ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব অবস্থান! কেন বলিভিয়ার পথে হাঁটছে না অন্য দেশগুলি?
Bolivia Against Israel : লাতিন আমেরিকার বামপন্থী দেশগুলি ফিলিস্তিনের প্রতি যেমন সহানুভূতি দেখিয়েছে
যুদ্ধ না জেতা অবধি, হাজারে হাজারে মানুষের লাশের উপর দিয়ে যারা ট্যাঙ্কার চালাতে বদ্ধপরিকর, সেই ইজরায়েলের সঙ্গে অন্য দেশগুলি কী সম্পর্ক রাখছে? কূতনৈতিক-রাজনৈতিক সখ্য রাখতে হয় নানা কারনেই। তবে এমন নৃশংস যুদ্ধের পরও, যুদ্ধবিরতি না চাওয়া দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা কি যায়? গাজাতে টানা ২৬ দিন ধরে চলা যুদ্ধের জন্য বলিভিয়া ইজরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কূটনৈতিক কোনও ক্ষেত্রেই বলিভিয়াকে আর পাশে পাবে না ইজরায়েল। অন্য দু'টি লাতিন আমেরিকান দেশও তেল আবিবে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। বলিভিয়া এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন?
বলিভিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি জানাচ্ছেন, বলিভিয়া গাজা উপত্যকায় ঘটে চলা আগ্রাসী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ইজরায়েলি সামরিক হামলাকে মেনে নিতে পারছে না। এই যুদ্ধের নিন্দা করতেই ইজরায়েলি রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলিভিয়া। গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলিভিয়ার সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং ফিলিস্তিনিদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা ন্যক্কারজনক। মন্ত্রী মারিয়া নেলা প্রাদাও ঘোষণা করেছেন যে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠাবে বলিভিয়া।
বলিভিয়ার এই অবস্থা দেখে, পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে ইজরায়েলও। ইজরায়েল মনে করছে বলিভিয়া সন্ত্রাসবাদের কাছে এবং ইরানের আয়াতুল্লাহ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রক বলিভিয়ার সিদ্ধান্তকে এত গুরুত্বই দিতে চাইছে না। বিদেশমন্ত্রক বলছে, লুইস আর্সের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই ইজরায়েল আর বলিভিয়ার মধ্যে তেমন সম্পর্কই আর ছিল না।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় হামাস জঙ্গিগোষ্ঠী এদিকে বলিভিয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। যে আরব দেশগুলো তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে তাদেরকেও বলিভিয়ার পথেই হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। বলিভিয়ার প্রতিবেশী কলম্বিয়া এবং চিলিও গাজায় সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর নিন্দা জানিয়ে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে পরামর্শের জন্য নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে।
আসলে লাতিন আমেরিকার বামপন্থী দেশগুলি ফিলিস্তিনের প্রতি যেমন সহানুভূতি দেখিয়েছে, তেমনই ডানপন্থী দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অনুসরণ করার পথেই এগোতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিলির রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল বোরিক ইজরায়েলকে আক্রমণ করেছেন আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের জন্য। রাষ্ট্রদূত জর্জ কারভাজালকেও প্রত্যাহার করার ঘোষণা করেন তিনি। এখানে উল্লেখ্য, আরব বিশ্বের বাইরে চিলিতেই প্রাচীনতম ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম অংশের বাস।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোও ইজরায়েলের এই হামলাকে 'ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যা' বলে অভিহিত করেছেন। মেক্সিকো এবং ব্রাজিল সহ অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলিও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার যুদ্ধের জন্য ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করা প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে বলিভিয়া। প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস ইজয়েলের উপর হামলা চালায়, তাতে ১,৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং প্রায় ২৪০ জনকে অপহরণ করে বন্দি করে নিয়ে যায় হামাস। মৃতদের মধ্যে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের অন্তত ১৩ জন নাগরিক এবং আরও ২১ জন নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছেন। গাজায় ইজরায়েলের যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৮,৫২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বলিভিয়া এর আগেও ২০০৯ সালে ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল, গাজায় ইজরায়েলের পদক্ষেপের প্রতিবাদে। সম্প্রতি ২০২০ সালে সেই সম্পর্ক আবার ঠিক হয়। গাজায় প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মানুষের বাস। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইজরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণে গৃহহীন হয়েছেন।