চোখ বেঁধে ফেলে দিয়ে গেল কারা? কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়কের খোঁজ মিলল অবশেষে
Bangladesh Missing Students: নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পরে সন্ধান মিলেছে তাঁদের। চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে দু'জনকে।
বাংলাদেশ গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তাল। কোটা সংস্কার চেয়ে পথে নেমেছিলেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে যে অভূতপূর্ব নিপীড়ন চালায় শেখ হাসিনার সরকার তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শেষ পাওয়া হিসেব অনুযায়ী এই আন্দোলনে ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু ছাত্রছাত্রীরা নন, প্রাণ হারিয়েছেন আমজনতা, নাবালকরাও, বৃদ্ধরাও। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। নিখোঁজ ছিলেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পরে সন্ধান মিলেছে তাঁদের। চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে দু'জনকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম তিন আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া গেছে। বুধবার আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে। আর রিফাত আত্মগোপন করে রয়েছে বলে খবর।
আসিফ, বাকের ও রিফাত, তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। আসিফ ও বাকের দু'জনেই ফেসবুক পোস্টে তাঁদের ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন। আসিফ মাহমুদ জানান, রাজধানীর হাতিরঝিলের পাড়ে তাঁকে ফেলে যাওয়া হয় চোখ বেঁধে। আবু বাকেরকে ধানমণ্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। তাঁদের কে বা কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল তা স্পষ্ট করে জানাননি কেউই।
আরও পড়ুন- ভাঙছে হাসিনা-মমতার সম্পর্ক! মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দিল্লিকে কেন নালিশ বাংলাদেশের?
আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, "গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আমাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিতে চাপ দেওয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। এই চার-পাঁচ দিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে, ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। আজ বুধবার বেলা ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।" আসিফ আরও লিখেছেন, "এখন আমি পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসারত আছি। এই কয় দিনে যা ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করছি। কিছুটা সুস্থ হলেই সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত বলব।"
বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে বাকের লিখেছেন, "আমাকে ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আন্দোলন বন্ধে স্টেটমেন্ট দিতে বলায় আমি অস্বীকৃতি জানালে একটা অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। যে এলাকা থেকে তুলে নেয়, তার পাশের এলাকায় আমাকে চোখ বেঁধে ফেলে যায়। আমি এখন আমার পরিবারের সাথে নিরাপদে আছি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের সামনে সবিস্তারে সব বলব।"
রিফাত রশীদের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়েছে। রিফাত ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "আমি বেঁচে আছি, মরি নাই। আমি গুম হতে হতে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত মেনেই আমি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলাম। তারপর এই সাপ-লুডুর জীবন। আজ এর বাড়ি তো কাল ওর বাড়ি। এর মধ্যে যতবার ফোন কানেক্ট করার চেষ্টা করেছি, ততবারই ফোন ট্র্যাকিংয়ের শিকার হয়েছি। জানি না, কতক্ষণ নিরাপদে থাকব।"
আরও পড়ুন- হাসিনা সরকারকে না হটানো অবধি নড়বে না পড়ুয়ারা: শহিদুল আলম
আসিফ ও বাকেরের খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি প্রথম নজরে আনেন কোটা আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সম্মেলনে হাজির ছিলেন আসিফ মাহমুদের বাবা মহম্মদ বিল্লাল হোসেন। আসিফ নিখোঁজ হতেই মর্গে মর্গে ঘুরেছেন তিনি। ছেলে আছে, নাকি ছেলে মৃত এই অনিশ্চয়তায় প্রতিক্ষণ শেষ হয়ে গিয়েছেন ভেতরে ভেতরে। কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে ঢাকায় এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছেলের সন্ধান করেছেন। পাননি। অবশেষে বাড়ি ফিরেছে ছেলে।
গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও নন্দীপাড়া থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, প্রায় ২৪ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চালানো হয় তাঁর উপর। তারপর পূর্বাচল এলাকায় তাঁকে একইভাবে ফেলে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।