সেনার কাছে শরীর বিকোলে তবেই মিলবে খাবার! যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান যেন আস্ত নরক

Sudan Civil War: সামান্যতম খাবারের জন্য সেনাবাহিনীর সামনে গিয়ে নগ্ন হতে পর্যন্ত বাধ্য হন দেশের একের পর এক মহিলা। হ্যাঁ, ঠিক এতটাই নির্মম যুদ্ধের সারসত্যখানা।

যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা। আর সেই খেলায় একদিকে থাকে জয়, আর অন্যদিকে ক্ষয়, ধ্বংসস্তূপ। মাঝখানে পড়ে পড়ে মার খায় 'উলুখাগড়া'-রা। এমনকী সামান্যতম খাবারের জন্য সেনাবাহিনীর সামনে গিয়ে নগ্ন হতে পর্যন্ত বাধ্য হন দেশের একের পর এক মহিলা। হ্যাঁ, ঠিক এতটাই নির্মম যুদ্ধের সারসত্যখানা। গত এক বছর ধরে গৃহযুদ্ধে ছারখার সুদান। আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ। গত নভেম্বরেই শোনা গিয়েছিল সেনা-আধাসেনার লড়াইয়ে কার্যত নরকে পরিণত হয়েছে দেশখানা। সেই গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। বাস্তুহারা কোটি কোটি মানুষ।

কখনও সে দেশের সেনাবাহিনীকে মাত দিচ্ছে আধাসামরিক বাহিনী ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স, তো কখনও পাল্টা দান ফিরিয়ে দিয়েছে সুদান সেনা। মধ্যিখানে পড়ে পড়ে মার খায় সাধারণ মানুষ। যারা জানে যুদ্ধ হলে মৃত্যু অবধারিত। অবধারিত দুর্ভীক্ষ। নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে হঠাৎ করে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়াই নিয়তি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের খবর নিয়ে আলোচনা হয়, গাজায় ইজরায়েলের অত্যাচার নিয়ে লেখালিখি হতে থাকে। কিন্তু অন্তরালেই থেকে যায় সুদানে চলে যাওয়া অসংখ্য প্রাণ। মানুষ প্রতিদিন মরে যান বেঘোরে। প্রতিদিন নিজের সত্তা বিক্রি করে দেন বাসিন্দারা সামান্য খাবার, জল বা নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য কোনও জিনিসটুকু জোগার করতে।

আরও পড়ুন: পৃথিবী আবার শান্ত হবে! গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত কিশোরীদের স্বপ্ন দেখায় বক্সিং

সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা 'দ্য গার্ডিয়ান' তুলে এনেছে সুদান যুদ্ধের এমনই ভয়াবহ ছবি। যেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম খাবারটুকুর জন্য সেনাবাহিনীর জওয়ানদের কাছে গিয়ে শরীর বিলোতে বাধ্য হন অজস্র মহিলা। প্রতিদিন সেনাবাহিনীর হাতে ভয়াবহ ভাবে ধর্ষিত হন তাঁরা। তবেই মেলে খাবার কিংবা জরুরি কোনও পণ্য। যা বেচে কোনও মতে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেন তাঁরা।

 

সেনাবাহিনীর এমন ভয়াবহ অত্যাচারে সুদানের ওমদুরমান শহর থেকে পালিয়ে গিয়েছেন অন্তত ২০ জন মহিলা। তাঁদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে সুদানের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা। পালিয়ে আসা এক মহিলার কথায়, "দেশের যে সব কারখানায় খাবার মজুত করা থাকে, সেখানেই মহিলাদের নিয়মিত ভাবে ধর্ষণ করে সেনা জওয়ানেরা। বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। অসুস্থ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার প্রয়োজনেও মেয়েকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারেননি তিনি। বদলে নিজে গিয়েছেন সেনার কাছে। খাবার জোগারের আর কোনও পথ খোলা ছিল না যে তাঁর কাছে। ইচ্ছা করে খাবারের কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ওরা। বাধ্য করা হয় যৌন সংসর্গে। ২১ বছরের সুদানের বাসিন্দা এক তরুণী ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গেলে মেলে নারকীয় শাস্তি। প্রথমে কিছু খাবারের আশায় একবার ধর্ষিত হয়েছিলেন তিনি। তবে তাতেও মেটেনি সেনাবাহিনীর আশ। ফের আবার তারা যৌন হেনস্থা করতে চাইলে প্রতিবাদ করেন তিনি। আর তার ফলাফল হয় মারাত্মক। তাঁকে মাটিতে চেপে ধরে তরুণীর দুই পা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাস। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল আফ্রিকার সুদান। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হল আধাসেনা (র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স)-র। তার পর থেকে সে দেশে বারবার জওয়ানদের লালসার শিকার হয়েছেন মহিলারা। খাবার চেয়ে, জল চেয়ে, প্রাণ বাঁচাতে চেয়ে বারবার শরীর বিলিয়ে দিতে হয়েছে সেনাবাহিনী নামক ভক্ষকদের কাছে। গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ঠিক কত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সুদানে, তার ইয়ত্তা নেই। সরকারি সূত্র বলছে, সেই সংখ্যাটা অন্তত দেড় লক্ষ তো হবেই। এখনও পর্যন্ত অন্তত ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। যারা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জীবন যেন আস্ত নরক। পালিয়ে আসা মহিলাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, নিজের বাড়িতে রান্নার জিনিসটুকু আনতে গিয়ে যে অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেই হাল যেন অতি বড় শত্রুরও না হয়।

আরও পড়ুন:গাজার হাসপাতালে রকেট হামলার দায় কার? কেন যুদ্ধের বলি নিরীহ শিশুরা?

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সুদানের ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে। কবে তার থেকে রেহাই মিলবে বাসিন্দাদের, তার উত্তর জানেন না কেউ! আর কতদিন ঠিক এই ভাবে দেশের সেনার হাতেই নিগ্রহের শিকার হবেন মহিলারা, তা-ও আবার সামান্য খাবারের জন্য, সেই উত্তরও অধরা সুদানবাসীর। এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য এখন কোনও অভাবনীয়ের অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছেন সেখানকার 'উলুখাগড়া' মানুষজন।

More Articles