জলেস্থলে অবাধ বিচরণ! দেখা মিলল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম পাখির
World's most dangerous bird: সব পাখিকে পিছনে ফেলে সম্প্রতি সামনে এসেছে পৃথিবীর বিপজ্জনকতম পাখিটির নাম। বনে-জঙ্গলে বা স্থলে তো বটেই, একই সঙ্গে জলেও নাকি সমান দক্ষ এই আশ্চর্য পাখিটি।
প্রাণীজগতে বাঘ-সিংহ বা হায়নাকে যতটা সাংঘাতিক বলে ঠাওরানো হয়, পাখি মানেই যেন একটু কম ভয়ানক। যদিও পাখি জগতেও বাজ, ঈগলের মতো শিকারী পাখির ভালোই রমরমা রয়েছে। কিংবা হাওয়ার থেকেও জোরে ছোটা উটপাখিরও কম নামডাক নেই এ ব্যাপারে। তবে সেই সব পাখিকে পিছনে ফেলে সম্প্রতি সামনে এসেছে পৃথিবীর বিপজ্জনকতম পাখিটির নাম। বনে-জঙ্গলে বা স্থলে তো বটেই, একই সঙ্গে জলেও নাকি সমান দক্ষ এই আশ্চর্য পাখিটি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিঙ্গিল উপসাগরে খোঁজ মিলেছে বিপজ্জনক এই পাখিটির। বাজ বা ঈগলজাতীয় পাখিরা সাধারণত তাদের আশ্চর্য শিকার ধরার ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, ধারালো নখর দিতে শিকারকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে অভ্যস্ত এরা। তবে বিঙ্গিল উপসাগরে খোঁজ মেলা পাখিটি এদেরকে বলে বলে দশ গোল দিতে পারে।
আরও পড়ুন: এক বছর ধরে পাখির মুখোশ পরে রয়েছেন এই বিজ্ঞানী! কারণ জানলে চমকে উঠবেন…
গত ৩১ অক্টোবর ছিল হ্যালুইন ডে। সেই দিন বেশ করেয়জন বিঙ্গিল উপসাগরের পূর্ব উপকূলে হঠাৎই দেখা পান পাখিটির। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন, কোনও কচ্ছপ বা হাঙর হবে। তবে ভালো করে দেখে বুঝতে পারেন, সেসব কিছুই নয়। সেটি আসলে একটি অল্প বয়সী ক্যাসোয়ারি পাখি। কুইন্সল্যান্ডের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগে সেটির ছবি পাঠানোর পর তেমনটাই জানা গিয়েছে।
View this post on Instagram
সান দিয়েগো চিড়িয়াখানা তরফে জানা গিয়েছে, এই ক্যাসোয়ারি পাখিটি আদতে ইমু প্রজাতির অন্তর্গত। সাধারণত নিউ গিনি ও উত্তর পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে বসবাস করে। দেখতেও অনেক ইমু পাখির মতোই। গায়ের রংও বেশ চমকদার। গাটি বড় বড় এবং ঘন পালকে ঢাকা। মাথার কাছে রয়েছে একটু উঁচু ঝুঁটি। ঘাড়ের কাছে নীল-সাদার আভা এবং ঘাড়ের কাছে রয়েছে লাল রঙের একটি অংশও রয়েছে। আবার দাড়ির মতো দুটি লাল রঙের ঝুলন্ত মাংস রয়েছে গলার কাছ থেকে। সাউদার্ন ক্যাসোয়ারি পাখিটি বিশ্বের তৃতীয় লম্বা ও দ্বিতীয় ভারী পাখি হিসেবে পরিচিত। গায়ের রংয়ের জন্য় বেশ আকর্ষনীয় দেখতে পাখিটি। তবে সুন্দরের চেয়েও ভয়ানক ধারালো তার নখরযুক্ত শক্তিশালী পা-গুলি। শিকার ধরার কাজে যেগুলোকে ব্যবহার করে তারা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, শুধু স্থলে নয়, একই সঙ্গে সাঁতারেও দক্ষ পাখিটি। ফলে একবার শিকার চোখে পড়লে, তার জলে গিয়েও রক্ষে নেই। জলের গভীর থেকে সে খুঁজে আনবেই শিকারটিকে। সাধারণ ভাবে খুব একটা আক্রমণাত্মক নয় পাখিগুলো। নিজের মনেই থাকতে পছন্দ করে। আক্রমণের হারও কম। তবে ক্ষেপে গেলে রক্ষে নেই।
এমনকী মানুষের প্রাণ পর্যন্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে পাখিটি। এখনও পর্যন্ত ক্যাসোয়ারি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মোট ২২১টি। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশ ঘটনার জন্য়ই দায়ী মানুষ। কোনও না কোনও ভাবে পাখিকে খাওয়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন তারা। ক্য়াসোয়ারির বাসার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে ওদের আক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:স্বপ্নে রেওয়াজ করে পাখিরা! জানেন, ঘুমিয়ে কী কী স্বপ্ন দেখে প্রাণীরা?
তবে বর্তমানে এই পাখিটি বিপন্ন। কুইন্সল্যান্ডে আনুমানিক ৪ হাজার ক্যাসোয়ারি অবশিষ্ট রয়েছে। ক্রমে প্রজাতিটি অবলুপ্তির পথে। মানুষের হস্তক্ষেপ তো বটেই, দুর্ঘটনা ও অন্যান্য পশুর আক্রমণ-সহ নানা কারণে সঙ্কটে প্রজাতিটি। এ ভাবে চললে খুব শিগগিরই ডায়নোসরের মতোই ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে এই পাখিটিও।