মানুষের বিষ্ঠায় দূষিত সঙ্গম! কুম্ভে স্নান ডেকে আনতে পারে যে বিপজ্জনক রোগগুলি
Maha Kumbh Ganga Pollution: এই দূষিত জল ছুঁলেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ, ত্বকের ফুসকুড়ি, চোখ জ্বালা এবং টাইফয়েড এবং হেপাটাইটিস এ-এর মতো গুরুতর অবস্থা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
মানুষের মলে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে, তাতে এখন পরিপূর্ণ মহাকুম্ভের পবিত্র জল। সেই জলে পাপ ধুচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাপের নামে ধুয়ে যাচ্ছে আরও নানাকিছুই, যা সাধারণ সময়ে মানুষের কাছে 'ঘৃণ্য' হলেও পুণ্যের খাতায় সবই 'জায়েজ'। শুধু স্নান করছেন না, বোতলে, বড় পাত্র সেই জল ভরে নিয়ে আসছেন মানুষ সেই জল। বিলিয়ে দিচ্ছেন পড়শিদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রতিবেদনের পরে, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল প্রয়াগরাজের গঙ্গায় মাত্রাতিরিক্ত মল ব্যাকটেরিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জানা গিয়েছে, মহা কুম্ভ মেলা চলাকালীন মানুষের ও প্রাণীদের মলে থাকা কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
গত ১২-১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড একটি পর্যবেক্ষণে জানায়, নদীর জলের বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (BOD) মান স্নানের জলের কাঙ্খিত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। সেই প্রতিবেদনে আরও জানা গিয়েছিল যে, মহাকুম্ভের সময়, বিশেষত শুভ দিনগুলিতে বিপুল সংখ্যক লোক গঙ্গায় স্নান করার ফলে মলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এই এলাকায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (STPs) সাধারণত চালু থাকলেও, শাহী স্নান এবং উৎসবের অন্যান্য মূল আচার-অনুষ্ঠানের সময় দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের গঙ্গা নদীর সঙ্গমে সরকারি দাবি অনুযায়ী ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ডুব দিয়েছেন। সহজেই অনুমেয়, ওই জলের অবস্থা এখন ঠিক কী?
আরও পড়ুন- ‘১৪৪ বছর’ আসলে রাজনৈতিক প্রচার! এবারের মহাকুম্ভ সত্যিই বিরল?
এই কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া আসলে কী?
উষ্ণ রক্তের প্রাণী এবং মানুষের অন্ত্রে মল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এগুলি সাধারণত জলে সম্ভাব্য দূষণের সূচক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কোনও জলে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে জলে ক্ষতিকারক রোগজীবাণু যেমন ভাইরাস, পরজীবী বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে, যা প্রাণী এবং মানুষের অন্ত্র থেকে নির্গত মল থেকে উদ্ভূত হয়।
পানীয় জল, সাঁতার বা অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্য জল নিরাপদ কিনা তা নির্ধারণ করতে প্রায়শই জলে কলিফর্ম আছে কিনা তা পরীক্ষা করেই জলের গুণমান মূল্যায়ন করা হয়। মলে থাকা কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া দূষণের ভয়াবহ ভূমিকা রয়েছে স্বাস্থ্যের উপর। এই ব্যাকটেরিয়া বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং আরও গুরুতর সংক্রমণ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলত, এই মুহূর্তে সঙ্গমের জলে যারা পাপ ধোবেন বলে ডুব দিচ্ছেন, তাঁদের নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা উচিত।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বা CPCB বলছে, গঙ্গা এখন মলে থাকা কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ব্যাপকভাবে দূষিত। আর এর মূল কারণ অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন।
আরও পড়ুন- পদপিষ্ট গরিবরাই! উচ্চবিত্তদের জন্য মহাকুম্ভে কী আয়োজন? চমকে দেবে বিলাসের বহর
মলে থাকা কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া কতটা ক্ষতিকর?
মহাকুম্ভ মেলা চলাকালীন, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মলে থাকা কলিফর্মের মাত্রা প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে ২,৫০০ ইউনিটের নিরাপদ সীমার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ গঙ্গার জলে স্নান এই মুহূর্তে বেশ বিপজ্জনক। মহাকুম্ভ উপলক্ষ্যে কোটি কোটি তীর্থযাত্রী প্রয়াগরাজে ভিড় করার কারণে, জলবাহিত রোগের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আশেপাশের এলাকা থেকে অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশনের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই জল সরাসরি ছোঁয়াও এখন বিপজ্জনক।
এই দূষিত জল ছুঁলেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ, ত্বকের ফুসকুড়ি, চোখ জ্বালা এবং টাইফয়েড এবং হেপাটাইটিস এ-এর মতো গুরুতর অবস্থা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। দূষিত জলের ফোঁটায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং ছোট শিশু, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের বিপদ বেশি।
যারা তীর্থযাত্রী, বিপদ শুধু তাঁদেরই নয়। এই দূষণ স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করছে। যে মানুষরা তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য গঙ্গার জলের উপর নির্ভর করেন, জলে মলে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, ত্বক, পরিপাকতন্ত্র এবং শ্বাসযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাঁদের। দীর্ঘদিন ধরে এই দূষণের ফলে মূত্রাশয় এবং কোলন ক্যান্সার সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের আশঙ্কাও চরম বেড়ে যেতে পারে।