সাবধান! মিসড কল দিয়েই শহরে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকার পর টাকা, কী এই মাদাগাস্কার স্ক্যাম?

Madagascar Scam Missed Call : শহরবাসীদেরও জানানো হচ্ছে এই তুন প্রতারণার পদ্ধতি সম্পর্কে। পথে নেমেছে কলকাতা পুলিশ ও সাইবার সেল ডিপার্টমেন্ট।

কাজ করতে করতে হঠাৎই ফোন বেজে উঠল আপনার। কিন্তু সময় নিয়ে ধরতে যাওয়ার আগেই থেমে গেল সেই কল। এরকম তো হরদমই ঘটে আমাদের জীবনে। পরিচিত কোনও মানুষের কাছ থেকেও এরকম ফোন আসতে পারে। হয়তো নেটওয়ার্কের সমস্যায় সেই ফোন কেটে গিয়েছে। এরপর ফিরতি কল করার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের জীবনে এমন ঘটনা তো কতই ঘটে!

কিন্তু সেই রোজকার ঘটনা যখন বিপদ ডেকে আনে? বাইরে থেকে দেখে মনে হবে, অত্যন্ত সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্তু তার মাধ্যমেই যে মারাত্মক চক্রান্ত সাজিয়েছে প্রতারকরা, সেটা কি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছেন? কলকাতা তো বটেই, গোটা বাংলা জুড়ে এখন সেই প্রতারকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। শহরবাসীদেরও বারবার জানানো হচ্ছে এই নতুন প্রতারণার পদ্ধতি সম্পর্কে। সবাই যাতে সতর্ক হন, সেই লক্ষ্যেই পথে নেমেছে কলকাতা পুলিশ ও সাইবার সেল ডিপার্টমেন্ট।

পোশাকি নাম ‘মাদাগাস্কার স্ক্যাম’ (Madagascar Scam)। পুলিশ মহলে অন্তত এই নামেই প্রসিদ্ধ এই বিশেষ প্রতারণা পদ্ধতিটি। এর আগেও জামতাড়া গ্যাংয়ের মতো অন্যান্য দুষ্কৃতি চক্রের খবর সামনে এসেছে। এটিএম থেকে টাকা হাতানো, অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা – খবরের কাগজ খুললে প্রায় রোজই এমন কিছু না কিছু দেখা যায়। সেই প্রতারকদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতারও করা হয়। সাইবার সেলের তরফ থেকে এদের নিয়ে সচেতনতাও বাড়ানো হয়। তবে মাদাগাস্কার স্ক্যাম ঠিক আগেরগুলোর মতো নয়। চরিত্রগতভাবে বেশ কিছুটা আলাদা। তার প্রতারণার ধরনও ভিন্ন।

২০১৮ সালে প্রথমবার এমন প্রতারণার খবর কানে আসে। ঠিক কী হয়ে এখানে? সাইবার পুলিশের বক্তব্য, এখানে প্রথমে বিদেশি নম্বর থেকে একটি ফোন কল আসে। প্রধানত +261 দিয়ে শুরু হয় এই নম্বর। কিন্তু অন্যান্য আইএসডি নম্বরের হদিশও মিলেছে। অদ্ভুত অদ্ভুত সময় এই ফোন কল আসে। এক দু’বার রিং হওয়ার পরই সেই কল থেমে যায়। অর্থাৎ প্রতারকরা জেনেবুঝেই মিসড কল দেয়। একবার না হলে বারবার এই মিসড কল চলতে থাকে। একসময় উল্টোদিকের মানুষটি চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভাবেন, তাঁর কোনও আত্মীয় বা পরিবারের কেউ হয়তো বিপদে পড়েছেন, তাই এতবার ফোন করছেন।

যেই ওই নম্বরে ফিরতি কল করতে যান, তখনই আসল খেল শুরু। ওই মানুষটি ফিরতি কল করলেই উল্টোদিক থেকে আওয়াজ আসে, “আপনার কলটি অপারেটরের সঙ্গে কানেক্ট করা হচ্ছে। দয়া করে ফোনটি ধরে থাকুন।” ওই মানুষটিও ফোন ধরে থাকেন। আর ততক্ষণে আন্তর্জাতিক কলের রেট অনুযায়ী তাঁর ফোন থেকে টাকা কাটতে শুরু করে। যা সরাসরি চলে যায় প্রতারকের কাছে।

পুলিশের বক্তব্য, মূলত এমন মানুষদের ‘টার্গেট’ হিসেবে বাছা হয়, যাদের কোনও আত্মীয় বা পরিচিত কেউ বাইরে রয়েছেন। সাইবার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেশন ইনিশিয়েশন টেকনোলজির ওপর ভর করে ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই প্রতারণা চক্র চলে। আর এই প্রযুক্তি এমনই, কে কোথা থেকে এই ফোনটি করছে, সেটি সহজে ধরা পড়ে না। কাজেই প্রতারকদেরও পোয়া বারো।

কিন্তু কতটা বিপদে কলকাতা? পুলিশের বক্তব্য, এখনও অবধি কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। কিন্তু এই ধরনের মাদাগাস্কার স্ক্যাম যে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই শহরবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে বলছে সাইবার পুলিশ। অচেনা নম্বর, বিশেষ করে বিদেশের আইএসডি নম্বর যুক্ত কোনও কল যেন না ধরেন। মিসড কল দিলেও ধরবেন না। প্রয়োজন হলে নিকটবর্তী সাইবার থানায় যোগাযোগ করুন।

More Articles