সূর্য অস্তাচলে, কেন সেলিমে ভরসা সিপিআই(এম)-এর?

বাজার অর্থনীতির দাপট আর তারই সঙ্গী হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা যখন রাজনীতির পরিমণ্ডলকে এক ভয়ঙ্কর দূষণের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে, তার জেরে সংসদীয় রাজনীতি এবং মাঠে-ময়দানে রাজনীতি, সর্বক্ষেত্রেই বামপন্থীরা গত প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময়  ধরে  একটা কোণঠাসা জায়গার মধ্যে চলে আসতে শুরু করেছে। ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সাংগঠনিক ভিত্তি যা-ই থাকুক না কেন, সংসদীয় রাজনীতিতে যদি ছাপ ফেলতে না পারা যায়, তাহলে সামগ্রিকভাবে রাজনীতির পরিমণ্ডলে নিজেদেরকে দৃশ্যমান রাখা বেশ দুষ্কর ব্যাপার।

এইরকম একটা পরিস্থিতি সি পি আই(এমে)র রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পরীক্ষিত জননেতা মহম্মদ সেলিমের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে আগামী দিনে একটা বিশেষ মাত্রা  এনে দিতে সক্ষম হবে।

ইউরোপীয় রাজনীতির মতো যখন কেবলমাত্র বক্তৃতা সর্বোচ্চ হয়ে উঠতে শুরু করেছিল বামপন্থী রাজনীতির ধারা, তখন বিভিন্ন ইস্যুতে বামপন্থী ছাত্র নেতৃত্ব, যুব নেতৃত্ব ক্রমশ বিগত দশ ,কুড়ি বছরের প্রথা তান্ত্রিকতার বাইরে বাম রাজনীতিতে নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে শুরু করেছিল। বামপন্থী রাজনীতিকে সমাজে বিশেষ ভূমিকা দিয়ে, সেখান থেকে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য গোটা পরিবেশ-পরিস্থিতি কে ব্যবহার করা - এই যে জায়গা, সেই জায়গাটিকে বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই কেবল মিটিং-মিছিলের রাজনীতিতে নিয়ে এসে, রাজনৈতিক মূলধন সেভাবে কিছু সঞ্চয় করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। মিছিল, জাঠা ,পদযাত্রা- এগুলো বহু করেছেন বামেরা।বিগত দশ  বছরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে বামপন্থীরা পাল্লা দিয়ে সেইসব মিটিং মিছিলের ছবি ভিডিও ইত্যাদি সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন। কিন্তু সেইসব মিটিং-মিছিল ইত্যাদি ঘটে যাওয়ার পর, তার বিশেষ কোনো প্রভাব সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিফলিত করে, তার ফসল বামপন্থী রাজনীতির ঘরে তোলবার ক্ষেত্রে সেভাবে সাফল্য, বামপন্থীদের আসেনি।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যেভাবে গত প্রায় এক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত রকমের সামাজিক স্তরকে  ক্রমশ অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ,আর সেই অন্ধকার কে আরো গহীনে পর্যবসিত করবার জন্য প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে কার্যত হাত ধরাধরি করে চলছে, তাকে প্রতিহত করার জন্য মিটিং-মিছিলের রাজনীতির পাশাপাশি যে সামাজিক আন্দোলন করা দরকার, হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতির জন্য যে ধরনের সামাজিক ব্যবস্থার পক্ষে মানুষকে পরিচালিত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ভারতের বহুত্ববাদী সামাজিক অবস্থানকে আরো গভীরভাবে বাংলার সমাজ জীবনে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ,দুর্ভাগ্যের বিষয় হল; চেষ্টা সত্ত্বেও বামপন্থীরা কিন্তু বিগত দশ - বারো  বছরে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, সেই জায়গাগুলিতে তেমন একটা সাফল্য আনতে পারেনি।

ফলে নির্বাচনী রাজনীতিতেও তারা ক্রমশই প্রান্তিক, প্রান্তিকতর, প্রান্তিকতম  অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা বড় অংশের বামপন্থীদের মধ্যে যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় ফিরে আসার ইচ্চে এবং চেষ্টা,  এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে ,শ্রেণী অবস্থানগত ক্ষেত্রে কংগ্রেস দলের সাথে বামপন্থীদের যেখানে আসমান জমিন ফারাক, বাজার অর্থনীতি প্রয়োগ ঘটিয়ে যে কংগ্রেস ভারতে সমস্ত ধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মাথা তোলবার সুযোগ করে দিয়েছে, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে ও নির্বাচনী মিতালী পাতিয়ে,  নির্বাচনী সংগ্রামে বামপন্থীরা অবতীর্ণ হয়েছে। স্বভাবতই কংগ্রেসের সঙ্গে সেই নির্বাচনী সমঝোতার কোন ফসল বামপন্থীদের ঝুলিতে পড়েনি। অথচ যখন দরকার ছিল বৃহত্তর বাম ঐক্য, বামফ্রন্টের পরিমণ্ডলের বাইরে যে সমস্ত বামপন্থীরা আছে, নানা ধরনের নীতিগত মতপার্থক্য সত্ত্বেও শ্রেণি প্রশ্নে  বামপন্থীদের মধ্যে একটা সার্বিক ঐক্য গড়ে তুলে, সাম্প্রদায়িকতার বিপদকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্যে  দরকার ছিল বৃহত্তর ঐক্য গড়ে নির্বাচনী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া,  সেই পথে বামপন্থীরা হাঁটার চেষটা করেনি।

কারণ তাদের দলের ভেতরে একটা অংশ  যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালী করবার  লাইনের সমর্থকদের প্রবল প্রতাপে তখন এই বামপন্থীরা নিমজ্জিত ছিল। এমন একটা সময় মহম্মদ সেলিমের মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সিপিআই(এম)  দলের সম্পাদকের দায়িত্বে, এটা যে কেবল সিপিআই(এম) দলের জন্য ইতিবাচক তাই-ই নয়, কেবলমাত্র বামফ্রন্ট ভুক্ত বামপন্থী দলগুলোর জন্য ইতিবাচক তা ও নয়।

সামগ্রিকভাবে নয়া উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং এই নয়া উদার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে  আরএসএস ও তার হাজার রকমের শাখা সংগঠন, আর তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি এবং আরএসএসের স্বাভাবিক মিত্র বলে পরিচিত প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার মূর্তিমান প্রতিভূ তৃণমূল কংগ্রেস, এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেন, তাদের প্রত্যেকের কাছেই সিপিআই (এম)--এর রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিমের নির্বাচিত হওয়া একটি বিশেষ ইঙ্গিতবাহী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে।

বেশ কিছু প্রচার মাধ্যম গোটা ব্যাপারটিকে একটা প্রান্তিক অবস্থানে বিচার করে দেখবার চেষ্টা করছেন। মহম্মদ সেলিম যেহেতু জন্মসূত্রে মুসলমান, সেই হেতু মুসলমান সম্প্রদায়ের যে জনসমর্থন বামপন্থীদের থেকে সরে গিয়েছিল, সেই জনসমর্থন ফিরিয়ে আনবার জন্য মহম্মদ সেলিম বামপন্থীদের ট্রাম্পকার্ড হবেন বা বিজেপি মহম্মদ সেলিম সিপিআই (এম) - এর রাজ্য সম্পাদক হওয়ার ফলে মেরুকরণের রাজনীতিটা  আরো জোরদার ভাবে করবার সুযোগ পাবে --এই ধরনের নানা সমীকরণ তারা উঠিয়ে  আনবার  চেষ্টা করছে।

প্রণব মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন বর্ণহিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কংগ্রেস কোন ভূমিকা নেবে কি নেবে না, এই ধরনের প্রশ্ন তারা তখন কিন্তু তোলেননি। অতীতে আটের দশকে একটা সময় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা  গনি খান চৌধুরী। আজ যে  রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরএসএস সামাজিক মেরুকরণের লক্ষ্যেই, কখনো ইতিবাচকভাবে, কখনো নেতিবাচকভাবে, মহম্মদ সেলিমের ধর্মভিত্তিক পরিচয়টাকে সামনে তুলে আনতে চাইছে, বরকত সাহেব যখন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, তখন কিন্তু আরএসএস-এর  সাংগঠনিক ভিত্তি, আজকের মত শক্তিশালী জায়গায় আসেনি। সেই কারণেই কিন্তু গনি খান চৌধুরী জন্মসূত্রে একজন মুসলমান, তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলে, কংগ্রেসের মুসলমান ভোটব্যাঙ্ক অটুট থাকবে কি থাকবে না এই প্রশ্নগুলি একটিবারও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসেনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ও উঠে আসেনি। অর্থাৎ, এই গোটা প্রক্রিয়াটিকে কিভাবে আরএসএস, তাদের হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত করে, নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির পক্ষে পালে হাওয়া যোগাতে চায়, সেটাই কিন্তু মহম্মদ সেলিম, সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে, প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে দেখিয়ে দিয়েছেন ।

এই জায়গা থেকে অত্যন্ত দ্রুত নিশ্চিতভাবে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, অর্থনীতির প্রশ্নে নানা লড়াইয়ের সঙ্গে আজকে যেভাবে আমাদের গোটা সমাজ জীবনকে বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত করে দেওয়ার জন্য, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং তার সহযোগী প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক শক্তি আদাজল খেয়ে নেমেছে, তাকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে, প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে, কনভেনশনাল রাজনৈতিক লাইনের সাথে সাথেই ,একটা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এবং পরিবেশকে তিনি তাঁর স্বাভাবিক দক্ষতা দিয়ে, মেধা দিয়ে, মননশীলতা দিয়ে  যে তিনটি বিপদের কথা বলা হলো, সেই  বিপদগুলির মূলে যে নয়া উদার অর্থনীতির ভয়াবহতা ,আর যার ফলশ্রুতি হিসেবে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা এবং প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা আজকে বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল কে রাজনীতির পরিচিত পাটিগণিতের বাইরে একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ,অনেকখানি তারা  সাফল্য ও অর্জন করেছে, সেই গোটা ব্যাপারটিকে শুধু প্রতিবাদ নয় , প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে মহম্মদ সেলিম একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবেন।

সেলিম এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি কখনো কোনো রকম রাজনৈতিক সংকীর্ণতা দিয়ে রাজনীতির পরিমণ্ডলকে আবদ্ধ করে রাখার পক্ষপাতী নন। আবার রাজনৈতিক বিরোধ, মতাদর্শগত বিরোধ, সেটাকে তিনি কখনও কোনও অবস্থাতেই একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত করেন না। বহু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তিনি অতীতে রাজ্যসভা, পরবর্তীকালে লোকসভার সদস্য থাকাকালীন, সরকার পক্ষের সঙ্গে তুমুল রাজনৈতিক বিবাদ বিতণ্ডা করার পরও কখনো কোনোভাবে বিপক্ষ রাজনীতির মানুষদের প্রতি একটি অসংসদীয় বাক্য, অসংসদীয় আচরণ করেননি।

পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় রাজনীতিতেও ২০০২  সালে তাঁর যে সক্রিয়তা আমরা দেখেছি, তার আগে তাঁর দলের যুব আন্দোলনের নেতৃত্ব দান কালে আমরা দেখেছি, রাজনীতিকে তিনি কখনো কোনো অবস্থাতেই নিছক ব্যক্তি ক্যারিয়ার তৈরির একটা উপায় হিসেবে দেখেননি। সমাজ বিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত ফলিত অধ্যায় হিসেবে রাজনীতিকে দেখে, নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী ,সেই ভাবনার প্রয়োগ কিভাবে আমাদের সমাজ জীবনে করতে পারা যায়,যার দ্বারা সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারে যায় ,সেটাই তাঁর সামগ্রিক রাজনৈতিক, মানসিক চিন্তাচেতনার প্রধান অঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে।

বাম রাজনীতির একটি শীর্ষপদে উঠে আসা মহম্মদ সেলিমের রাজনীতির ক্ষেত্রে সাফল্যের টিআরপি কিন্তু হল কোনরকম ভ্যানিটির  পরিচয় না দিয়ে, সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা কে কেন্দ্র করে ,মানুষের জীবন-জীবিকার লড়াইয়ের শিখরে পৌঁছানোর চেষ্টা ।এই গোটা পরিমণ্ডল টি তৈরীর ক্ষেত্রে সেলিমের চিন্তা-চেতনার জগতকে মার্কসীয় ব্যাখ্যার  সাথে সাথেই, ভারতের সমন্বয়বাদী, বহুত্ববাদী দর্শন একটা বিশেষ ভাবে অবদান রেখেছে।

  • মহম্মদ ইসমাইল থেকে শুরু করে প্রমোদ দাশগুপ্ত, আন্দামান ফেরত বিপ্লবী রাধারমন মিত্র--এককালে বামপন্থীরা যখন যাঁকে মার্কিনী চর  বলে অভিহিত করত, সেই  প্রবাদ প্রতীম মনীষী আবু সয়ীদ আইয়ুব, কলিম শরাফীর মত সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উপমহাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব ,এমন বহু মানুষ, সেলিমের চিন্তা-চেতনার পরিমণ্ডলকে পরিশুদ্ধ করেছেন। পরিমার্জিত করেছেন। পরিপূর্ণ করেছেন। ফলে তাঁর চিন্তা চেতনার পরিমণ্ডল বিস্তারের ক্ষেত্রে 'সংকীর্ণতা' বলে শব্দটি, পরমত অসহিষ্ণু বলে শব্দটি, বিরুদ্ধমত পোষণ করেন এমন কোন মানুষের প্রতি অসূয়া জনিত মানসিকতা --এগুলি কোনদিনও ঠাঁই পায়নি। তাই এটা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলতে পারা যায় যে, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিআই(এম) তৈরির পর, দলীয় পরিমণ্ডলে অত্যন্ত সমাদৃত প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বকে ওই দল তাঁদের নেতৃত্ব হিসেবে বরণ করে নিলেও, বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে, কনভেনশনাল, রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় আবৃত নন, একটা বৃহত্তর ও পরিসরের মধ্যে নিজের ভাবনাকে, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সাথে সাথে লালন করা ব্যক্তিত্ব হিসেবে মেলে ধরা মানুষ মহম্মদ সেলিম। রাজনৈতিক দক্ষতায় তাঁর সমতুল্য বহু মানুষ ,অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি বা পরবর্তীকালে বিভাগ উত্তর সি পি আই(এমে) র নেতৃত্ব দিলেও, আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে, বহুত্ববাদের সংকট, সমন্বয়বাদী চেতনাকে ভেঙে তছনছ করে, রাজনৈতিক হিন্দুত্বের দিকে ভারতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য,বাজার অর্থনীতির ধারক বাহকদের চামচে হিসেবে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার যে উদগ্র প্রতিযোগিতা, এইসবের  পরিপ্রেক্ষিতে, সিপিআই(এম)- এর রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিমের দায়িত্বভার গ্রহণ, কেবল আমাদের রাজ্যেই নয়, গোটা ভারতে সংকটাপন্ন আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক পরিবেশে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে আগামী দিনে অবশ্যই চিহ্নিত হবে।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

More Articles