RSS-র থেকে কতটা বিপদ দেশের? কেন তুলে নেওয়া হল এত বছরের নিষেধাজ্ঞা?
RSS: ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আরএসএস। তার পর থেকেই তাদের উপর বহু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে এবং তোলা হয়েছে।
সেটা ১৯৬৬ সালের কথা। তখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ইন্দিরা গান্ধি। সে সময় একটি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ঘোষণা করে দেন, কোনও সরকারি কর্মচারীই আর আরএসএসের কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারবেন না। সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে আরএসএস তাদের কার্যকলাপ না নিয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে দিয়ে সমাজে তাদের মতাদর্শের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়, তাই এই সতর্কতা। এতদিন অবধি এই নির্দেশিকাই বহাল ছিল। কার্যত এত বছর পরে, ২০২৪ সালে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে এই নির্দেশিকা তুলে নেওয়া হল। এই নিয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বহু শরিকদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। যেহেতু গত দু'বারের মতো এবার নরেন্দ্র মোদীর আর এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই নির্দেশিকা তোলার পিছনে আরএসএসের প্রভাব যথেষ্টই রয়েছে। ২০২৫ সালে শতবর্ষ উদযাপন করবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। আর সেই উদযাপনে যাতে সরকারের বিভিন্ন আমলা, মন্ত্রী, বিচারপতিরা সরাসরি অংশ নিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই তুলে দেওয়া হল নিষেধাজ্ঞা। এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
একদিকে রাহুল গান্ধী সংসদে দাঁড়িয়ে আরএসএস এবং সঙ্ঘ পরিবারকে হিংসার রাজনীতি করার জন্য আক্রমণ করছেন, আর অন্যদিকে সেই আরএসএসকে সামাজিক মান্যতা দেওয়ার জন্য তাঁদের উপর ১৯৬৬ সালে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আগামী বছর শতবর্ষ উদযাপনকে সামনে রেখেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই পদক্ষেপ করেছে। এই বিষয়ে আগামী দিনে রাহুল গান্ধীরা আরও সুর চড়াবেন, এমনটা আশা করাই যায়। রাহুল গান্ধীর তোলা অভিযোগকে মেনে বিজেপি এবং আরএসএসকে ভারতীয় সমাজ দূরে ঠেলে দেয়, নাকি সঙ্ঘ পরিবার চিরকালই একটি সামাজিক সংগঠন এবং তারা কোনওদিনই হিংসার রাজনীতি করেনি— এই ধারণা জয়ী হয়, সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন: ইন্দিরার জরুরি অবস্থার বিরোধিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন RSS পরিচালক
১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আরএসএস। তার পর থেকেই তাদের উপর বহু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে এবং তোলা হয়েছে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারি, মহাত্মা গান্ধীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যিনি এই হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই নাথুরাম গডসে প্রকাশ্যে বলেছিলেন— তিনি গান্ধিকে ঘৃণা করেন, তারপরেই তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। সেই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল একটি নির্দেশ জারি করেন। তাতে বলা হয়, আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সেই নির্দেশিকাতে লেখা ছিল, যে শক্তি ঘৃণা এবং হিংসা ছড়ায়, তাঁদের শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। যদিও সঙ্ঘ পরিবার এবং তাঁদের অন্যান্য শাখা সংগঠন, এমনকী আরএসএস বারংবার এটা দেখানোর চেষ্টা করে এসেছে যে বল্লভ ভাই প্যাটেল একজন ‘লৌহ পুরুষ’ এবং তাঁকে কংগ্রেস বঞ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী না করে অন্যায় করেছে। কিন্তু তাঁরা একটা কথা ভুলে গিয়েছেন হয়তো, প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায়, মহাত্মা গান্ধী হত্যার পরে তিনিই কিন্তু আরএসএসকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে, সেই সংক্রান্ত একটি বিশদে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে পরিষ্কার লেখা ছিল, ঘৃণা ও বিদ্বেষের কারবারিরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং দেশের বদনাম করছেন এবং যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, তার ক্ষতি করছে।
মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার পরে, যখন ধৃত নাথুরাম গডসের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, ভারত সরকার তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে এই বিদ্বেষের কারবারিদের বাড়তে দিলে সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারতবর্ষের মুখ পুড়বে সারা বিশ্বের কাছে। স্বাধীনতার পরবর্তীতে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নিজস্ব রাজনীতি করার অধিকার যাতে বজায় থাকে, সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি ছিল নতুন ভারত সরকারের। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই সময় উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল দেশের প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে। সেই সময়ের রাজনৈতিক যে দলগুলো ছিল, হয়তো তাঁদের সঙ্গে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের সর্বজনীনভাবে রাজনীতি করা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শুধু একটা বিষয় নিয়েই তাঁদের ভাবনা ছিল, যে কোনও দলের কোনও রাজনৈতিক কার্যকলাপ যেন, আইনের সীমা লঙ্ঘন না করে। যদিও তখন খুব বেশী আইন প্রনয়ণ হয়নি, কিন্তু ভারতে তখন যে বিরোধী দল ছিল, তারাও সচেষ্ট ছিল, যাতে সেইটুকুও লঙ্ঘিত না হয়। সেইদিকে সরকারের বিশেষ নজর ছিল আর তখনই সরকারের গোচরে আসে যে আরএসএস যেমন বলেছিল, তেমনটা করছে না। তাঁদের কিছু অন্য উদ্দেশ্য আছে, যা সেই সময়ে বাঞ্ছনীয় নয়। সরকারের কাছে দেশের নানান প্রান্ত থেকে খবর আসতে থাকে, সঙ্ঘ পরিবারের বহু সদস্য, চুরি, ডাকাতি, দাঙ্গা এবং খুন-জখমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে , তারা বেআইনি অস্ত্র জোগাড় তো করছেই এবং তাঁদের কাছে গোলাগুলিও আছে। বেশ কিছু প্রচারপত্র নজরে আসে, যেখানে বলা হয়, কম বয়সী যুবকেরা যেন ছিনতাই করে অস্ত্র জোগাড় করে এবং সরকারের নিয়ম যেন লঙ্ঘন করে। তাঁদের একটাই বক্তব্য ছিল, এইভাবেই সরকারের পুলিশ-মিলিটারিকে অগ্রাহ্য করা যাবে।
যদিও এই কাজগুলো করাই হয়েছে গোপনীয়তা মেনে। কিন্তু তা-ও সরকারের কাছে খবর ছিল। সরকারের তরফ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রশাসনিকভাবে এর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে, দেশের নানান রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা যখন দিল্লিতে মিলিত হন, তখন তারা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে সঙ্ঘ পরিবারের এই হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি দেশের মুখ পোড়াচ্ছে এবং তাদেরকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই গণ্য করা হবে এবং সেই সংগঠনের কোনও ব্যক্তি যদি কোনও ধরনের হিংসায় যুক্ত থাকেন বা দোষীসাব্যস্ত হন, কিংবা প্রমাণ হয় যে তিনি অস্ত্র নিষিদ্ধভাবে সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত, তাহলে কঠোরভাবে বিষয়টি দেখা হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা কোনওভাবেই তাদের কাজকর্ম বন্ধ করার কোনও আভাস দেওয়ার চেষ্টা করেনি। এবং সেই জন্যেই স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়, যার শেষতম উদাহরণ মহাত্মা গান্ধী। এই অবস্থায় সরকারের আর কিছু করণীয় ছিল না, তাদের কোনও একটি সিদ্ধান্ত নিতেই হতো। হয় তারা চোখ বন্ধ করে বসে থাকত, নাহলে সমস্ত হিংসা ঘৃণা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটা পদক্ষেপ করত। কার্যত এমন একটি সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হতো, যার মধ্যে দিয়ে এই ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়। তারপরেই সরকারের তরফ থেকে আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের কোনও দ্বিধা ছিল না যে এই ঘোষণার ফলে সাধারণ নাগরিক, যাঁরা দেশের আইন মেনে চলতে আগ্রহী এবং দেশকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের সমর্থন পাওয়া যাবে।
সর্দার প্যাটেলের হয়তো সঙ্ঘ পরিবারের প্রতি একটা নরম দৃষ্টিভঙ্গী ছিল। কিন্তু গান্ধি হত্যার পরে, তাঁর দেখার চোখ বদলে যায়। তারপরেই তিনি অত্যন্ত কড়া ভাষায় ঐ গান্ধিহত্যার সমালোচনা করে লেখালিখি শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ১৮ জুলাই তারিখে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে সঙ্ঘ পরিবারকে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরে আরএসএস আর তাদের আগের কাজ যাতে চালিয়ে না নিয়ে যায়। তিনি পরিষ্কার লেখেন, সঙ্ঘ পরিবারের কর্মকাণ্ড সরকারের বদনাম করছে এবং তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও হিংসাশ্রয়ী কাজ থেকে সরে আসেনি তারা। যত সময় যাচ্ছে, তারা যে সরকারের বিরোধী, তা পরিষ্কার করে দিচ্ছিল তাঁদের কর্মকাণ্ড। দেখা গেল, সঙ্ঘের প্রতিটি শাখাই সরকারের অস্তিত্বকেঅস্বীকার করতে চাইছে এবং আইন মানতে চাইছে না। বরং তারা ক্রমশ ঘৃণা ছড়ানোর কাজই বাড়িয়ে চলেছে।
১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সঙ্ঘের প্রধান গোলওয়ালকরকেও চিঠি লেখেন সর্দার প্যাটেল। কেন তিনি আরএসএসকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন, সেই ব্যাখ্যাও দেন সেখানে। হিন্দুদের সংগঠিত করা এবং তাদের সাহায্য করা এক, কিন্তু হিন্দুদের দুর্দশার জন্য অন্য সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া বা নির্দোষ, অসহায় মহিলা-পুরুষদের অত্যাচার করা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসের ১১ তারিখ শেষপর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ওঠে। কারণ গোলওয়ালকর তখন সরকারের কিছু শর্ত মানবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তারপরে সরকারের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, যেখানে বলা হয়, যে যেহেতু রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ ভারতের জাতীয় পতাকা এবং সংবিধানকে মেনে নিতে রাজি হয়েছে, তাই তাঁদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়— সঙ্ঘ পরিবার বলেছে, যাঁরা ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতি করবে, তাঁদের কোনও স্থান নেই সঙ্ঘ পরিবারে। শুধু তাই নয়, আরএসএস কথা দিয়েছে, যে তারা তাঁদের নিজস্ব সংবিধানেও বদল আনবে এবং তা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আর সেই জন্যেই এই নিষেধাজ্ঞা তোলা হল। আরএসএস নেতা গোলওয়ালকরের বক্তব্যকে মান্যতা দিতে সঙ্ঘ পরিবারকে আরও একবার সুযোগ দেওয়া উচিত বলেই মনে করে সরকার। সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তির পরে আবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ রাজনীতির খোলা ময়দানে ফেরত আসে।
১৯৪৮ সালের পরে আরও অন্তত তিনবার সঙ্ঘ পরিবারের কার্যকলাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে আর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে একবার নিষিদ্ধ হয় আরএসএস। তার আগে ১৯৬৬ সালে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আরএসএস এবং জামাত-এ ইসলামের কর্মসূচীতে সরকারি কর্মীদের যোগদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আর তা-ই বহাল ছিল এতদিন। তবে মোদির কেন্দ্রীয় সরকার সেই নিষেধাজ্ঞাই তুলে নিল, যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ১৯৪৯ সালে যখন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরএসএসের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তখনও কিন্তু আরএসএস নিজেদের সরাসরি রাজনীতির খোলা ময়দানে নিয়ে আসেনি। তারা নিজেদের সামাজিক সংগঠন হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করে গেছে। পাশাপাশি তারা চেষ্টা করে গিয়েছে, কী করে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত ও দীক্ষিত মানুষদের প্রশাসনের মাথায় বসানো যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এইভাবেই তারা ভারতীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এতদিন তাদের কাজ সেটাই ছিল। ২০১৪ সালের পরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসার পরে, তারা তাদের কাজকে আরও ত্বরান্বিত করে। এখন বিচারব্যবস্থা, আমলা বা সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে আরএসএসের প্রভাব এবং চিন্তাধারার প্রবল বিস্তার ঘটেছে। এখন তারা খুব সহজেই ভারতের ইতিহাসকেও বদল করার ক্ষমতা রাখেন। পাশাপাশি যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের চিন্তাভাবনায় শিক্ষিত হতে পারে, তাদের মতো করে ইতিহাস, ভূগোল এবং বিজ্ঞান শেখে, সেই দিকেও নজর দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ছিলেন কংগ্রেসের স্তম্ভ, তাও কেন আরএসএসের সভায় গিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়?
ইতিমধ্যেই আরএসএসের উপর থেকে নিষেধের বেড়াজাল তুলে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। যার ফলে সরকারি আমলা থেকে শুরু করে বিচারকেরা পর্যন্ত আরএসএসের কর্মসূচীতে অংশ নেওয়ার বৈধতা পেতে চলেছে। আর এর ফলে সমাজে যেআরএসএসের মান্যতা বৃদ্ধি পাবে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এমনিতেই বহু বিচারপতি কর্মরত অবস্থায় বলছেন, তাঁরা অবসরের পরে আরএসএসের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চান। দেশের উপরাষ্ট্রপতি সংসদে আক্ষেপ করছেন, কেন তিনি আগে আরএসএস করেননি! এরপর দেশের আমলারা যদি আরএসএসের কর্মসূচীতে সরাসরি অংশ নেয় তখন কিন্তু মানুষ ভুলে যাবে দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল আরএসএস সম্পর্কে কী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতেন? আসলে যখন দেশের একজন সাধারণ মানুষ দেখে, দেশের এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা গান্ধি পরিবার ঘনিষ্ঠ প্রণব মুখোপাধ্যায় আরএসএসের সদর দপ্তরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বসে আছেন, তখন সঙ্ঘ সমাজে খানিকটা হলেও মান্যতা পেয়ে যায়। রাহুল গান্ধী ইদানীং আরএসএসকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে কাজটা করার চেষ্টা করছেন, তাকে ব্যর্থ করা যায় একমাত্র যদি এই ১৯৬৬ সালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশিকা তুলে, সরকারি আমলা এবং ওপরমহলের কর্মীদের আরএসএসের শতবর্ষের কর্মসূচীতে সামিল করানো যায়। সেই উদ্দেশ্যেই তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়ে ঐ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করিয়েছে। এখন বিরোধী শিবিরের মধ্যে যারা সত্যিই আরএসএসের হিংসা এবং ঘৃণা ছড়ানোর কর্মকাণ্ডের বিরোধী, তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। তাদের কাজ এখন এই বিষয়টিকে নিয়ে বেশী বেশী করে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া। কেন বাবরি ধ্বংসের পরে কিংবা ১৯৪৮ সালে আরএসএসের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, তা বোঝানো। কিন্তু সবাই কি আদৌ আরএসএসের সামাজিক সংগঠন চালানোর নামে এই গোপন রাজনৈতিক কর্মসূচী অনুধাবন করতে পারছে! সন্দেহ হয়।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)