প্রেম বড় বালাই! গিন্নির খোঁজে পায়ে হেঁটেই মহারাষ্ট্র থেকে তেলঙ্গানায় জনি দ্য টাইগার

Tiger: শীতকাল আসলে বাঘেদের মিলনের মরসুম। আর সে সময়ে সঙ্গীহীন থাকতে মোটেও চায়নি জনি। তাই সময় থাকতেই বেরিয়ে পড়েছিল সে।

প্রেমিক বা প্রেমিকার খোঁজে ডেটিং অ্যাপের দ্বারস্থ হন অনেকেই। প্রেমের মরসুমে টিন্ডার, বাম্বলে উপচে পড়ে ভিড়। তা কবি তো এমনিই বলেছেন, 'ইয়ে ইশক নেহি আসান, আগ কা দরিয়া হ্যায়, ডুবকে যানা হ্যায়'। এদিকে, বাঘেদের না আছে ডেটিং অ্যাপের সুবিধা, না রয়েছে তাদের জন্য স্বয়ংবর সভার ব্যবস্থা। তাই বলে কি প্রেম নেই? তাই বলে 'একা বোকা' হয়ে বসে থাকলেই বা চলে নাকি! তা-ই প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে তেলঙ্গানা চলে এল একটি সঙ্গীহীন বাঘ। প্রেমের টানে কার্যত এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার এমন ঘটনা দেখে অবাক বনকর্মীরা।

মহারাষ্ট্রের নান্দেড় জেলার টিপেশ্বর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য় থেকে রওনা হয়েছিল সে। সঙ্গীর খোঁজে সম্প্রতি তেলেঙ্গানার কাওয়াল টাইগার রিজার্ভে চলে এসেছে বাঘটি। সাধারণত অভয়ারণ্যের প্রতিটি বাঘকে ট্র্যাক করতে রেডিও কলার ব্যবহার করে থাকে বন দফতর। জনি নামক এই পুরুষ বাঘটির রেডিও কলার ট্র্যাক করে বনকর্তারা জানতে পেরেছেন, সেই অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে যাত্রা শুরু করেছিল জনি। অবশেষে প্রায় দু-মাস যাত্রা করে তেলঙ্গানা পৌঁছেছে বাঘটি।

শীতকাল আসলে বাঘেদের মিলনের মরসুম। আর সে সময়ে সঙ্গীহীন থাকতে মোটেও চায়নি জনি। তাই সময় থাকতেই বেরিয়ে পড়েছিল সে। তেলঙ্গানার আদিলাবাদ জেলার বনকর্তা প্রশান্ত বাজিরাও পাতিল অবশ্য জানাচ্ছেন, বাঘেদের ক্ষেত্রে এ অবশ্য খুব ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। আশপাশের অঞ্চলে সঙ্গী খুঁজে না পেলে মাঝেমধ্যেই দীর্ঘ যাত্রা করে থাকে বাঘেরা। এক্ষেত্রে নির্মল জেলার কুন্তলা, সারঙ্গাপুর, মামাদা, পেম্বি মণ্ডল এলাকার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে বাঘটিকে। এমনকী হায়দরাবাদ-নাগপুর NH-44 হাইওয়েও অতিক্রম করতে দেখা গিয়েছে জনি দ্য টাইগারকে। কিন্তু প্রেমের খোঁজে বাঘটির এই দীর্ঘ পথ পেরোনো কিন্তু বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় মানুষ ও বনকর্মীদের জন্য।

আরও পড়ুন: ক্রিসমাস কেক ও থলকাবাদের বাঘ

বনকর্মীরা মনে করছেন, যে পথ দিয়ে জনি হাঁটছে, তাতে কানওয়াল টাইগার রিজার্ভে এসে বাঘটির গন্তব্য শেষ হতে পারে। তা অবশ্য কানওয়াল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য আশার খবরই বটে। কারণ চোরাশিকারি ও ক্রমাগত বনক্ষয়ের কারণে বাঘের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে সেখানে। ২০২২ সাল থেকে কোনও বাঘই আর তার পাকা আস্তানা বানায়নি এই টাইগার রিজার্ভটিকে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়, আসার পথে অন্তত ৫টি গবাদি পশু শিকার করেছে বাঘটি। একাধিক গরু শিকারেরও চেষ্টা করেছে, তবে তাতে সফল হয়নি সে। বনকর্তারা অবশ্য বলছেন, বাঘটির থেকে মানুষের তেমন কোনও ঝুঁকি নেই। কিন্তু আশপাশের এলাকার মানুষজনকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, জনিকে শেষ দেখা গিয়েছে উটনুর এলাকায়। সেখানে একটি গবাদি পশু হত্যা করেছে সে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আপাতত কেরামেরির জঙ্গলে দুটি স্ত্রী বাঘ রয়েছে জনির নিশানায়। তাদের প্রস্রাবের ঘ্রাণ অনুসরণ করে করে এগোতে চাইছে জনি। আসিফবাদেও একটি মহিলা বাঘ রয়েছে। তার থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাঘটি। তেলেঙ্গানার বন উপদেষ্টা কমিটির প্রধান ড এলুসিং মেরু অবশ্য এই ঘটনায় বেশ উচ্ছ্বসিত। তেলেঙ্গানায় হঠাৎ একটি পুরুষ বাঘ বেড়ে যাওয়াকে আশাজনক বলেই মনে করছেন তিনি। তিনি এ-ও জানান, শীতের মরসুম আসার আগেই বাঘেদের এই ধরনের উদ্যোগ অস্বাভাবিক নয় একেবারেই। তবে জনি নামক বছর ছয়েকের এই বাঘটি প্রায় এক মাস আগে মহারাষ্ট্রের পৈনগঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ছেড়েছিল। সঙ্গিনীকে খুঁজতে খুঁজতে প্রথমে মহারাষ্ট্রের নান্দেড় জেলায় পৌঁছয়। সেখান থেকে ইয়াভাতমাল জেলার তিপেশ্বর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হয়ে আদিলাবাদ জেলার সীমানা পেরিয়ে তেলঙ্গানায় প্রবেশ করে।

আরও পড়ুন:মানুষের মতো গোনা অসম্ভব! কীভাবে গভীর জঙ্গলে গোনা হয় বাঘের সংখ্যা?

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মহারাষ্ট্র ছেড়ে এত দূরের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হঠাৎ কেন রওনা দিল বাঘটি। মহারাষ্ট্রের তাডোবা জঙ্গলে অন্তত তিনটি মহিলা বাঘ রয়েছে। তাদের দিকে না গিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে এত দীর্ঘ পথ হেঁটে কেন তেলঙ্গানা আসতে গেল সে? আসলে মহারাষ্ট্র ও তেলঙ্গানা, এই দুটি রাজ্য একটি সীমানা ভাগ করে থাকে। সেই সীমানার রাস্তা ধরেই তেলঙ্গানা চলে এসেছে বাঘটি বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে তাড়োবা টাইগার রিজার্ভ ও টিপেশ্বর বন্যাপ্রাণী অভয়ারণ্য দুটি জঙ্গলেরই সরাসরি অ্যাক্সেস রয়েছে তেলঙ্গানার উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত কাওয়াল টাইগার রিজার্ভের। তা সত্ত্বেও বছর দুয়েক ধরে বাঘের চিহ্নমাত্র নেই এই জঙ্গলটিতে। দিনে দিনে আবাসস্থল সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে বাঘের সংখ্যা সেখানে তলানিতে ঠেকেছে। বর্তমানে, করিডোর এবং বাফার এলাকা সহ কাওয়াল রিজার্ভে কয়েকটি বাঘ রয়েছে বটে। তবে তারা সেখানে স্থায়ী ভাবে থাকে না। খুব ঘন ঘন জায়গা বদলাতে থাকে তারা।

তবে তেলঙ্গানার এই বাঘের খরা এবার কাটতে চলেছে বলেই আশাবাদী তেলঙ্গানার বন দফতর। কয়েক মাস আগেই তাড়োবা থেকে একটি পুরুষ বাঘ চলে এসেছে তেলঙ্গানায়। এবার এল জনি। আপাতত শার্দুল সমাজের নতুন প্রজাতির আশাতেই বুক পেতেছে তেলঙ্গানা বনদফতর।

More Articles