ডেমোক্র্যাটদের বিপুল সমর্থন, তবু কেন কমলার পাশে নেই ওবামা?

US Presidential Elections 2024: সম্প্রতি বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তরফে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে কমলা হ্যারিসের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে নাকি বেশ হতাশ ওবামা।

সামনেই প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন আমেরিকায়। আর বেশি সময় নেই। নভেম্বরেই ভোট। স্বাভাবিক ভাবেই সাজো সাজো রব আমেরিকা জুড়ে। এর মধ্যে ঘটনার ঘনঘটার শেষ নেই সেখানে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির পদপ্রার্থী ট্রাম্পের কান ঘেঁষে গিয়েছে বন্দুকবাজের গুলি। সেই কাণ্ড ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। শোনা যাচ্ছে, বয়সজনীত কারণেই প্রেসিডেন্ট লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির তরফে সুপারিশ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। নিজের সমর্থনও জানিয়েছেন। এদিকে জো বাইডেন সমর্থিত প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয় নিয়ে সংশয়মুক্ত নন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এমনকী তাঁর সমর্থনও নেই কমলার সঙ্গে।

প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ঠিক মতো ছন্দে পাওয়া যায়নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। এমনকী ট্রাম্পের কথার উত্তরে ঠিক মতো যুক্তি সাজাতে পর্যন্ত পারেননি বাইডেন। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়ে তাঁর। বাইডেনের শরীর নিয়ে উদ্বেগ ছিল ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যেও। অবশেষে সেই জল্পনা সত্যি করে প্রেসিডেন্ট ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়ে কমলার উদ্দেশে বিপুল প্রশংসাও করেন জো বাইডেন। আগামীর নেত্রী হিসেবে কমলাকে বিশেষ মর্যাদাও দেন।

আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্ট ভোটে লড়ছেন না বাইডেন! কেন এমন সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের?

ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাটদের অন্দরের অনেক নেতার থেকেই সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে প্রার্থী হতে চলেছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রীই, তা একরকম ভাবে ঠিক। তবে এর মধ্যেই যেন বেসুরো শোনাচ্ছে বারাক ওবামাকে। ট্রাম্পকে ঠেকাতে কমলাকে যোগ্য বলেই মনে করছেন না ওবামা। কিন্তু কেন? কেন কমলার প্রতি এত অনাস্থা ওবামার। তার একটা মোটা দাগের কারণ অবশ্য ওবামাপত্নী মিশেল। জো বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর শোনা গিয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের তরফে প্রার্থী হতে পারেন দেশের প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি তথা বারাক ওবামা-পত্নী মিশেল ওবামা। কিন্তু সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে জো বাইডেন মনোনয়ন করে যান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকেই।

সম্প্রতি বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তরফে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে কমলা হ্যারিসের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে নাকি বেশ হতাশ ওবামা। কোনও ভাবে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবেন কমলা, এমনটা তিনি মনে করেন না। সূত্রের খবর, ওবামা মনে করেন, দেশের সীমান্ত পর্যন্ত কখনও ঘুরে দেখেননি কমলা হ্যারিস, দেশের সমস্যাগুলিকে বোঝার চেষ্টা করেননি। এমনকী অভিবাসীদের ব্যাপারে কোনও ধারণাও নেই তাঁর। অভিবাসীদের স্বাস্থ্যবিমা থাকার প্রয়োজনীয়তাটুকু নিয়ে সম্যক ধারণা নেই কমলার। আর এসব কারণেই তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অযোগ্য মনে করছেন বারাক ওবামা।

তবে জো বাইডেন লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোয় যে ওবামা খুশি নন, এমনটা কিন্তু আদতেই নয়। বরং বিভিন্ন সূত্র মনে করছে, বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে কলকাঠি নেড়েছেন বারাক ওবামা নিজেই। শোনা যায়, বিশিষ্ট বন্ধু ও অভিনেতা জর্জ ক্লুনিকে দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখাও লিখিয়েছিলেন তিনি। কার্যত বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ভোটের লড়াই থেকে সরিয়ে দেওয়াই ছিল তার পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা সফল হলেও কমলা হ্যারিসকে কোনও ভাবেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে দেখতে চাননি তিনি।

কোনও কোনও সূত্র মনে করছে, আগামী মাসেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশন। সেখানেই অ্যারিজোনার সেনেটর মার্ক কেলির নাম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন বারাক ওবামা। স্বাভাবিক ভাবেই সংশয় জাগে, কেনই বা নিজের স্ত্রী মিশেলকে সমর্থন না করে অ্যারিজোনার সেনেটরকে সমর্থন জানাতে যাবেন তিনি? তবে সূত্রের খবর, সেই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই যেভাবে কমলা হ্যারিসকে ঘিরে উপচে পড়েছে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন, তাতে নাকি বেশ ক্ষুব্ধ ওবামা। এমনকী সেই রাগে কনভেনশনে যোগ না-ও দিতে পারেন তিনি।

তবে মার্কিন অন্য একটি সংবাদ সংস্থা অবশ্য জানাচ্ছে, শেষপর্যন্ত হয়তো কমলা হ্য়ারিসকেই সমর্থন জানাতে চলেছেন ওবামা। কমলার ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁর ক্ষোভ থাকলেও নিয়মিত কমলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন ওবামা। এমনকী ভোটে দাঁড়ানো, প্রচার থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নানা বিষয়ে পরামর্শও পাচ্ছেন কমলা হ্য়ারিস। তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও হয়তো পাশে দেখা যেতে পারে আমেরিকার এই জনপ্রিয় প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে।

আরও পড়ুন: বন্দুকের নলই আমেরিকায় ক্ষমতার উৎস

এমনিতেও যা অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে কমলার প্রেসিডেন্ট ভোটে লড়া একরকম স্থির বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে ডেলিগেটের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। ইতিমধ্যেই কমলা হ্যারিস ১ হাজার ৯৭৬ জনের সমর্থন পেয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য যা যথেষ্ট। স্বাভাবিক ভাবে জোরদার প্রচার এবং প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে কমলার। তবে রাজনীতির খেলায় যে কোনও সময় যা কিছু হতে পারে। তেমন বড় কিছু না ঘটলে কমলাই লড়বেন ডেমোক্র্যাটদের লড়াই। এখন প্রশ্ন রিপাবলিক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টক্কর দিতে পারবেন তো রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবীনা কমলা? নাকি শেষপর্যন্ত ফলে যেতে চলেছে ওবামার ভবিষ্যদ্বাণীই? সেটাই দেখার।

More Articles