গত অলিম্পিকে খারাপ হয়ে যায় বন্দুক! প্যারিসে যেভাবে ব্রোঞ্জ জয় মনু ভাকরের
Manu Bhaker Paris Olympics 2024: মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই শুটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন মনু। প্রায় হাতে পায়ে ধরেই বাবাকে একটি পিস্তল কেনার জন্য রাজি করিয়েছিলেন।
প্রত্যাশা ছিলই। প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের হয়ে পদক যে তিনি জয় করে আনবেন, এমন আকাঙ্খা ছিলই তাঁকে ঘিরে। রবিবার প্যারিসে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টের ফাইনালে ২২ বছরের মনু ভাকর ব্রোঞ্জ জিতলেন। শুটিংয়ে অলিম্পিক পদক জেতা প্রথম ভারতীয় মহিলা মনু ভাকর। শুটিং বিভাগে দীর্ঘকাল ধরেই পদক খরা চলছিল এই দেশের। ২০১৬ এবং ২০২০ সালে যথাক্রমে রিও গেমস বা টোকিও অলিম্পিকে ভারত শুটিংয়ে কোনও পদক জিততে পারেনি। মনু ভাকরের হাত ধরেই অবশেষে শুটিংয়ে ব্রোঞ্জ এল দেশে।
মনু ভাকরের ফাইনালেত্র স্কোর ২২১.৭। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলেন মনু। অলিম্পিকের দ্বিতীয় দিন শুরুর থেকেই সমস্ত নজর ছিল মনু ভাকরের দিকে। পিভি সিন্ধু, শ্রীজা আকুলা এবং নিখত জারিনদের ব্যাপক জয়ের পরেও মনুর প্রতি প্রত্যাশা ছিল ঢের। শুটিংয়ে ভারতকে অন্য দিশা দেখিয়েছেন এই তরুণী। তিন বছর আগে টোকিওতেও মনু ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু কোয়ালিফায়ার রাউন্ডেই মনুর বন্দুকটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ত্রুটিযুক্ত সেই বন্দুক ছিন্নভিন্ন করে দেয় মনুর সমস্ত প্রত্যাশা, আশা! ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হন এই শুটার। ধীরে ধীরে নিজের হতাশাকে কাটিয়ে উঠতে প্রচুর সময় নিয়েছিলেন মনু। তবে ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রমের ফল পেলেন অবশেষে।
মনু রুপো জেতার দিকেই এগোচ্ছিলেন। শেষ পাঁচটি রাউন্ডে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন মনু। দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় স্থান অধিকারী কিম ইয়েগিকে পিছনে ফেলে দেওয়ার দিকেই এগোচ্ছিলেন মনু। তবে ফাইনাল শটটির জন্যই মনু তৃতীয় হলেন, ব্রোঞ্জ জিতলেন। মনু শট করেন ১০.৩ এবং ইয়েগি ১০.৫। দক্ষিণ কোরিয়ার ওহ ইয়ে জিন জিতেছেন স্বর্ণপদক, তাঁর স্কোর ছিল ২৪৩.২।
আরও পড়ুন- হাড়জ্বালানো বাচ্চাকে শান্ত করতেই খেলায় ভর্তি! নীরজের উত্থান এক রূপকথা…
হরিয়ানার কন্যা মনু। বছরের পর বছর ধরে কুস্তিগীরদের তৈরি করে আসছে এই রাজ্য। সেই হরিয়ানাতে শুটিংয়ে নিজের পথ খানিক নিজেই তৈরি করেছেন মনু। তবে মনু ভাকরের যাত্রা শুটিং দিয়ে শুরু হয়নি। শুরুর বছরগুলিতে বহুমুখী অ্যাথলিট ছিলেন মনু। টেনিস, স্কেটিং, এমনকী মার্শাল আর্ট থ্যাং টা-ও শিখতে শুরু করেছিলেন মনু। জাতীয়স্তরে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন ঢের। তবে লক্ষ্য ছিল অলিম্পিক। ২০১৬ সালের রিও গেমস থেকেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলেন মনু।
মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই শুটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন মনু। প্রায় হাতে পায়ে ধরেই বাবাকে একটি পিস্তল কেনার জন্য রাজি করিয়েছিলেন। মনুর শুটিং প্রতিভা ছিল অনস্বীকার্য। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পোড় খাওয়া অলিম্পিয়ান হিনা সিধুর বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শুটিংয়ে নতুন দিশা দেখাতে পারেন তিনিই। দ্রুত আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি বাড়তে থাকে মনু ভাকরের। এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জেতেন। এশিয়ান গেমসে তীরে গিয়েও তরী ডোবে, হার আর জিতের মাঝ দিয়েই নিজের পথ নিজেই গড়ে চলেন মনু। যুব অলিম্পিকে দুর্দান্ত পার্ফম্যান্সের পর বিশ্বের নজরে আসেন মনু। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি শুটিংয়ে ভারতের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।
প্রবীণ অ্যাথলিট মার্কসম্যান জসপাল রানার প্রশিক্ষণে নিজেকে আরও তীক্ষ্ণ করতে থাকেন মনু। অবশেষে প্যারিস অলিম্পিকে জয়, ভারতের মুখ উজ্জ্বল।