একশো কোটির স্বপ্নভঙ্গ! ট্র্যাজেডির অন্য নাম বিনেশ ফোগট
Paris Olympics 2024 Vinesh Phogat: মহিলাদের ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৫০ কেজি ইভেন্ট থেকে বুধবার ছিটকে গিয়েছেন ভারতীয় এই রেসলার। ৫০ কেজির থেকে মাত্র একশো গ্রাম ওজন বেশি থাকায় সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে।
তীরে এসে ডুবল তরী। ফাইনালের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে অলিম্পিক থেকে ছিটকে গেলেন কুস্তিগীর বিনেশ ফোগট। অথচ সকালটাও ছিল ভারতবাসীর জন্য সম্ভাবনায় ভরা। সেই স্বপ্নভঙ্গ হল বেলা গড়াতেই। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের ফাইনালে খেলতে পারবেন না বিনেশ। শুধু খেলতে যে পারলেন না, তাই নয়। খেটে যে পদকটা অর্জন করেছিলেন তিনি, হাতছাড়া হল তা-ও। আর এ সব বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে মাত্র ১০০ গ্রাম। একশো গ্রাম ওজন বেশি থাকায় অলিম্পিক থেকে ডিসকোয়ালিফাই হয়ে গেলেন বিনেশ।
মহিলাদের ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৫০ কেজি ইভেন্ট থেকে বুধবার ছিটকে গিয়েছেন ভারতীয় এই রেসলার। ৫০ কেজির থেকে মাত্র একশো গ্রাম ওজন বেশি থাকায় সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে। সারা রাত জেগে অমানুষিক কসরত করেছেন বিনেশ। তবু শেষ রক্ষা হননি। ওজনকে ৫০ কেজিতে নামাতে পারেননি। এর আগে নাকি ৫৩ কেজি বিভাগেও একই সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক ঘুষিতেই রক্তারক্তি! মহিলাদের অলিম্পিক বক্সিংয়ে ইমানে খেলিফ সত্যিই পুরুষ?
মঙ্গলবার তিনটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়েছিল বিনেশকে। মঙ্গলবার কিউবার ইউসনেইলিস গুজম্যানের বিরুদ্ধে প্রথম পিরিয়ডে বিনেশ এগিয়ে যান ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় পিরিয়ডে ভিনেশ দু-বার করে ২ পয়েন্ট, মোট ৪ পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলেন। লিড বেড়ে দাঁড়ায় ৫-০। শেষ পর্যন্ত ৫-০ ব্যবধানেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বিনেশ ফোগাট। তার আগে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তথা গত অলিম্পিকে সোনাজয়ী জাপানের উই সুসাকিকে ৩-২ পয়েন্টে হারান বিনেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি হারান ইউক্রেনের লিভাচ ওকসানাকে। ৭-৫ পয়েন্টে জেতেন বিনেশ। তাতে রূপো বাধা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তবে বিনেশের পাখির চোখ ছিল সোনা।
বুধবার রাতে আমেরিকার সারা হিলডেব্রান্টের বিরুদ্ধে নামার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হল বুধবার সকালেই। ফাইনালের দিন সকালে তাঁর ওজন মাপা হয়। সেখানে দেখা যায় ৫০ কেজির থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম ওজন বেশি। সেই কারণে বিনেশকে এই প্রতিযোগিতা থেকেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ওজন কমানোর জন্য আর কোনও রকম সুযোগই পাবেন না তিনি। ফলে ম্যাচও খেলতে পারবেন না ভিনেশ । আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাচ না খেলেই সোনা পাবেন। ব্রোঞ্জ পদকের জন্য লড়াই হবে। সেখানে যিনি জিতবেন, তিনি পদক পাবেন। কিন্তু কেউ রুপো পাবেন না। নিয়ম অনুযায়ী বিনেশ সকলের নীচে শেষ করেছেন বলে দেখানো হবে।
জানা গিয়েছে, সারা রাত ধরে ওজন কমানোর জন্য সাইক্লিং, জগিং, স্কিপিং সব কিছুই করেছেন ভারতের কুস্তিগির। তাতেও ওজন ৫০ কেজি হয়নি তাঁর। একজন ভারতীয় কোচ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, 'আজ সকালে তার ওজন ১০০ গ্রাম বেশি পাওয়া যায়। নিয়ম অনুসারে এমন হলে অ্যাথলিটকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।' বিনেশকে ফাইনালে নিষিদ্ধ করার পর ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা বিবৃতি জারি করেছে। তাঁদের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, ‘সারারাত পরিশ্রম করার পরেও বিনেশের ওজন কিছুটা বেশি থেকে যায়। যার কারণে অলিম্পিকস কমিটি ৫০ কেজির কুস্তি ফাইনাল থেকে তার নাম বাদ দেয়। এই নিয়ে ভারতীয় শিবির থেকে আর কোনও বিবৃতি জারি করা হবে না।
আরও পড়ুন:Paris Olympics 2024: ছাই থেকে জেগে ওঠা এক আগুনের নাম সিমোন বাইলস
গত এক বছরে অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। কুস্তিগিরদের আন্দোলনের অংশ ছিলেন বিনেশ। তৎকালীন ফেডারেশন প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে পথে নেমেছিলেন ভিনেশরা। সেই আন্দোলনে নেমে দিল্লির রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে কার্যত দঙ্গল বেধে গিয়েছিল। যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিতেন তিনি। পুলিশ তাঁকে আটকও করেছিল।সেই লড়াই শেষপর্যন্ত জিতে গিয়েছিলেন ভিনেশরা। অপসারণ করা হয়েছিল ব্রিজভূষণকে। তবে লড়াই শেষ হয়নি। হাঁটুর চোট সঙ্গী ছিল বিনেশের। নিজের ৫৩ কেজি বিভাগে লড়তে পারেননি। তাঁকে ৫০ কেজি বিভাগে নামতে হয়েছে। এই সব বাধা পেরিয়েও ফাইনালে উঠেছেন বিনেশ। কার্যত এ হার বোধহয় শুধু বিনেশের একার নয়। এই ফাইনালের জন্য আশায় বুক পেতেছিল গোটা দেশের মানুষ। সেই লড়াইয়ের পরে প্যারিস অলিম্পিকে বিনেশের পদক জয় ছিল ব্রিজভূষণদের মুখে সপাটে থাপ্পড়ের মতোই। সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন বিনেশের পাশাপাশি গোটা ভারতও। কিন্তু অধরাই রয়ে গেল সেই স্বপ্ন। সামান্য একশো গ্রাম ওজনের এদিক-ওদিকে ছিটকে গেলেন বিনেশ। অধরাই রয়ে গেল গোটা দেশবাসীর স্বপ্ন। জেতার পরে রূপোটুকু ঘরে আনতে পারলেন না তিনি। নিয়মের বেড়াজালে ফস্কে গেল ভারতের চতুর্থ পদকও।
বুধবার অলিম্পিকে ডিসকোয়ালিফাই হওয়ার খবর আসতে না আসতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ভিনেশ। জানা গিয়েছে, ডিহাইড্রেশনের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর পর তিনটি ম্যাচের পর সারা রাত ওজন কমানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম, এবং তার পরেও হতাশা, তাতেই বিনেশের শরীর-মন ভেঙে পড়ে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।