মোদীর প্রাণনাশের হুমকি এই প্রথম নয়! বারবার ঘুম উড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদী থেকে ব্র্যান্ড মোদী। সামান্য আরএসএস-এর ক্যাডার থেকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। ২০০১ থেকে ২০১৪। দীর্ঘ ১৩ বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনিই ভারতের প্রথম অ-কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু'বার দিল্লির মসনদে বসেছেন। কিন্তু মোদীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক ও কম হয়নি। গুজরাট দাঙ্গার সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মোদীর জীবনে শত্রুর অভাব হয়নি। আরও একবার মোদীর প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে রাতের ঘুম ছুটেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সির মুম্বই শাখার কাছে এসে পৌঁছেছে একটি হুমকি মেল। মেল টি যিনি পাঠিয়েছেন তিনি লিখছেন, ‘ আমি অন্যান্য উগ্রপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের থেকে আমি প্রায় ২০ কেজি আর ডি এক্স জোগাড় করেছি। সারা দেশ জুড়ে প্রায় ২০ টি সংগঠন গোপনে কাজ করছে। আমি ভেবে রেখেছি আমি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটাবো। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু হবে’। এখানেই শেষ নয় যাতে যিনি মেল পাঠিয়েছেন তাকে তদন্তকারী সংস্থা চিহ্নিত করতে না পারে তার জন্য আত্মহত্যার ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। মেলের উৎস অনুসন্ধানে তদন্তে নেমেছে এন আই এ।

কিন্তু এই প্রথম নয়। আগে ও বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি যখন মোদী প্রধানমন্ত্রী হন নি তখন ও তার প্রাণ সংশয় হয়েছে।

২০১৩, গান্ধি ময়দান

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদী ২০১৩ সালের ২৭ শে অক্টোবর পাটনার গান্ধি ময়দানে হুঙ্কার র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মোদীকে নিকেশ করার উদ্দেশ্যে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিমি)-র পক্ষ থেকে গান্ধী ময়দানের সভাস্থলে ৯ টি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় সেদিন ৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছিলেন বহু মানুষ। প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

২০১৫, মে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার তখন সবে এক বছর পূর্ণ করেছে। বিজেপি সরকারের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উত্তরপ্রদেশে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে তে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর। তার আগেই ভাইরাল হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। যেখানে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। এহেন হুমকি পেয়েই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। জেলায় জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে ধরা পরে অভিযুক্ত।

২০১৭ এর ফেব্রুয়ারি

২০১৭ এর উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রচারের সময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক আধিকারিক দাবি করেন, হরেন পাণ্ডে হত্যা মামলায় জড়িত রসুল পতি নামে এক ব্যক্তি মোদীর কনভয়ে রকেট লঞ্চার ও অন্যান্য বিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে। এর পরপরই উত্তরপ্রদেশে মৌ জেলায় বিজেপির একটি নির্বাচনী র‍্যালিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সেদিন নির্বিঘ্নেই র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

২০১৭ এর জুন

কেরালার কোচিতে মেট্রো রেলের উদ্বোধনে যাওয়ার কর্মসূচী ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর। তার কিছুদিন আগেই কেরালা পুলিশের ডিজিপি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর কোচি সফরে মোদী হত্যার পরিকল্পনা করছে কিছু উগ্রপন্থী সংগঠন। এর পরেই সতর্কতা হিসেবে মোদীর কোচি সফরে কাটছাঁট করা হয়। নির্ধারিত দিনের আগেই সফর সমাপ্ত করে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আরও পড়ুন-কালনার লালজি মন্দিরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে এক নাগা সাধুর মাহাত্ম্য!

২০১৮, জুন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হত্যার হুমকি নিয়ে যত শোরগোল হয়েছে গোটা ভারতে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই ঘটনা। এলগার পরিষদ – ভীমা কোরেগাঁও মামলায় পুনে পুলিশ মানবাধিকার কর্মী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, অ্যাক্টিভিস্ট সুধীর ধাওলে, মহেশ রাউত, অধ্যাপক সোমা সেন এবং গবেষক রোনা উইলসন কে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে দাবি করা হয় এঁরা প্রত্যেকে মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। রোনা উইলসনের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্রের ভিত্তিতে পুলিশ দাবি করে এঁরা প্রত্যেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হত্যার রোডম্যাপ তৈরি করছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যার ধাঁচেই মাওবাদীরা মোদী হত্যার ছক করেছে। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় কবি ভারভারা রাও-কে। যদিও এনআইএ আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মোদী হত্যার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়। এমনকী দেখা যায়, রোনা উইলসনের কম্পিউটারে নথি বাইরে থেকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ম্যালওয়ার ব্যবহার করে।

২০১৯, মার্চ

রাজস্থানের জয়পুরের বরকত নগরের বাসিন্দা নবীন স্বামী ফেসবুকে একটি পোস্টে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের হুমকি দেন। এরপরেই রাজস্থান পুলিশের সাইবার সেল গ্রেপ্তার করে নবীন স্বামীকে। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করে পুলিশ।

২০২০, আগস্ট 

২০২০ এর ৮ ই আগস্ট এন আই এ র কাছে একটি মেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। এই হুমকি পেয়েই তৎপর হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ ( এস পি জি) কে মোদীর নিরাপত্তা জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মেলটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি।        

More Articles