সঙ্গে তড়কা অথবা সামান্য আচার, ব্যাস! জানেন কীভাবে ভারতে জনপ্রিয় হয়ে উঠল তন্দুরি রুটি?

Tandoori Roti : কোথা থেকে এল তন্দুরি রুটি? কীভাবেই বা লক্ষ লক্ষ মানুষের রসনা তৃপ্তি ঘটালো এই পদ?

ভুরিভোজেই আসল সুখ বাঙালির। তাই মান্না দের কণ্ঠে বিখ্যাত হয়ে যায় অমন গান। ইস্তাম্বুল, জাপান, কাবুল হয়ে একগাদা জনপ্রিয় রান্না শিখে বাঙালির হেঁশেলে জায়গা করে নেন ভজহরি মান্না। তবে খাবার নিতে এটুকু বিস্তৃতিই যথেষ্ট নয়। এর রয়েছে লম্বা একটা ইতিহাসও। খাবার নিয়ে এখন স্থান কালের ভেদাভেদ প্রায় নেই বললেই চলে। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের খাবার এখন একযোগে মেলে রেস্তোরাঁয়। তাছাড়া এখন তো আবার ফিউশন খাবারের চল, তাতেই মিলে মিশে যায় উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমের বিভিন্ন পদ। শুধু দেশি খাবারের মেলবন্ধনের কথাই বা কেন, এ দুনিয়ায় বিদেশি খাবারের আনাগোনাও চলে নিরন্তর। ঠিক যেমন বিদেশের সর্বত্র মেলে বাঙালি খাবারের আস্তানা।

তবে খোদ ভারতীয় খাবারের প্রাচীনত্বের তালিকা প্রস্তুত করলে অবশ্য সর্বাগ্রে নাম আসে তন্দুরের। পশ্চিমী পদ হলেও সময়ের স্রোতে কবেই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের অন্যত্র। ক্রমে বিদেশেও। এই তন্দুর শব্দটি এসেছে হিন্দি অথবা উর্দু তানদুর থেকে যা ফার্সি তানর শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ হল মাটির চুলা । দেহখোদা ফার্সি অভিধান মতে, ফারসি শব্দটি মূলত এসেছিল আক্কাদিয়ান শব্দ তিনুরু থেকে। যেখানে এর অর্থ ছিল কাদা এবং আগুন নিয়ে গঠিত চুলা বিশেষ।

যদিও প্রযুক্তি অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে রান্নার উপকরণ থেকে শুরু করে আধার, সবই। আজকাল বিভিন্ন আধুনিক মডেলের তন্দুর ওভেনের পাশাপাশি মাইক্রোওভেনেও রান্না করা হয়। তবে সাবেকি আমলের দিকে ফিরে তাকালে তন্দুর মানেই বোঝায় একটা কোনও চুলা আর তাতে পুড়িয়ে রান্না। মূলত নলাকার কাদামাটি বা ধাতুর তৈরি চুলাকেই তন্দুর বলা হতো সে যুগে।

আরও পড়ুন - পিরামিডের যুগেও ছিল তন্দুরের চল, দেখতে কেমন ছিল প্রাচীন ভারতীয় চুলাগুলি?

এই তন্দুরি পদের মধ্যে জনপ্রিয় হোক নান বা রুটি জাতীয় খাবার। তন্দুরি রুটি হল এক ধরনের ফ্ল্যাটব্রেড যা ভারতীয় খাবারের তালিকায় বহুদিন ধরেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এটির মূল উপকরণ বলতে গমের আটা। এরপর সাধারণ রুটির আটা মাখার মতো করে জল দিয়ে মেখে তা থেকে ডো নিয়ে লেচি কেটে নিতে হয়। এরপর পাতলা বৃত্তাকারে বেলে ওই নলাকার মাটির চুলা বা তন্দুর চুলায় উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তৈরি করা হয় এই বিশেষ খাবার।

তন্দুরি রুটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল এর নরম এবং ফ্লপি ধরন। তন্দুর ওভেনের উচ্চ তাপ রুটিটি দ্রুত রান্না করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি এটিকে সামান্য খাস্তা স্বাদ দিতেও সাহায্য করে। খেতে এতটাই অন্যরকম হয় যে একসঙ্গে নরম এবং সামান্য খসখসে হয় এই তন্দুরি রুটি। এই তন্দুরি রুটি সাধারণত তরকারি, স্টু এবং মসুর ডাল সহ বিভিন্ন ধরণের খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। রাতের খাবার হিসেবে ভারতীয় রান্নাঘরে এর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ ধরনের ঝাল স্বাদের চাটনি দিয়ে খেতেও অসাধারণ লাগে এই রুটি।

আরও পড়ুন - কাঁচা খাবার রান্না করা শুরু হয়েছিল ঠিক কবে থেকে? যে রহস্য লুকিয়ে ভারতের রান্নার ইতিহাসে

সুস্বাদু স্বাদ ছাড়াও, তন্দুরি রুটির রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর দিকও। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ গমের আটা থেকে তৈরি, ফলে এটি ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টির একটি ভাল উৎস। উপরন্তু, তন্দুর ওভেনের উচ্চ তাপ রুটিতে ফ্যাটের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। সেই কারণে এটি অন্যান্য ধরণের ফ্ল্যাটব্রেডের তুলনায় স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে বিবেচ্য।

বহুল জনপ্রিয়তা রয়েছে ঠিকই তবে তন্দুরি রুটি প্রস্তুতির ঝক্কিও কিছু কম নয়। আটা মাখা থেকে শুরু করে ডো কাটা, লেচি বেলা, এবং তা দিয়ে সুস্বাদু তন্দুরি রুটি প্রস্তুত করা এই গোটাটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। এছাড়া তন্দুরি রুটি প্রস্তুত এর চুলাটি পরিষ্কার করাও যথেষ্ট কঠিন কাজ এবং এটির বিশেষ যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। তবে স্বাদের জনপ্রিয়তার কাছে কোনও কাজই কঠিন নয়। তারপর এটি আবার স্বাস্থ্যকর দিক থেকেও উপযোগী, ফলে এত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তন্দুরি রুটি ভারতীয় রন্ধনশৈলীতে একটি প্রিয় খাবার হিসাবেই রয়ে গেছে। সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষও এখন ভারতীয় রুটির স্বাদে মোহিত।

More Articles