গড় সিইও-থেকে-শ্রমিক বেতন অনুপাত ছিল ৪২:১। ২০২২ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৩২৪:১-এ পৌঁছেছে, বিশেষ করে ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলোতে। কোম্পানি কর্তাদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসিক বেতনের পরিবর্তে মূলত স্টক অপশন এবং কর্মক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত বোনাসের উপর নির্ভর করা হয়। জিডিপির অনুপাতে কর্পোরেট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মজুরি হ্রাস পেয়েছে। এই প্রবণতা আয় বৈষম্য বাড়িয়ে তুলেছে এবং শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে গড় শ্রমিকদের মধ্যে ফারাক বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বায়ন, অটোমেশন, আর্থিকীকরণ এবং কর্পোরেশন-বান্ধব করনীতির কারণে ব্যবসাগুলো আরও লাভজনক হয়েছে। স্টক বাইব্যাক এবং লভ্যাংশ প্রদানের হার বেড়েছে, যা শ্রমিকদের তুলনায় শেয়ারহোল্ডারদের বেশি সুবিধা দিয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পরও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হলে অনেক শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি খুব সামান্য বেড়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নের দুর্বলতা তাদের দর-কষাকষির ক্ষমতা কমিয়েছে, ফলে মজুরি বৃদ্ধির হার কমে গেছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে সংকটে পড়েছেন, বিশেষত উৎপাদন শিল্পে। ১৯৯৯-২০১১ সালের মধ্যে, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২.৪ মিলিয়ন চাকরি হারিয়েছে। বিশ্বায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। সস্তা আমদানি প্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছে, যা কিছু শিল্পে কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি করেছে। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানির মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ায় কিছু মার্কিন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিন ও মেক্সিকো থেকে সস্তা আমদানি মার্কিন উৎপাদন খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে ভোগ্যপণ্যের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে অনেক শিল্প (যেমন টেক্সটাইল, ইস্পাত, ইলেকট্রনিক উৎপাদন) বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, যার ফলে মার্কিন উৎপাদন শিল্পে চাকরির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি, ২০২৩ সালে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে।
এই পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করতে দক্ষিণপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, এলন মাস্করা 'আমেরিকা ফার্স্ট' স্লোগান নিয়ে আসরে নেমে পড়েন। কাজের দাবিতে পথে নামা কর্মহীন মানুষদের বোঝানো হয়, বেআইনি অভিবাসীরা তোমাদের কাজ ছিনিয়ে নিচ্ছে।শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আবেদন জানালে বোঝানো হয় বেআইনি অভিবাসীদের জন্য দেশের অর্থনীতিতে বিরাট চাপ তৈরী হচ্ছে। সিইও-থেকে-শ্রমিক বেতন অনুপাত ৩২৪:১-এ কীভাবে পৌঁছেছে, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দেন না 'আমেরিকা ফার্স্ট'-এর প্রবক্তারা। কারণ দেশে দেশে দক্ষিণপন্থীদের নতুন দোসর বিকৃত পুঁজিবাদের ধারক বাহকেরা। যারা তৈরি করেছে বেতন বৈষম্য, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য। একটা মহামারীকে এরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেন।বারবার কর ফাঁকি, সরকারি কর্মসূচির সুবিধা নেওয়া এবং রাজনৈতিক সংযোগ ব্যবহার করে লাভ অর্জন করা, বর্ণবৈষম্যে অভিযুক্ত কর্পোরেট সংস্থার মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এই বিকৃত পুঁজিবাদেরই প্রতিনিধি।
১৯৫৪ সালে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাদু ফ্রেডরিক ট্রাম্প এবং তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার উইলিয়াম টমাসেলোকে ফেডারেল হাউজিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সরকারি তহবিলের অপব্যবহার এবং অসাধু ব্যবসায়িক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক রাজ্য প্রশাসন ফ্রেডরিক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আর্থিক অসাধুতার অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তে তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং সরকারি সুবিধা নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও অজানা কারণে এই তদন্তের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ্যে আসেনি। এছাড়াও, ১৯৭৩ সালে মার্কিন বিচার বিভাগের সিভিল রাইটস ডিভিশন ট্রাম্প ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের মামলা দায়ের করে, যা ১৯৭৫ সালে একটি সমঝোতায় শেষ হয়। এই তদন্তগুলি ফ্রেড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক চর্চায় নৈতিকতা এবং আইনি সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরে, যা পরবর্তীতে তাঁর নাতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক জীবনেও প্রভাব ফেলে। দাদু-বাবার দেখানো পথেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসা একই পদ্ধতিতে এগিয়েছে। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা সহ একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এই মামলাগুলি প্রাথমিকভাবে আর্থিক জালিয়াতি, কর ফাঁকি এবং মিথ্যা ব্যবসায়িক রেকর্ডের অভিযোগ সম্পর্কীয়। অর্থাৎ, তিন প্রজন্ম ধরে একটি জার্মান পরিবার আমেরিকায় নানা অনৈতিক পথে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, আর সেই পরিবারের বর্তমান কর্ণধার রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দখলে নিয়ে 'আমেরিকা ফার্স্ট' স্লোগান দিয়ে সমস্ত গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে পদদলিত করছেন।
আরও পড়ুন- হাতকড়া-শিকলে বেঁধে নির্বাসন! যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার ভারতীয় অভিবাসীরা…
ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মনের অভিবাসনভীতি ও ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ এবং উদারপন্থী (লিবারেল) নেতাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকাশ্যেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র বিচার ব্যবস্থা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আইনের শাসন— এসব গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলেও ট্রাম্প এগুলোকে পাত্তা দেন না। তাঁর চিন্তা চেতনায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট না থাকায়, স্বচ্ছল জীবনের সন্ধানে ছুটে বেড়ানো মানুষগুলোকে জন্তু জানোয়ারের মতো শেকলে বেঁধে সামরিক বিমানে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
'বিশ্বগুরু'-র দেশ ভারত এই নিদারুণ অপমানকে 'ভবিতব্য' ধরে নিয়ে সরকার দেশবাসীকে নিদান দেয়, বিষয়টিকে 'ইস্যু' করার প্রয়োজন নেই। সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে বিনিদ্র রজনী কাটায়, কবে প্রধানমন্ত্রীর ডাক আসবে হোয়াইট হাউস থেকে। অনেক রাষ্ট্রই নথিবিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অমানবিক প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে, তবে 'বিশ্বগুরু'-র ভারত নির্বাক। আসলে দু'টি রাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রনায়কদের চিন্তা ভাবনার গতিপ্রকৃতি একই ধারায় বহমান। 'বেআইনি অনুপ্রবেশ' এখন গোটা দুনিয়াজুড়ে দক্ষিণপন্থীদের ক্ষমতা দখল ও রক্ষার প্রধান হাতিয়ার। ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' স্লোগানের মুখোশে লুকিয়ে আছে 'শ্বেতাঙ্গ ফার্স্ট', যেমন বিশ্বগুরুর ভারতে 'হিন্দু প্রথম'।