মমতার ইঙ্গিতেই রয়েছে উত্তর! কোনওদিনই কি বকেয়া ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা?

DA Strike: গত ৬ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রের সমান ডিএ দিতে পারবে না।

গত প্রায় ৪০ দিন ধরে কলকাতায় ধর্নায় বসেছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। কেউ কেউ টানা চালিয়ে যাচ্ছেন অনশন। লক্ষ্য একটাই, প্রাপ্য আদায়। সরকারি চাকরি করেন, অথচ বছরের পর বছর ধরে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। রাজ্যসরকারের কর্মচারী মহলের আলোচনাতে কান পাতলেই এই অভিযোগ দীর্ঘকাল ধরেই শোনা যায়। রাজ্যের সরকার নানা খাতে, নানা উৎসব ও মেলাতে নানাবিধ খরচা করলেও, কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া মেটাতে উচ্চবাচ্যও করছে না। তাই হকের টাকা পেতে শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দেয় পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন। ধর্মঘটে সাড়াও নেহাত খারাপ নয়, স্কুল কলেজ, হাসপাতাল সহ সরকারের নানা দফতরে কর্মীদের বড় একটা অংশই গরহাজির। বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই বামঘেঁষা ইউনিয়নের অংশ। রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা যা মহার্ঘ ভাতা পান তাঁদের অংশও সেই স্তরে উন্নীত করা হোক। হিসেব বলছে, কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ-র পার্থক্য ৩৬%!

কিন্তু দিতে হবে বললেই দেওয়া যায় না, অন্তত সরকার যে দেবে না এমনটা একপ্রকার জানিয়েই দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথা কেটে ফেললেও কেন্দ্রের সমান ডিএ তাঁর সরকার দিতে পারবে না, বলেছেন মমতা। তাই সরাসরি অনশন ও ধর্মঘটের পথে হেঁটেছেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা। সরকার বরদাস্ত করবে না, বরাবরের মতোই জানিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তাই ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তৃণমূলের সরকার। ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চলছে ঠিকই, বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়ার ডাকও দিয়েছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়করা। কিন্তু এত কিছু করেও কোনওদিনই কি ডিএ পাবেন তারা?

আরও পড়ুন-ডিএ বাড়ল ৩ শতাংশ, বাজেট থেকে ঠিক কতটা লাভবান হলেন বাংলার লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী?

গত ৬ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রের সমান ডিএ দিতে পারবে না। “আমি ১০৫ শতাংশ ডিএ দিচ্ছি। আপনারা আর কত চান? রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের স্কেল কেন্দ্রীয় কর্মীদের থেকে আলাদা। আমাদের এত ক্ষমতা নেই কারণ কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা এবং অন্যান্য অনেক কিছুই দিচ্ছে না। আমরা যা দিচ্ছি সেটাই নিন। আমাকে যদি ভালো না লাগে, আমার মাথা কেটে ফেলুন। কিন্তু এর বাইরে, আমি কিছু করতে পারব না,” সাফ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই শেষ না, বামফ্রন্টের আমলে কখনও যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়াই হয়নি তাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে কেন্দ্রের কাছে তহবিল না পাওয়ার চিরাচরিত অভিযোগও। মুখ্যমন্ত্রীর মাথা কাটার মতো কাজকর্ম খানিক প্রবাদসম ঠেকে। কোনও দিনই যা বাস্তবায়িত হবে না, তাকেই কি এভাবে উপমা দিয়ে বোঝাতে হলো মুখ্যমন্ত্রীকে?

শুক্রবারের এই ধর্মঘট প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকার এক আদেশ জারি করে বলেছে, দিনের প্রথমার্ধে বা দ্বিতীয়ার্ধে বা পুরো দিনের জন্য যদি কেউ অনুপস্থিত থাকেন তার জন্য কোনও ক্যাজুয়াল লিভ বা অন্য কোনও ধরনের ছুটি ১০ মার্চ কোনও কর্মচারীকেই দেওয়া হবে না। সেই দিন যদি কোনও রাজ্য সরকারি কর্মচারী কাজে না আসেন তাহলে সেটিকে 'সার্ভিস ব্রেক' হিসাবেই গণ্য করা হবে এবং কোনও বেতনও মিলবে না, যদি না এই অনুপস্থিত কর্মচারীরা ৯ মার্চের আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি থাকেন বা পারিবারিক কোনও শোক, গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে আগে থেকেই ছুটিতে থাকেন। ৯ মার্চের আগে যে সমস্ত কর্মচারীরা চাইল্ড কেয়ার লিভ, মাতৃত্বকালীন ছুটি বা চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটি বা আর্নড লিভে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য! কেন এমনটা বললেন অমর্ত্য সেন?

রাজ্যের বিরোধিতার এই ইস্যু হাতছাড়া করতে নারাজ বিজেপি। ধর্মঘটে অংশ নেওয়া রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে গেরুয়া দল। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে নিগ্রহ করা হয় বা কর্মক্ষেত্রে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়তে হয় তাহলে তাদের 'ব্যক্তিগতভাবে' বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান শুভেন্দু অধিকারী।

তৃণমূল যে নিরুপায় এই কথাটি বোঝাতে অবশ্য শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, ময়দানে নেমেছেন মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। সরাসরি রাজ্য সরকারের আন্দোলনরত কর্মীদের নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। কুণালের মতে, ডিএ কোনও দিনই কোনও কর্মচারীর অধিকার হতে পারে না। ভাতা তো রাজ্যের প্রদেয় একটি সুবিধা। কেন্দ্র তহবিল না দিলে রাজ্য সরকার ভাতা দেবে কীভাবে? পালটা প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। রাজ্যপালকেও সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথাই জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ রাজ্যের হাত পা বাঁধা এমনটা প্রচার করা হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন, এর মাঝে সরকারি কর্মচারীদের জন্য এতখানি টাকা সরকার দেবে কোত্থেকে? আন্দোলন, ধর্মঘট নিয়ে সরকারের নিরুত্তাপ থাকাও কি একপ্রকার উত্তর নয়?

 

More Articles