প্রথম দফাতেই 'কোটিপতি'দের মেলা! অবাক করবে বাংলার যেসব প্রার্থীর সম্পত্তির পরিমাণ
Lok Sabha Election 2024: কোনও বিশেষ একটি দলের প্রার্থী নয়, প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই রয়েছেন সেই কোটিপতির তালিকায়। বিজেপি ও তৃণমূলের অন্তত দু'জন প্রার্থীর নামে রয়েছে কোটি টাকার সম্পত্তি
লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই সামনে এসেছে ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি। যার মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকা করে ঢুকেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অ্যাকাউন্টে। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি বলে আখ্যা দিয়েছে তাবড় অর্থনীতিবিদেরা। দেশ জুড়ে ভোটের যে এই বিরাট আয়োজন, তার টাকা কোথা থেকে আসে, তা এতদিনে জানা হয়ে গিয়েছে দেশবাসীর। এসবিআইয়ের ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য থেকে তা স্পষ্ট। শুধু রাজনৈতিক দলের কোষাগারই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতির নেতা তথা ভোটপ্রার্থীদের অ্যাকাউন্টও কিন্তু কোনও অংশে কম যায় না। গোটা দেশের কথা তো ছেড়েই দিন, বাংলায় প্রথম দফার ভোটের মোট ৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত দশ জন রয়েছেন, যারা কোটিপতি।
লোকসভা ভোট শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল। বাংলায় প্রথম দফায় ভোট হতে চলেছে উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে ভোট রয়েছে ওইদিন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের হলফনামা যাচাইয়ের পর সামনে এনেছে এই তথ্য। কোনও বিশেষ একটি দলের প্রার্থী নয়, প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই রয়েছেন সেই কোটিপতির তালিকায়। বিজেপি, তৃণমূলের অন্তত দু'জন প্রার্থীর নামে রয়েছে কোটি টাকার সম্পত্তি, সিপিআইএম, কংগ্রেস ও আরএসপি থেকে রয়েছেন এক জন করে প্রার্থী এবং তিন জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন তালিকায়, যাঁরা কোটি টাকার মালিক। নির্বাচনী হলফনামায় সেই তথ্য তাঁরা দিয়েছেন নিজেই।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে গেলেই ফাঁড়ামুক্তি! দেশের ২৩ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে যেভাবে বাঁচিয়েছে মোদি সরকার
এডিআরের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, সেই কোটিপতিদের মধ্যে ধনীতম হলেন জলপাইগুড়ি আসনের বাম প্রার্থী দেবরাজ বর্মন। যার সম্পত্তির পরিমাণ ৩,৮৯,৮৯,৪৬৮ টাকার কাছাকাছি। অথচ ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে যে রাজনৈতিক দল একটি নয়াপয়সাও পায়নি, তারা কিন্তু সিপিআইএম। এ রাজ্যে বামেদের অবস্থা তেমন ভালো না হলেও কেরলের মতো রাজ্যে এখনও ক্ষমতায় তারা। সেখানেও কিন্তু ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত কোনও রকম অর্থনৈতিক লাভ হয়নি তাদের। বরং এই ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির ব্যাপারে বারংবার সওয়াল করেছিল তারাই। সেই দলের প্রার্থী হয়ে জলপাইগুড়ির বামপ্রার্থী দেবরাজের এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অবাক করেছে অনেককেই। তবে এ ক্ষেত্রে দেবরাজকে ব্যতিক্রমই বলা যায। কারণ সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (SUCI) প্রার্থী চন্দন ওঁরাওয়ের মতো প্রার্থীরাও রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার থেকে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এবং যার কাছে সম্পত্তি রয়েছে ১২ হাজার টাকার। প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে কম সম্পত্তির অধিকারি প্রার্থী চন্দনই।
শুধু টাকার অঙ্কেই নয়, প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা ও তাঁদের জমা করা হলফনামা ও তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ জন প্রার্থী হলফনামায় তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কথা ঘোষণা করেছেন। যাদের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলা রয়েছে বলে খবর। টাকায়, অপরাধে যতটা এগিয়ে, শিক্ষাদীক্ষাতেও কি ততটাই এগিয়ে বাংলার প্রথম দফার লোকসভা ভোটপ্রার্থীরা। এডিআরের রিপোর্ট বলছে, তাদের মধ্যে ১৬ জন প্রার্থী পড়েছেন অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। স্নাতক বা তারও উপর পর্যন্ত পড়েছেন কুড়ি জন। একমাত্র এক জন প্রার্থীই নিজেকে নিরক্ষর বলে ঘোষণা করেছেন হলফনামায়।
যতদূর জামা গিয়েছে, ওই রিপোর্ট থেকে, তাতে মাত্র ২১ জন প্রার্থী নিজেদের বয়স জানিয়েছেন ২০ থেকে ৫০-এর মধ্যে। ১৫ন জন প্রার্থীর বয়স ৫১ থেকে ৭০। এবং একজন মাত্র প্রার্থী রয়েছেন, যার বয়স ৭১। তেমনটাই জানাচ্ছে ঘোষণা করেছেন হলফনামায়। তেমনটাই জানাচ্চেন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)।
আরও পড়ুন:ভোটের মুখে মোদির গলায় বিঁধে অনন্ত-কাঁটা, কোচবিহারে গড় ধরে রাখতে পারবে বিজেপি?
লোকসভা ভোটের লড়াই বলে কথা। সাজো সাজো রব সারা দেশ জুড়ে। ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা সারা। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচারও। যার মধ্যেই সামনে এল উত্তরবঙ্গের এই সব কোটিপতি প্রার্থীদের তত্ত্ব। এই সব প্রভাবশালী কোটিপতিরা আদতেই কি কোনও আলাদা ছাপ ফেলতে চলেছে ২০২৪ লোকসভা ভোটে। নাকি এই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ময়দানে কোনও কাজেই আসবে নাা সেই সব তত্ত্ব। বরং মানুষ তাঁকেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চলেছেন, যাকে ভরসা করতে পারবেন তাঁরা। মানুষের রায় আদতে কোনদিকে যেতে চলেছে শেষপর্যন্ত, দেখার সেটিই।