ইলেক্টোরাল বন্ডের গোপন কোড কেন সংগ্রহ করেছিল SBI?

Electoral Bond: ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প আনার সময়ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, যে এই কোড একেবারেই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত নয়। এমনকী এই কোডের সাহায্যে লেনদেন ট্র্যাক করা যাবে না বলেও জানানো...

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপি সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি। ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে কীভাবে কয়েকশো কোটি টাকা কোষাগারে পুরেছে বিজেপি, তা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে দেশবাসী। কে টাকা দিয়েছে, কত টাকা দিয়েছে, পরিষ্কার সেই তথ্যও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষপর্যন্ত ইলেক্টোরাল বন্ডের ইউনিক আলফা নিউম্যারিক কোড প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সেই নথি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিজেপি সরকারের এই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে ওই বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ও নথি প্রকাশ করারও নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। নানা টালবাহানার পরে সেই নথি সামনে আনে এসবিআই। তবে সেই নথিতেও সন্তুষ্ট হয়নি শীর্ষ কোর্ট। এর পরেই বন্ডের ওই আলফা নিউম্যারিক কোড সামনে আনতে বাধ্য হয় এসবিআই।

প্রাথমিক ভাবে এসবিআই দাবি করেছিল, তারা ওই আলফা নিউম্যারিক কোড আদৌ সঞ্চয় করেনি। প্রথম দফায় দুটি নথি সামনে এনেছিল এসবিআই। তার একটির মধ্যে ছিল কোন সংস্থা বা ব্যক্তি ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে কত টাকা রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছে, সেই তালিকা। দ্বিতীয় নথিতে ছিল কোন দল মোট কত টাকা পেয়েছে এই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প থেকে, তার হিসেব। নরেন্দ্র মোদি সরকার যখন ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প এনেছিল, সেসময় এসবিআইকে ওই কোড নথিভুক্ত রাখার কোনও নির্দেশ সরকার দেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন ওই তথ্য় নিজেদের কাছে নথিভুক্ত করে রেখেছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া?

আরও পড়ুন: নির্বাচনী বন্ডের চেয়েও ভয়াবহ! ১২০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি PM CARES ফান্ডে?

সম্প্রতি স্বচ্ছতাকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ সম্প্রতি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পের মূল কথা ছিল, এই বন্ডের মাধ্যমে যে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিতে পারবে। এসবিআইয়ের দেওয়া প্রাথমিক ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত নথি সামনে আসার পর কারা কারা টাকা দিয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে গেলেও, কোন কোন সংস্থা বা ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েছে, তা জানা যায়নি। যা জানার জন্যই ওই আলফা নিউম্যারিক কোড সামনে আনার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ কোর্ট। প্রতিটা ইলেক্টোরাল বন্ডেই একটি করে আলফা নিউম্যারিক কোড থাকে, যা একটি অন্যের থেকে আলাদা। এবং একমাত্র অতিবেগুনি রশ্মির সামনেই ওই কোড দৃশ্যমান। খালি চোখে ওই কোড দেখতে পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ২০১৮ সালে নিজে এক হাজার টাকা করে দু'টি ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করার সাংবাদিক পুনম আগরওয়াল। তার পরেই সামনে আসে ইউনিক আলফা নিউম্যারিক কোডের ব্যাপারটি। আর ওই কোডটিই একটি মাত্র সূত্র, যা অনুদান প্রদানকারী ও অনুদান গ্রহণকারীর মধ্যে একমাত্র সেতু। কে কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিচ্ছে, তা নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতেই ওই কোডকে ইলেক্টোরাল বন্ডের কাগজে খোলা জায়গায় দৃশ্যমান অবস্থায় রাখা হয়নি।

Why Did SBI Record Hidden Bonds Code – After Govt Said in 2018 That it Didn't?

ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প আনার সময়ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, যে এই কোড একেবারেই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত নয়। এমনকী এই কোডের সাহায্যে লেনদেন ট্র্যাক করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছিল। বরং প্রতারণা রুখতে নিরাপত্তার প্রয়োজনেই ওই কোডগুলি বন্ডে সুপ্ত ভাবে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এদিকে, কোন সংস্থা বা ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে, তা জানার জন্য সেই কোড প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। নানা টালবাহানার পরে তা প্রকাশ করেও দিল এসবিআই। সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এসবিআই তাদের কোনও নথিতে ওই কোডের উল্লেখ রাখেনি। বন্ডের ক্রেতা বা সেই অর্থের গ্রহীতার সঙ্গে ওই কোডের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করা হয়েছিল সরকারের তরফে। এই কোডের মাধ্যমে কোনও লেনদেন ট্র্যাক করা যাবে না বলেও সাফ জানায় বিজেপি সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। সরকারের সেই বিবৃতিতে এ-ও জানানো হয়েছিল, সরকার এবং বন্ড ব্য়বহারকারী অর্থাৎ ক্রেতা, কারওর সঙ্গেই ওই ইউনিক নম্বরটি শেয়ার করবে না স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।

সম্প্রতি অঞ্জলি ভরদ্বাজ নামে ওই আন্দোলনকারী সোশ্যাল মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে একটি টুইট করেন এই সংক্রান্ত। এসবিআই কেন সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই নম্বর তাদের রেকর্ডে রেখেছিল, প্রশ্ন তুলেছেন সে নিয়েও। এসবিআইয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, বন্ডের ক্রেতা এবং বন্ড থেকে লাভবান রাজনৈতির দলের সম্পূর্ণ নথিই মিলেছে ওই নথি থেকে। জানা গিয়েছে, কোন দলকে কোন কোন সংস্থা বা ব্যক্তি অনুদান দিয়েছেন। এই সব উল্লেখ করে ইলেক্টোরাল বন্ড মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির নেপথ্যেও নির্বাচনী বন্ড! কীভাবে?

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত নথি সামনে আসায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে বিজেপি সরকার। গোড়া থেকেই লোকসভা ভোট নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে এসেছে বিজেপি। তবে সেই আত্মবিশ্বাস যেন খানিকটা হলেও টলেছে এই ইলেক্টোরাল বন্ড কেলেঙ্কারি সামনে আসায়। রাতারাতি সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA) এনে দেশবাসীর নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছে বিজেপি সরকার। রামমন্দির তৈরি, উদ্বোধন উপলক্ষে এলাহি অনুষ্ঠান, হিন্দু রাষ্ট্রের হিরিক দিয়ে লোকসভা ভোট জয়ের যে রাস্তা বিজেপি তৈরি করেছিল, তাতে কি সামান্য হলেও অস্থিরতা তৈরি করেছে ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প? নাকি এ আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এই ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির নেপথ্যে রয়েছে আরও বড় দুর্নীতির গল্প। প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সমাজকর্মী ও আন্দোলনকারী অঞ্জলি ভরদ্বাজ।

More Articles